সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কথায় আছে অতিথি দেব ভব। সে রাজার ঘরেই হোক আর চাষীর ঘর। আপ্যায়নের আন্তরিকতায় কিন্তু কোনও ফাঁক থাকে না। একবার ভাবুন তো শোওয়ার ঘরের লার্জ স্ক্রিনের টিভিতে দেখছেন মুম্বইয়ের বস্তি এলাকা। একটু সময় পর টিভি বন্ধ করে বিছানা থেকে নেমে পড়লেন। পা ডুবল খাট লাগোয়া কার্পেটে। নরম ঘাসের চটিতে পা গলিয়ে জানলার কাছে এসে দাঁড়ালেন। বাইরে চোখ পড়তেই বিরক্তিতে মুখটা কুঁচকে গেল। কিন্তু কখনও ভেবেছেন কি কীভাবে প্রতিটা দিন কাটায় বস্তির বাসিন্দারা? বিরক্তিকে পাশে সরিয়ে রেখে একবার কৌতূহলী হোন না। স্বচ্ছন্দের মোড়ক ছেড়ে যদি এঁদোগলি, নোংরা নর্দমা, খাটা পায়খানার পাশে একটা দিন কাটান কেমন লাগবে? এমনই সুযোগ করে দিচ্ছেন দেশের বাণিজ্যনগরীর এক বস্তিবাসী রবি তোনিয়া সান্সি। বিলাসবহুল জীবনের সঙ্গে বস্তি জীবনের তফাতটা বুঝতে একদিন রবি তোনিয়ার অতিথি হওয়াই যায়। মূলত বিদেশিদের জন্যই তৈরি হয়েছে রবি তোনিয়ার হোমস্টে। ঠিকানা সান্তাক্রুজের গোলিবার বস্তি।
বস্তির ১২ বাই ৬ ফুটের ঘরে ১৬জন সদস্যকে নিয়ে মিলেমিশে থাকেন রবি তোনিয়া। কোনওরকমে দিন কেটে যায়। নিজেদের বাসস্থান লাগোয়া আরও একটি ঘর তুলেছেন রবি। একেবারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঝা চকচকে শোওয়ার ঘর। মেঝেতে গদিওয়ালা ম্যাট্রেস, সঙ্গে ফ্ল্যাট স্ক্রিনের টিভি। বস্তির ছোট্ট ঘরে বাহুল্যের অভাব থাকলেও আন্তরিকতার অভাব নেই। চাইলেই ২০০০ টাকার বিনিময়ে একটা দিন কাটিয়ে আসতে পারেন ওই ঘরে। মুম্বইয়ের বস্তিজীবনের স্বাদ একেবারে হাতেগরম পেয়ে যাবেন।
তবে একদিনেই বুদ্ধিটা মাথায় খেলেনি। রবি তোনিয়াকে হোমস্টের পরিকল্পনাটা দেন ডেভিড বিজিল। একটি এনজিওর কর্মী রবি। সেখানেই সুপারভাইজারের দায়িত্বে রয়েছেন নেদারল্যান্ডের ডেভিড। বাণিজ্যনগরীর বিলাসবহুল বাসস্থান ছেড়ে তোনিয়ার বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন ডেভিড। নিতান্তই সাদামাটা জীবনযাবনে যে আন্তরিকতার ছোঁয়া ছিল, তাতে মুগ্ধ হয়ে যান বিদেশি। তারপরেই রবিকে হোমস্টের পরিকল্পনা দেন।
ডেভিড নিজেই জানিয়েছেন, রবির পরিবারের সেই অর্থে কোনও উপার্জন নেই। মুম্বইয়ের রাস্তায় শহরের ম্যাপ বিক্রি করেই দিন গুজরান হয়। কিন্তু মোবাইল ফোনের জিপিএস ন্যাভিগেশনের দৌলতে আয় কমেছে। তাই বাধ্য হয়েই এনজিও-র কাজে যোগ দিয়েছেন রবি। হোমস্টে চালু হলে পরিবারটির হাতে টাকা আসবে। অন্ন সংস্থানের জন্য আর হাহুতাশ করতে হবে না। তাঁর বস্তির এক কামরার ঘরে অতিথি আসবে। এই খবরেই দারুণ খুশি হয়েছিলেন রবি। সঙ্গেসঙ্গেই অতিথি নিবাসের মতো সাজিয়েও ফেলেন। কিন্তু অতিথি যে দেবতা। তাঁর থেকে কীভাবে টাকা নেবেন রবি? সাফ জানিয়ে দেন, অনেক টাকাকড়ি নেই। তবে যা আছে তাই দিয়েই সংসারের বৈতরণী পার হয়ে যায়। টাকার দরকার নেই। যদিও রবিকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছেন ডেভিড। ঠিক হয়েছে ২০০০ টাকায় একটা দিন কাটিয়ে আসা যাবে মুম্বইয়ের বস্তিতে। সঙ্গে মিলবে আন্তরিক আপ্যায়ন। একই শহরে বিলাসবহুল তাজ হোটেলের অবস্থান। আবার সেখানেই গোলিবার বস্তি। বাণিজ্যনগরীর বস্তিবাসীরা কেমন থাকেন দেখতে হলে অতিথি হয়ে যান রবি তোনিয়ার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.