পালটা জবাব দিতে তৈরি ভারত, প্রস্তুত জওয়ানরাও।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গোটা শীত জুড়ে ডোকলামে চিনা সেনা মোতায়েন থাকবে। এমনটাই ইঙ্গিত দিল বেজিং। চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রকের মুখপাত্র কর্নেল য়ু কিয়ান দাবি করেছেন, ‘ডোকলাম চিনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ওই এলাকায় সেনা মোতায়েন থাকবেই।’ ফলে নতুন করে ডোকলাম নিয়ে উত্তেজনার আবহ তৈরির পথে দুই দেশের মধ্যে। এরই মধ্যে ভুটানও ফের ডোকলামকে তাদের ভৌগলিক সীমান্ত বলে দাবি করে পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলল।
গত ২৮ আগস্ট ভারত ও চিনের মধ্যে ৭৩ দিনের টানটান উত্তেজনার পরিস্থিতি খানিকটা স্তিমিত হয়ে আসে। ডোকলামের খুব কাছেই চিনের সরকারি বাহিনী পাকা সড়ক তৈরির কাজ চালাচ্ছিল। ওই রাস্তা ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে সংযোগকারী রাস্তা ‘চিকেন নেক’-এর খুব কাছে হওয়ায় আপত্তি তোলে নয়াদিল্লি। দাবি করে, চিন ওই রাস্তা বানালে ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। প্রথমে আলাপ-আলোচনা, পরে কথায় কাজ না হলে অস্ত্র উঁচিয়ে সীমান্ত আগলে দাঁড়ান ভারতের জওয়ানরা। কিছুতেই চিনা সেনাকে ভারতের চৌহদ্দিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না, এই শপথ নিয়ে ভারতীয় সেনা বন্দুকের নল মাটির দিকে নামিয়ে চিনা সেনার চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে থাকে দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে।
পরিস্থিতি যে মাঝেমধ্যে সংঘাতের তৈরি হয়নি, এমনটাও নয়। একাধিকবার চিনা সেনা ভারতের সীমানায় ঢুকে পড়তে চেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু ভারত ‘প্রথমে আক্রমণ নয়’ নীতি থেকে সরে না এসে শুধুমাত্র গায়ের জোরে ঠেলে লালফৌজকে ওই এলাকা থেকে হটিয়েছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বেজিংকে বোঝাতে সম্মত হন যে যুদ্ধ বাধলে আখেরে দুই দেশেরই ক্ষতি। শেষমেশ ডোকলাম থেকে সেনা সরিয়ে নেই ভারত। কিন্তু ভারতীয় গোয়েন্দারা আগেই সতর্ক করেছিলেন, এ সবই আন্তর্জাতিক চাপের মুখে চিনের ‘লোক দেখানো কীর্তি’ হতে পারে, হলও তাই।
ডোকলামের খুব কাছে ইয়াতুংয়ের কাছে চিনা সেনা মার্চ করছে। গত ১৭ নভেম্বর ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত সংক্রান্ত বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। যদিও সেই বৈঠকে কী সমাধানসূত্র বেরিয়েছে, তা জানা যায়নি। কিন্তু চিনা সেনা যেভাবে ওই বিতর্কিত এলাকায় দাদাগিরি শুরু করেছে, সেটাকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই বলে মন্তব্য এক সেনাকর্তার। ভারতীয় ফৌজও ওই এলাকার কাছেই তৈরি রয়েছেন বলে সেনা সূত্রে খবর। চিন কোনওভাবে শান্তি শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চাইলে যোগ্য জবাব দিতে তৈরি ভারতও, মন্তব্য ওই সেনাকর্তার। চিনা সেনা এই কীর্তি ঘটাতে পারে এমনটা আগে থেকেই আঁচ করেছিলেন সেনাকর্তারা। তাই ওই এলাকার কাছে পালটা পাকা সড়ক তৈরির কাজ জোরকদমে শুরু করেছে ভারতও। ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চিনা সীমান্তের কাছে সেনা মোতায়েন করতে কয়েক মুহূর্ত সময় লাগবে নয়াদিল্লির। ইতিমধ্যেই চিন সীমান্তের দিকে মুখ করে ভারতের বিধ্বংসী যুদ্ধবিমান সুখোইকেও তৈরি রাখা হয়েছে। সবমিলিয়ে আজকের ভারতকে যেন ষাটের দশকের ভারত ভেবে ভুল না করে চিন, হুঁশিয়ারি সেনাকর্তাদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.