সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টেক অফের পর মাত্র ৩০ সেকেন্ড! তারপরই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। মোট ২৪৪ জনকে নিয়ে আহমেদাবাদ থেকে ইংল্যান্ডের গ্যাটউইকগামী বিমান ধাক্কা মারল মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলে। মৃত্যু অন্তত ২৬৫ জনের! মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন ঘটল এমনটা? এর দায় কার?
কিন্তু কেন দুর্ঘটনা (Air India Plane Crash)? ওড়ার ঠিক ৩০ সেকেন্ডের পর কীভাবে ভেঙে পড়ল বিমান? এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার এয়ারবাস উড়ানের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ। ২০১১ সাল থেকে যাত্রা শুরুর পর এ যাবৎ এই বিমানটি কোথাও দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি। তাহলে এই দুর্ঘটনা ঘটল কীভাবে? নানা জনের নানা মত। কেউ কেউ বলছেন, বিমানের ইঞ্জিনে যান্ত্রিক গোলযোগ ছিল। কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের ধারণা, ওড়ার পর যে কোনও কারণেই হোক যে উচ্চতায় বিমানটি ওড়ার কথা ছিল সেই উচ্চতায় সেটি আরোহণ করতে পারেনি। কারও কারও ধারণা, বিমানটি পাখির সঙ্গে ধাক্কা খেতে পারে। আবার কোনও কোনও মহল থেকে এই দুর্ঘটনার নেপথ্যে অন্তর্ঘাতের তত্ত্বও ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কারণ যা-ই হোক, এই দুর্ঘটনা একাধিক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসাবে যা যা উঠে আসছে সেটার নেপথ্যে অনেকাংশেই গাফিলতির অভিযোগ স্পষ্ট। বলা হচ্ছে, ইঞ্জিন ফেলিওর বা গ্রাস্ট রিডাকশনের জন্য দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সমস্যা হল, এই ড্রিমলাইনার বিমানের প্রযুক্তিগত নিয়ে সেই ২০১৭ সাল থেকে লাগাতার সতর্ক করে গিয়েছেন ওই সংস্থারই তৎকালীন কর্মী জন বার্নেট। পরে বার্নেটের রহস্যমৃত্যু হয়। প্রশ্ন হল, বার্নেটের সেই সতর্কবার্তা সত্ত্বেও কেউ কর্ণপাত করেনি। তাছাড়া বোয়িং সংস্থার বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়াটা কার্যত নিয়মিত ঘটনা। তা সত্ত্বেও এয়ার ইন্ডিয়া ওই সংস্থার বিমান ব্যবহার করে চলেছে কেন? এতদিনেও কেন বিকল্প ভাবা হচ্ছে না?
অভিযোগ উঠছে, ওই বিমানটিতে রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত গাফিলতি রয়ে গিয়েছে। যদি বিমানের পূর্ববর্তী সার্ভিসিংয়ে কোনও যান্ত্রিক সমস্যা আগ্রাহ্য করা হয় (যেমন গিয়ার অ্যাকচু্যুরেটর লিক, হাইড্রোলিক ফেলিওর), তাহলে সেটা বিমানটি ওড়ার সময় সমস্যা তৈরি করতে পারে। সেক্ষেত্রে এই ঘটনার এয়ার ইন্ডিয়া এড়াতে পারে কী? একটি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, এই বিমানটিই আগেরদিন প্যারিস থেকে দিল্লি এসেছে। বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লি থেকে সেটি আহমেদাবাদ আসে। দুপুরে আমেদাবাদ থেকে লন্ডনে যাত্রার কথা ছিল। একটি বিমানকে বিশ্রাম না দিয়ে পরপর ব্যবহার কিংবা তাতে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের সময় পাওয়া যাচ্ছে কি না, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এত কম সময়ের ব্যবধানে পর পর উড়ান থাকাটা কিন্তু শুধু এই দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটির ক্ষেত্রেই হয় তা নয়। প্রায় সব সংস্থার সব বিমানেই এই একই সমস্যা হয়।
কেউ কেউ বলছেন, এই দুর্ঘটনার নেপথ্যে ‘পাইলট এরর’ থাকতে পারে। আবার পাইলটদের একাংশ বলছেন, বিমানসংস্থাগুলি পাইলটদের উপর যে পরিমাণ কাজের চাপ দেয়, সেই চাপ সামলাতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অনেক ক্ষেত্রেই পাইলট বা ক্রু’দের যে ডিউটি রস্টার দেওয়া হয়, সেটা অমানবিক। টানা কাজ, দুই শিফটের মধ্যে বিশ্রামের সময়ের অভাব, এসব নিয়ে অতীতে বিমান সংস্থার কর্মীদের বিক্ষোভও করতে দেখা গিয়েছে।
শেষে নাশকতার তত্ত্ব নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত। কিছুদিন আগে পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল তুরস্কের একটি সংস্থা। অপারেশন সিঁদুরের পর সেলেবি অ্যাভিয়েশনের লাইসেন্স বাতিল করে ভারত। তার সঙ্গে কী এর কোনও যোগ থাকতে পারে? কেউ কেউ সেই সম্ভাবনার দিকেও ইঙ্গিত করছেন। সেটা ছাড়া এর পিছনে অন্য কোনওভাবে নাশকতা যদি হয়ে থাকে, তাহলে সেটা আরও উদ্বেগের। সেক্ষেত্রে গোটা দেশের আকাশপথের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.