ছাদে পদ্মের পরিচর্যা করছেন অজয়।
অর্ণব দাস: ছেলেবেলা থেকেই ভালোবাসা ছিল গাছের প্রতি। সেই ভালোবাসা থেকেই ছাদে প্রায় ৪০ প্রজাতির পদ্ম চাষ করে স্বনির্ভর হয়েছেন হাবড়ার আইটিআই পড়ুয়া। পদ্ম ফলিয়ে দিব্যি নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে বাড়তি উপার্জনের মুখ দেখছেন তিনি। এরাজ্যে তো বটেই, ভিনরাজ্যেও আজ পদ্মের কন্দ বিক্রি করছেন অজয় গোলদার।
হাবড়া পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কৈপুকুর এলাকায় অজয় গোলদার। ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়েছেন অজয়। মা এবং এক দাদা আছেন। কিন্তু পারিবারিক সমস্যার কারণে অজয় কৈপুকুরেই ভাড়ায় থাকেন। হাবড়ার কুমড়া আইটিআই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তিনি। বছর তিনেক আগে থেকেই পড়াশোনার খরচ চালাতে এক পরিচিতর পরামর্শে ঠাকুরমার বাড়ির ছাদে তাঁর পদ্মচাষ শুরু করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই গাছের প্রতি ভালোবাসা ছিল অজয়ের। সেই ভালোবাসার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন ৬০০ স্কোয়ার ফুটের ছাদে। ছাদে উঠলেই ভালোবাসার সেই চিত্র স্পষ্ট অনুভব করা যাবে।
দেখা যাবে ছাদজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন আকারের গামলা। তাতেই ফুটে উঠেছে লাল, হলুদ, গোলাপি, সবুজ, সাদা রংয়ের পদ্ম। ভারতীয় প্রজাতির মধ্যে রয়েছে সিতারা, ঐশ্বর্য, ইন্দুলেখা, শ্বেতা, মোহং থেকে বাটার মিল্ক। পাশাপাশি ভিয়েতনামের পদ্মের প্রজাতিও রয়েছে অজয়ের ছাদ বাগানে। যেমন–রেড আমেথি থেকে রেড ইডেন, পিঙ্ক ইডেন-সহ পিউ-১৭০। এছাড়াও লিয়াংলি, ইয়োস, এপেক্সান সিক্সটিন, মৃণালিনীর মতো পদ্মের প্রজাতিও রয়েছে অজয়ের সংগ্রহে। সম্পূর্ণ পরিচর্যা অজয় নিজেই করেন। সঙ্গে প্রায় নিয়ম করেই পুজোর জন্য নিজের হাতে ফোটানো পদ্মফুল সে দিয়ে আসেন হাবড়ার হনুমানজির মন্দিরে। তবে ফুল বিক্রি করে নয়, পদ্মের কন্দ বিক্রি করে উপার্জন হয় তাঁর। বাংলার পাশাপাশি অনলাইনে অর্ডার অনুযায়ী তামিলনাড়ু, চেন্নাই, কেরল, লখনউ, মণিপুর, অসম, ত্রিপুরা, ওড়িশায় পদ্মগাছ বিক্রি করেন তিনি। তাতে উপার্জন হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি।
অজয় বলেন, ‘‘কলেজের পড়াশোনার খরচ আমি পদ্ম চাষ করেই সামাল দিয়েছি। এখন চাকরির ক্ষেত্র এমন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, তাতে এই পদ্ম চাষকে পেশা করে নিতেও ইচ্ছে রয়েছে। তবে, চাকরি পেলেও পদ্মচাষ করেই যাব। এটা আমার কাছে ভালোবাসার জায়গা। দুটি প্রজাতির কন্দ মিলিয়ে নতুন নতুন পদ্মের ভ্যারাইটি তৈরি করার চেষ্টা করি। নতুন প্রজাতি তৈরি হয়ে যাওয়ায় পর সেই আনন্দ বলে বোঝানো সম্ভব নয়।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.