গৌতম ব্রহ্ম: তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তানে তার দেখা মিলেছে। কিন্তু এতদিন ভারতে কেউ তাকে লেন্সবন্দি করতে পারেনি। এবার এক বাঙালির হাত ধরে ‘সাপমোচন’ হল সেই ভয়ংকর বিষধরের। প্রকাশ্যে এল কেউটে প্রজাতির সেরা কুলীন ‘সেন্ট্রাল এশিয়ান কোবরা’ বা ‘নাজা অক্সিয়ানা’। কেউটের মতোই চালচলন। কিন্তু শঙ্খচুড়ের মতো ফণার পিছনে কোনও চিহ্ন নেই। হিমাচলপ্রদেশের চাম্বা জেলার প্রায় সাডে ছ’হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলে গত সেপ্টেম্বরে দেখা মিলেছে বিরল প্রজাতির এই কেউটের। তা-ও একটা নয়, দু’-দু’টো। তাদের ছবিও ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। দুই বিষধরের এহেন দর্শনপ্রাপ্তির সুবাদে হিমাচল তথা ভারতের সর্প মানচিত্রেও পরিবর্তন হয়েছে।
[প্রসবের পর পায়ুছিদ্র সেলাই! চিকিৎসকের ভুলে প্রাণসংশয় মহিলার]
ভারতে সাপের বিষের চরিত্র নিয়ে কিছুদিন আগে একটি প্রকল্প শুরু হয়। নেতৃত্বে ছিলেন ব্রিটেনের ব্যাঙ্গর বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার ইকোলজিস্ট তথা জেনেসিস্ট অনিতা মালহোত্রা। অনিতাদেবীর দলে রয়েছেন বাংলার বিশিষ্ট সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ তথা হারপেটালজিস্ট বিশাল সাঁতরা। বিশালই হিমাচলের চাম্বা প্রদেশে এই ‘সেন্ট্রাল এশিয়ান কোবরা’-র দেখা পান। বিশালকে এই কাজে সহযোগিতা করেছেন মেলভিন সেলভান নামে তামিলনাড়ুর এক যুবক। “এই প্রজাতির কেউটে অত্যন্ত বিরল। আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানে এই বিষধরের দেখা মিলেছে। কিন্তু, ভারতে এই প্রথম লেন্সবন্দি হল নাজা অক্সিয়ানা।”-এমনটাই জানালেন বিশাল। জানা গিয়েছে, ১৯৭৬ সালে ‘জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’ সেন্ট্রাল এশিয়ান কোবরার উপস্থিতি জানায়। কিন্তু তার সমর্থনে কোনও তথ্যপ্রমাণ পেশ করতে পারেনি। এবার সেই অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করলেন বিশাল। অনিতাদেবী জানিয়েছেন, সম্প্রতি সাপের ছবিটি সোশ্যাল সাইটে দেওয়া হয়। এরপরই সরীসৃপ বিশেষজ্ঞরা নানারকম মন্তব্য করতে থাকেন সাপটি নিয়ে। তখনই জানা যায়, এই প্রথম এই বিশেষ প্রজাতির কেউটের অস্তিত্ব ক্যামেরায় ধরা পড়ল। শুধু তাই নয়, লেন্সবন্দি হল।
[অমরনাথের পবিত্র গুহাকে ‘সাইলেন্স জোন’ ঘোষণা পরিবেশ আদালতের]
তবে শুধু লেন্সবিন্দ করাই নয়, ডিএনএ বিশ্লেষণের জন্য সাপদু’টির শরীর থেকে বিষ, রক্ত ও আঁশের নমুনাও সংগ্রহ করেছেন বিশাল। বিষের নমুনা অসমের তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ও অন্যান্য নমুনাগুলি বেঙ্গালুরুর ‘আইআইএসসি’-তে পাঠানো হয়েছে। নমুনা সংগ্রহের পর সাপদু’টিকে বন দপ্তরের নিয়ম মেনে দ্রুত ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। অনিতাদেবী জানিয়েছেন, ভারতের জীববৈচিত্র বড় অদ্ভুত। একই প্রজাতির সাপ ভৌগোলিক অবস্থানের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে বিষের চরিত্রও। ফলে, অনেকসময়ই পলিভ্যালেন্ট ‘অ্যান্টি স্নেক ভেনাম’-এ কাজ হচ্ছে না। সম্প্রতি ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গ্রান্ট’-এর টাকায় অনিতাদেবীরা ভারতের বিষ-মানচিত্র তৈরির কাজে নামেন। তারপরই এই সাফল্য।