সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “আসারাম বাপু আমাদের কাছে ঈশ্বরতুল্য। তার ছত্রছায়াতেই আমাদের জীবনযাপন। কিন্তু হঠাৎই একদিন সেই ‘ঈশ্বর’ আমাদের জীবন ছিন্নভিন্ন করে দিল। যা আর কোনওভাবেই মেরামত করা গেল না। আমার একমাত্র মেয়েকে ধর্ষণ করল সে। আমার মেয়ে যখন আমায় গোটা ঘটনার কথা জানিয়েছিল, সেটা আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মুহূর্ত। আজও ভাবলে শরীর শিউরে ওঠে।” জল ভরা নয়নে কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন নির্যাতিতার মা।
[মমতার সায় ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে জলচুক্তি চায় না কেন্দ্র, বললেন সুষমা]
গত মাসেই নাবালিকা ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল আসারাম বাপু। স্বঘোষিত ধর্মগুরুর সঙ্গীদেরও একই পরিণতি হয়। ২০১৩ সালে উত্তরপ্রদেশের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে। সেই অপরাধে গত ২৫ এপ্রিল যোধপুরের বিশেষ আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে। আজীবন কারাদণ্ডের নির্দেশও দেওয়া হয়। নাবালিকার পরিবারে মানসিক শান্তি ফিরলেও জীবনের সেই সময়টা কীভাবে কেটেছিল, তাই ব্যাখ্যা করল কিশোরীর পরিবার।
[মহিলাদের সুরক্ষায় বিশেষ পদক্ষেপ, মুম্বইজুড়ে নজরদারি চালাবে ড্রোন]
১৬ বছরের কিশোরীর মায়ের চেয়েও বাবার প্রতি বেশি টান ছিল। বাবাও সবসময় মেয়ের নিরাপত্তা, আনন্দ নিশ্চিত করার প্রয়াসই করে যেতেন। কিন্তু কে জানত, সরষের মধ্যেই ভূত রয়েছে। যাঁকে ঈশ্বরের আসনে বসিয়েছেন, তিনিই জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্দিন দেখাবেন। ২০০১ সাল থেকে আসারাম বাপুর আশ্রমে যাতায়াত ছিল পরিবারের। তাঁর সম্বন্ধে কেউ কোনও কটূক্তি করলে বেশ রেগেই যেতেন নির্যাতিতার বাবা। কিন্তু মেয়ের এমন পরিণতির পর সমস্ত চিন্তাভাবনা গুলিয়ে গিয়েছিল তাঁর। তাই তাঁর সুবিচার পাইয়ে দিতে সবরকম চেষ্টা করেছিলেন। মেয়েকে রক্ষা করতে সমাজের হীনমন্য, যৌন পিপাষুদের সঙ্গে লড়তে হবে জানতেন।
কিন্তু ঈশ্বরের সঙ্গেও লড়াই করা সম্ভব? তাঁর বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা যায়? এই ভাবনাই কুড়ে কুড়ে খেয়েছিল নির্যাতিতার পরিবারকে। কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি তাঁরা। পুলিশকে গোটা ঘটনার কথা খুলে বলেন কিশোরীর বাবা। তবে এ কাজে বিশেষ কাউকে পাশে পাননি তিনি। প্রত্যেকে তাঁকে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার পরামর্শই দিয়েছিলেন। এমনকী অনেকে সতর্ক করেছিলেন, আসারাম বাপুর বিরুদ্ধে লড়াই করলে আখেরে ক্ষতিই হবে অভিযোগকারীর পরিবারের। কিন্তু এমন ঘৃণ্য কাজের কাউকে না কাউকে তো প্রতিবাদ জানাতে হয়। আর সে সৎ সাহসই দেখিয়েছিল কিশোরীর পরিবার। তবে নাবালিকার মা বলছেন, মেয়ে সাহস না জোগালে হয়তো এ লড়াইয়ে জেতা সম্ভব হত না। সুবিচার পাওয়ায় স্বস্তিতে তাঁরা। সাহসী মেয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে।