সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জ্বরে ভোগা ন’বছরের মেয়েটাকে বাঁচাতে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরের এক নম্বর হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন বাবা। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছেও শেষ রক্ষা হল না। মেয়েকে বাঁচানো তো দূরের কথা সামান্য ডাক্তার দেখানোর সুযোগটুকুও মিলল না। হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণের লাইনেই বাবার কোলে মৃত্যু হল ছোট্ট মেয়েটির। এখানেই শেষ নয়, মেয়ের মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা অ্যাম্বুল্যান্সও জোটেনি। বাধ্য হয়েই মেয়ের মৃতদেহ কাঁধে করে বাড়ি ফিরতে হল বাবাকে। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের রাজধানী পাটনায়।
[দিওয়ালিতে কাশ্মীরে বড়সড় হামলার ছক পাক জঙ্গি ও গুপ্তচর সংস্থার]
জানা গিয়েছে, গত ছ’দিন ধরে ধুম জ্বরে ভুগছিল ন’বছরের নাবালিকা। কিন্তু প্রত্যন্ত কাজরা গ্রামে ডাক্তার দেখানোর সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়েই জ্বরে বেহুঁশ মেয়েকে নিয়ে ১৪০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পাটনার এইমস-এ এসেছিলেন দিনমজুর রামবালাক। কিন্তু চিকিৎসকের কাছ পর্যন্ত পৌঁছনো আর হল না। পথ আটকাল সরকারি নিয়ম। নিয়ম মেনে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণ না করলে ডাক্তার দেখানো যাবে না। অন্যদিকে ফর্মের লাইন দীর্ঘ। লাইনে দাঁড়িয়েও মেয়েকে আগে ডাক্তার দেখানোর জন্য অনেক অনুনয়-বিনয় করেও কোনও লাভ হয়নি। হাসপাতাল কর্মীরা তাঁর অনুরোধে কর্ণপাতও করেননি। অবশেষে লাইন ঠেলে কাউন্টারের কাছাকাছি পৌঁছে যখন মেয়েকে ডাক্তার দেখানোর আশায় বুক বাঁধছেন ঠিক তখনই বাবার কোলে মৃত্যু হয় শিশুটির।
[পণের টাকা ফিরিয়ে দিয়ে নজির গড়লেন এই অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক]
পেশায় দিনমজুর রামবালাক দূর থেকে শুনেছিলেন এইমসের উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার কথা। তাই তাঁর আশা ছিল, একবার মেয়েকে এইমসে দেখাতে পারলেই মেয়েটা বেঁচে যাবে। ধন্বন্তরী চিকিৎসকদের হাতযশেই সুস্থ হয়ে উঠবে মেয়ে। কিন্তু মেয়ের সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা, এইমসে ডাক্তার দেখানোই সম্ভব হল না। মেয়ের মৃত্যুতেও দুর্ভাগ্য তাঁর পিছু ছাড়েনি। এরপর মেয়ের মৃতদেহ কোলে করে চার কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে অটো স্ট্যান্ডে আসেন রামবালাক ও তাঁর স্ত্রী। কারণ অ্যাম্বুল্যান্স এমনকী একটা স্ট্রেচারও পাননি তাঁরা। পরে অটো ধরে তাঁরা বাড়ি ফেরেন। ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই ঘটনায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে দায়ী করেছেন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব। তাঁর অভিযোগ, নীতীশ জমানায় বিহারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। যদিও এই ঘটনার কথা জানেন না বলে দাবি করেছেন এইমস কর্তৃপক্ষ।