সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত শুক্রবারই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের চার বর্ষীয়ান বিচারপতি। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর বিরুদ্ধে সোহরাবউদ্দিন এনকাউন্টার মামলায় যে ফৌজদারি মামলা রুজু হয়, সেটি পুনরায় আদালতে উঠুক বলে দাবি জানাল কংগ্রেস। গোয়ায় কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি শান্তারাম নায়েক এই দাবি জানিয়েছেন শনিবার।
বিবৃতি জারি করে কংগ্রেসের দাবি, সোহরাবউদ্দিন এনকাউন্টার মামলায় বিশেষ সিবিআই বিচারক ব্রিজগোপাল হরিকৃষ্ণণ লোয়ার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। ওই মামলাতেই অমিত শাহকে আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মামলা চলাকালীন নাগপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গেলে সেখানে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিচারক লোয়ার মৃত্যু হয়। কংগ্রেস জানিয়েছে, অমিত শাহর বিরুদ্ধে যে ফৌজদারি মামলা রুজু হয় সেই মামলা ফের আদালতে উঠুক। সুপ্রিম কোর্টের চার শীর্ষ বিচারপতি বিদ্রোহ ঘোষণা করে দাবি করেছেন বিচারব্যবস্থা ঠিকঠাক চলছে না। এই পরিস্থিতিতে ওই মামলা পুনরায় আদালতে ওঠা খুবই দরকার। পাশাপাশি, নাগপুরে কীভাবে বিচারপতি লোয়ার মৃত্যু হয়েছে, তারও পুনর্তদন্ত চেয়েছে কংগ্রেস। নায়েক প্রশ্ন তুলেছেন, ‘লোয়ার মৃত্যুর পর ওই মামলায় শাহকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়। মামলার কোন বিচারকের কাছে যাবে, তার দায়িত্ব যদি সংসদের হাতে না থাকে, তাহলে কেন কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকবে? যেখানে কেন্দ্রের গা জোয়ারি নিয়ে খোদ সুপ্রিম বিচারপতিরাই বিরক্ত।’ দেশের শীর্ষ আদালতের বিচারব্যবস্থায় আরও স্বচ্ছতা আনার দাবিও জানিয়েছেন নায়েক।
যদিও রবিবার রাতে সাংবাদিকদের ডেকে বিচারক বি এইচ লোয়ার ছেলে অনুজ জানিয়ে দেন, তিনি চান না বাবার মৃত্যু নিয়ে অযথা জলঘোলা হোক। তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিনে একের পর এক দুঃসংবাদে আমাদের পরিবার শোকগ্রস্ত। দয়া করে আমাদের আর বিতর্কের মধ্যে জড়াবেন না।’ তিনি এও জানান, বাবার মৃত্যু একেবারেই স্বাভাবিক। এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই তাঁদের।
Our family is pained with the chain of events in past few days. Please don’t harass us: Anuj Loya, Justice BH Loya’s son pic.twitter.com/0y3IrPZYtb
— ANI (@ANI) January 14, 2018
মুম্বইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক মাত্র ৪৮ বছরের লোয়া কিন্তু রীতিমতো বলশালী ছিলেন। প্রতিদিন টেবিল টেনিস খেলতেন। তাঁর এজলাসেই চলছিল সোহরাবউদ্দিন এনকাউন্টার মামলা। একটি সূত্র দাবি করেছে, ওই মামলায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তাঁর উপর চাপ বাড়ছিল। তাঁকে ১০০ কোটি টাকা ঘুষ ও মুম্বইতে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রলোভনও দেখানো হয়। ২০১৫-র ২৯ নভেম্বর আরেক বিচারকের মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে লোয়া নাগপুরে যাচ্ছিলেন। রবি নিবাস নামের এক ভিআইপি গেস্টহাউস থেকে সেদিন রাত ১১টা নাগাদ স্ত্রী ও পুত্রের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন প্রায় ৪০ মিনিট। আচমকাই গভীর রাতে তিনি অসুস্থ বোধ করেন, স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। চমকে দেওয়ার মতো তথ্য হল, মুম্বইতে নয় বরং লাটুরে তাঁর পোস্টমর্টেম হয়। এক আরএসএস কর্মী তাঁর মোবাইলটি পরিবারের হাতে ফিরিয়ে দেয় বলে দাবি ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর। ময়নাতদন্তের সময় দেহ থেকে সমস্ত পোশাক খুলে ফেলার নিয়ম থাকলেও লোয়ার মৃতদেহ যখন পরিবারের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তখন তাঁর শরীরের গতরাতের পোশাক ছিল। মোবাইলে কোনও মেসেজ ছিল না। কেউ মুছে দিয়েছিল বলে সন্দেহ। তিনদিন পর, মৃতের পরিবারের তরফে এই প্রশ্নগুলি তোলা হয়।
এর চেয়েও অবাক করা তথ্য হল, লোয়ার পর যাঁর এজলাসে এই মামলার বিচারের ভার যায়, তিনি মাত্র ২ দিনেই অমিত শাহকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। সিবিআইও আর নতুন করে কোনও আবেদন জানায়নি। হেরাল্ড-এর প্রতিবেদনে স্পষ্টই জানানো হয়েছে, হয়তো অমিত শাহর সঙ্গে সোহরাবউদ্দিন এনকাউন্টার বা লোয়ার মৃত্যুর কোনও যোগ নেই। কিন্তু যেভাবে মাত্র ২ দিনে অমিত শাহকে অব্যাহতি দেওয়া হল, তাতে বিচারব্যবস্থায় গরমিলেরই ইঙ্গিত মিলছে। এই একই অভিযোগে সরব হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের চার বিচারপতিও। আর এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের দাবিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.