সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনের তদন্তে নেমে বৃহস্পতিবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট মূল অভিযুক্ত ধনকুবের নীরব মোদির মোট ৯টি দামি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করল। যে গাড়িগুলি সিজ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে একটি রোলস রয়েস ঘোস্ট, একটি পর্শে প্যানামেরা, দুটি মার্সিডিজ বেঞ্জ জিএল ৩৫০ সিডিআই, তিনটি হন্ডা গাড়ি, একটি টয়োটা ফরচুনার ও একটি টয়োটা ইনোভা।
এর পাশাপাশি, শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড মিলিয়ে নীরব মোদির প্রায় ৭ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা ও মেহুল চোখসির সংস্থার ৮৬ কোটি ৭২ লক্ষ টাকাও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি ‘ফ্রিজ’ করেছে। এর আগে, বুধবার নীরবের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১৪৫ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা ‘অ্যাটাচ’ করেছে আয়কর বিভাগ। সবমিলিয়ে আজ পর্যন্ত নীরবের মোট ১৪১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অ্যাটাচ করেছেন আয়কর বিভাগ। এদিকে নীরব মোদির আইনজীবী দাবি করেছেন, পিএনবি ব্যাংকের সঙ্গে তাঁর মক্কেলের যাবতীয় ব্যবসায়িক লেনদেনকে অবৈধ লেনদেন বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। নীরব মোদি, তাঁর স্ত্রী-ভাই, মেহুল চোখসি-সহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পিএনবি ১১,৪০০ কোটি ও ২৮০ কোটি টাকার জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করেছে। সম্প্রতি ব্যাংক কর্তারা ১.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই কেলেঙ্কারির খোঁজ পান ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে বিষয়টি জানান। ১৩ ফেব্রুয়ারি দায়ের হয় দ্বিতীয় অভিযোগটি।
ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ দুর্নীতি মামলা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদি গা ঢাকা দিয়েছেন। তিনি বিদেশে পালিয়ে গিয়েছেন। কে তাঁকে পালানোর সুযোগ করে দিল, এই প্রশ্নে ক্রমাগত সুর চড়াচ্ছেন রাহুল গান্ধী। এই বিষয়ে কংগ্রেস সভাপতির অভিযোগ, “ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের সহায়তাতেই দেশ ছেড়ে পালাতে পেরেছেন নীরব।” ক্রমাগত দুর্নীতি ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন রাহুল গান্ধী। নীরব মোদি ও রাফালে চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে ফের মোদিকে বিঁধলেন কংগ্রেস সভাপতি। যদিও নীরবকাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটি তদন্ত করবে কিনা তা নিয়ে কার্যত দু-ভাগ বিরোধী শিবির। ভোটমুখী মেঘালয়ে প্রচারে গিয়ে গত মঙ্গলবার মোদিকে ‘দুর্নীতিপরায়ণ যন্ত্র’ বলে খোঁচা দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। ওইদিনই নয়, গুজরাটের ভোটের আগে থেকেই এই অস্ত্রেই বিজেপিকে চাপে ফেলার কৌশল নিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন টুইটারে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করতে থাকা রাহুলের নয়া সংযোজন বুধবারের টুইট। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক ও রাফালে চুক্তি নিয়ে নীরব থাকায় নরেন্দ্র মোদিকে ফের আক্রমণ করেন কংগ্রেস সভাপতি। লেখেন, “মোদিজি, গতমাসে আপনি মন কি বাত নাটকের সংলাপের ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ উপেক্ষা করেছিলেন। আপনার হৃদয় জানে, ভারতীয়রা কী শুনতে চায়। তাহলে কেন পরামর্শ চান? নীরব মোদির ২২ হাজার কোটি টাকা লুট করে পালিয়ে যাওয়া, ৫৮ হাজার কোটি টাকার রাফালে দুর্নীতির বিষয়ে আপনার কথা শুনতে চায় দেশবাসী। আপনার নৈতিক বক্তব্য শোনার অপেক্ষায় আছি।’’
বুধবার দিল্লিতে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন জানিয়েছেন, “নীরব মোদির সঙ্গে যুক্ত পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক ইস্যুতে জেপিসি গঠন করা হোক তা আমরা চাই না। এ বিষয়ে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। তৃণমূল চায় এবিষয়ে বিশদ তদন্ত হোক। সত্য সবার সামনে আসুক।” তৃণমূল কেন জেপিসি-র বিপক্ষে সে বিষয়ে যুক্তিও দিয়েছেন ডেরেক। ১৯৮৭ সালের বোফর্স কাণ্ড থেকে শুরু করে তিরিশ বছরে সংসদে আটটি জেপিসি গঠন করা হয়। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলেই দাবি তৃণমূলের। জেপিসি-র তালিকায়, বোফর্স ও হর্ষদ মেহতার ঘটনায় জেপিসির রিপোর্টের সুপারিশ গৃহীত হয়নি। কেতন পারেখ, নরম পানীয়তে কীটনাশক মামলার রিপোর্ট এখনও বাকি রয়েছে। এছাড়া ভিভিআইপি চপার দুর্নীতি নিয়ে ২০১৩ সালে জেপিসি গঠন হলেও তার রিপোর্ট এখনও আসেনি বলে এদিন একগুচ্ছ উদাহরণও তুলে ধরেন ডেরেক। সিপিএম ও সিপিআই পিএনবি কেলেঙ্কারি নিয়ে জেপিসির দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি আগাগোড়া তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে বামেদের তরফ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে। মতবিরোধের কারণে বিরোধীদের অনৈক্যের ছবি ফের সামনে চলে এল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.