সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কর্ণাটক ভোট যদি আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস ও বিজেপির অ্যাসিড টেস্ট হয়, তবে বিজেপি-বিরোধী জোটের ক্ষেত্রেও তা কম কিছু নয়। সলতে পাকানোর কাজটা এখান থেকেই শুরুর সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতিটা এমনই। রাজ্যে বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেস-জেডিএস জোট বিরোধীদের পালে হাওয়া দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
[লালু ছেলের বিয়েতে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলতা, খাবার-সহ বাসন নিয়ে চম্পট বহিরাগতদের]
কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম-সমীক্ষক সংস্থার বুথ ফেরত সমীক্ষায় ‘ত্রিশঙ্কু বিধানসভা’র ইঙ্গিত ধরেই ঘুঁটি সাজাতে তৎপর জেডিএস। বাস্তবে তেমন পরিস্থিতি হলে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল কংগ্রেস ও বিজেপিকে সরকার গঠনের জন্য তৃতীয় বড় দল জেডিএসেরই স্মরণ নিতে হবে। দুই দলের চিন্তাভাবনার মধ্যে বিষয়টি থাকার কথা। তবে এবার বিজেপির ভাগ্য সুপ্রসন্ন না-ও হতে পারে। শেষ হাসি হয়তো হাসবে কংগ্রেসই। সেক্ষেত্রে ২০১৪ সাল থেকে সব বড় রাজ্যে ছোটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জয়ের রথ আটকে দিতে পারেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। কর্ণাটকের ভোটপ্রচারে কংগ্রেস যে জেডিএসকে বিজেপির ‘বি-টিম’ বলে আক্রমণ করেছে, তারাই ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হলে কংগ্রেসকে সমর্থনের বার্তা দিয়েছে রবিবার। কিন্তু কংগ্রেস ‘দু’দিনের বিনোদন’ বুথ ফেরত সমীক্ষায় গুরুত্ব দিতেই নারাজ। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া বলেছেন, “কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরবে। বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন হবেন না।” বিজেপির কাছেও গুরুত্ব নেই বুথ ফেরত সমীক্ষার। দলের নেতা মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বি এস ইয়েদুরাপ্পা বলেছেন, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। এক ধাপ এগিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, ১৫ মে কর্নাটকে সরকার গঠন করছেন তাঁরাই। কিন্তু বিজেপিকে ঠেকাতে সত্যিই যদি দক্ষিণের এই রাজে্য বিজেপি-বিরোধী দুই দল জোট করে তবে তা আগামী লোকসভা নির্বাচনেও ছাপ ফেলবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
শনিবার কর্ণাটকের ২২২টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। ওইদিনই সন্ধ্যার পর বিভিন্ন সংস্থা বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশ করে। সেখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে এবার কংগ্রেসের আসন কমবে, বাড়বে বিজেপির আসন। আসন বাড়াতে পারে জেডিএস। একক বা যৌথভাবে মোট সাতটি বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলফলে পার্থক্য রয়েছে। তবে ‘পোল অফ পোলস’ বা গড় হিসাব বলছে, বিজেপি ১০৩ আসন, কংগ্রেস ৮৬ আসন, জেডিএস ৩১ আসন ও অন্যান্যরা পেতে পারে দুটি আসন। বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রশ্নাতীত নয়। তা সব ক্ষেত্রে মিলেছে, এমনটাও দাবি করা হয় না। কিন্ত জনমত যাচাইয়ের বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি থাকায় একে উপেক্ষা করাও সম্ভব নয়। সে কারণেই এই সমীক্ষা যদি ঠিক হয়, তবে ৩১ আসন পেয়ে ‘কিং মেকার’ হয়ে উঠতে পারে জেডি(এস)। কর্নাটকের রাজনৈতিক দলগুলি এই সমীক্ষাকে প্রকাশে্য গুরুত্ব না দিলেও, পরিস্থিতি আন্দাজ করে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করছে।
তবে কর্নাটকে বিজেপি-বিরোধী জোটের বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। রবিবার একটি ইংরেজি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেডিএসের মুখপাত্র দানিশ আলি বলেছেন, “যদি কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, ওদের আসন সংখ্যা যদি একশোর নিচে নেমে যায়, তখনই সমর্থনের প্রশ্ন উঠবে। তবে এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে হবে কংগ্রেসকেই।” কংগ্রেস ভোটপ্রচারে জেডিএসকে বিজেপির ‘বি-টিম’ হিসাবে তুলে ধরলেও, দলের নেতা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া কিন্তু দুই দলের সঙ্গে সমদূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। বলেছিলেন, দুই দল সম্পর্কেই তাঁরা হতাশ। তাই কাউকে সমর্থন করার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু ভোট মিটতে তঁারা যে কংগ্রেস সম্পর্কে অনেকটাই নরম মনোভাব নিচ্ছেন, তা দানিশের কথায় বোঝা গিয়েছে।
অবশ্য কর্ণাটকে কংগ্রেসের সঙ্গে জেডিএসের সম্পর্ক কিছু মধুর নয়। সিদ্দারামাইয়া যতই জনমত সমীক্ষার ফল খারিজ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন বলে দাবি করুন না কেন, বিষয়টি নিয়ে নাকি খুব একটা নিশ্চিত নয় কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। এই সুযোগে চাপ বাড়াচ্ছে জেডিএস। তাদের অভিযোগ, কংগ্রেসেকে জেডিএস আগেও নানা ভাবে সাহায্য করেছে। কিন্তু বিনিময়ে কিছু পায়নি। তাঁর দাবি, এবার যদি উদ্যোগ নিতেই হয়, তবে এগতে হবে কংগ্রেসকেই।
[কলকাতা এসটিএফ-এর বড় সাফল্য, মুম্বই থেকে গ্রেপ্তার কুখ্যাত লস্কর জঙ্গি]
মঙ্গলবার কর্নাটকে ভোট গণনা ও ফল প্রকাশ। তার আগে কর্নাটকের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া টুইট করেছেন, “আগামী দু’দিনের জন্য বুথ ফেরত সমীক্ষা বিনোদন হতে চলেছে। বুথ ফেরত সমীক্ষার উপর নির্ভর করা হল সেই ব্যক্তির মতো যিনি একজন পরিসংখ্যানবিদের কথা শুনে হেঁটে নদী পেরোতে পারেন না। কারণ, ওই পরিসংখ্যানবিদ বলেছেন, নদীর গড় গভীরতা ৪ ফুট। মনে রাখতে হবে, ৬+৪+২-এর গড় হল ৪। ৬ ফুটে গেলে আপনি ডুবে যাবেন। তাই দলীয় কর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বলছি, বুথফেরত সমীক্ষা নিয়ে আশঙ্কিত হবেন না। আমরাই ফিরছি।” তিনি অন্যত্র আরও বলেছেন, হাইকমান্ড যদি কোনও দলিতকে মুখ্যমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। তিনি সরে দাঁড়াবেন। ইয়েদুরাপ্পার কথায়, “কংগ্রেস এই নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরবে। তিন দশক ধরে এখানকার মানুষ কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। এবারও দেবে। আর জেডিএসের সমর্থনও প্রয়োজন হবে না সরকার গড়ার ক্ষেত্রে। কারণ সেই পরিস্থিতি তৈরিই হবে না।” সিদ্দারামাইয়ার এই আত্মবিশ্বাস শুধুই ভোকাল টনিক না রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রতিফলন তা বোঝা যাবে মঙ্গলবার। ২০০৫ সালে সিদ্দারামাইয়া জেডিএস থেকে বহিষ্কৃত হয়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। এদিকে, ইয়েদুরাপ্পা দাবি করেছেন, বিজেপি ১২৫ থেকে ১৩০-এর বেশি আসন পাবে। কংগ্রেস ৭০-এর বেশি আসন পাবে না এবং জেডিএস ২৪-২৫ পেরবে না। সিদ্দারামাইয়া ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জনতার ক্রোধ এবং বিজেপি-র পক্ষে নীরব ও জোরদার হাওয়া রয়েছে। ১৭ তারিখ বিজেপি-ই সরকার গড়বে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.