সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের শাস্তির খাঁড়া ঝুলছে। শাস্তি পেতে চলেছেন লালুপ্রসাদ যাদব। কারণ তিনি পুরনো পাপী। পাপের নাম, পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি। ইঙ্গিত এই পাপেই ফের কারাবাসের সাজা পেতে চলেছেন ৬৯ বছরের লালু। সপ্তাহখানেক আগেই বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারপতি শিবপাল সিং তাঁকে পশুখাদ্য মামলায় সাড়ে তিন বছরের কারাবাসের সাজা শুনিয়েছেন। মামলাটি ছিল দেওঘর জেলার পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত। সেই মামলার শুনানিতে লালু নিজে সশরীরে উপস্থিত থেকে বিচারকের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, তাঁকে যেন তিন বছরের কম কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়। তিন বছরের কম সাজা হলে মামলার রায় অনুসারে লালু পরে প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন। জামিনও পেতে পারেন। কিন্তু লালুর আর্জি খারিজ করে তাঁকে সাড়ে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দেন বিচারক। লালু আর্জি জানিয়েছিলেন, বয়সের কথা বিবেচনা করে তাঁকে যেন মুক্ত কারাগারে না রেখে সেল-এর মধ্যে বন্দি রাখা হয়। কিন্তু তাও গ্রাহ্য হয়নি। তাঁকে মুক্ত কারাগারেই পাঠানো হয়।
এই সাজার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের সাজার মুখে গরিবোঁ কা মসিহা। এবার দুমকা জেলার পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে প্রধান অভিযুক্ত তিনি। এবার বিচারকও সেই শিবপাল সিং। তাই রাবড়ি দেবীর স্বামীর কাতর আর্জি, তাঁকে যেন কিছুতেই মুক্ত কারাগারে না পাঠানো হয়। বিচারকের প্রশ্ন, মুক্ত কারাগারে থাকলে লালুর মন মেজাজ, স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। তিনি নিয়মিত নিজের সমর্থক ও ভক্তদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে তাঁদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, চাইলে অন্য বন্দিদের মতো পরিবারের এক-দু’জন সদস্যকে নিয়ে মাঝে মাঝেই জেলে থাকতে পারবেন। তাঁর পরিচর্যার সুযোগও পাবেন বাড়ির লোকজন। তাই লালু রাঁচিতে নয়। রাঁচি থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে হাজারিবাগের মুক্ত কারাগারেই থাকুন।
কিন্তু লালুর এক গোঁ। তিনি কিছুতেই মুক্ত কারাগারে থাকবেন না। কিন্তু আপত্তি কেন? বিচারকের প্রশ্নের জবাবে প্রথমে কিছুতেই বলতে চাইছিলেন না কারণটা। শেষে বলেই ফেললেন কারণটা। সেটা হল, মুক্ত কারাগারে নকশালরা থাকে। ওদের সঙ্গে কিছুতেই থাকতে পারবেন না। কারণ নকশালদের কাছ থেকে তাঁর জীবন ও নিরাপত্তার আশঙ্কা রয়েছে। জবাবে বিচারক কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে অবিভক্ত বিহারে নকশালবাদী তথা মাওবাদীদের বিরুদ্ধে নানা সময়ে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন লালু। নকশালদের বিরুদ্ধে দমন অভিযানে সক্রিয় থাকত লালুর পুলিশ ও সিআরপিএফ। রাজ্যভাগের পর নকশালদের সঙ্গে ঝাড়খণ্ড সরকারের ও বিহার সরকারের বৈরিতা আরও বেড়েছে। রাবড়ি দেবী মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়েও নকশাল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সংঘাত ছিল নিত্য ঘটনা।
পরবর্তীকালে বন্দি ও কারাবাসের সাজা পাওয়া নকশাল নেতাদের জায়গা হয় হাজারিবাগের মুক্ত কারাগারে। সেই সব নকশাল ক্যাডার বা নেতারা পাছে প্রতিহিংসাবশত তাঁর উপর হামলা চালান এই ভয়ে হাজারিবাগের মুক্ত কারাগারে থাকতে চান না লালু। সেজন্য বিচারকের কাছে তাঁর আর্জি, খোলা জেলের চাইতে প্রথাগত জেলের কুঠরি তার বেশি পছন্দের। বিচারকের কাছে হাসিমুখে লালুর আর্জি, ‘ধর্মাবতার, আমিও আইন নিয়ে পড়েছি। আমি আইনজাবী। সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস করার লাইসেন্সও আমার ছিল। মুক্ত কারাগারে সেই সব বন্দিকেই পাঠানো যায় যাদের বয়স ৬০-এর বেশি এবং যাদের কারাবাসের সাজা পাঁচ বছরের অধিক। আপনি আমাকে সাড়ে তিন বছরের সাজা দিয়ে খোলা জেলে পাঠাতে চাইছেন। ওই নকশালদের সঙ্গে থাকা কীভাবে সম্ভব? কোনও বৃদ্ধ আসামির সম্মতি ছাড়া তাঁকে মুক্ত কারাগারে পাঠানো যায়?’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.