সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দস্যু রত্নাকরের বাল্মীকি হওয়ার পথে কোনও নরেন্দ্র মোদি ছিলেন না। থাকলে হয় তো আত্ম উত্তরণের সেই গতি আরেকটু ত্বরান্বিত হত। তবে মাইসুরুর ক্ষেত্রে তা হয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর ‘ড্রিম প্রোজেক্ট’গুলির মধ্যে তা অন্যতম ছিল। আর তাই ‘জঞ্জালের পর্বত’ নামে পরিচিত এই শহর থেকেই প্রসব হয়েছে বিপুল অঙ্কের আয়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে। এবং অবশ্যই শহরবাসীর আত্মিক সহযোগিতা।
[গরুর চুরির অভিযোগ, মাথা মুড়িয়ে নিগ্রহ ২ দলিত যুবককে]
ঠিক কীভাবে? বর্জ্য পদার্থ পুনর্ব্যবহার করে তা সার ও বিদ্যুৎশিল্পে ব্যবহার করছে কর্ণাটকের এই ঐতিহাসিক শহরটি। তা থেকে বিশাল পরিমাণে আর্থিক লাভ করছে তারা। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, তেমনই পুরসভার হাতে আসছে কিছু অতিরিক্ত অর্থ। যা দিয়ে পুনরায় বর্জ্য পুর্ননবীকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলছে। সবচেয়ে মজার বিষয়, শুধু কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারই নয়, এই কাজে রোজ সমানভাবে উৎসাহ দিয়ে চলে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়ন্ত্রিত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, পথনাটিকা, প্রচারপুস্তিকা এমনকী আঞ্চলিক রেডিও চ্যানেলগুলিও। এবং এভাবেই মাইসুরু হয়ে উঠেছে দেশের অন্যান্য শহরের কাছে মাইলস্টোন।
[খাস রেল ভবনেই ভুয়ো ইন্টারভিউ-নিয়োগপত্রের ব্যবস্থা, দুর্নীতির জাল গভীরে]
রাজা-রাজড়া ও প্রাসাদের শহর মাইসুরুর বাসিন্দাদের মানসিকতাও ‘কিং সাইজ’। অন্তত পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে তো বটেই। “নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিস আমরা নষ্ট করি না।” এমনটাই বক্তব্য মাইসুরু পুরসভার স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডি.জি. নাগরাজের। এই একই মন্ত্রেই নিজেকে প্রস্তুত করেছেন শহরবাসীও। নিজেকে শামিল করেছে শহর ও পরিবেশ পরিষ্কার রাখার মহাযজ্ঞে। শহরে প্রায় দশ লক্ষ মানুষের বাস। ঘড়িতে সকাল সাড়ে ৬টা বাজলেই হল। সবুজ অ্যাপ্রোনে দরজায় দরজায় হাজির হন সাফাইকর্মীরা। কলিং বেল বাজার বহু আগেই কানে পৌঁছয় তাঁদের হুইসেলের আওয়াজ। কোনও বাড়ি বাদ পড়ে না। রুটিন মেনে সংগ্রহ হয় রোজকার জঞ্জাল। বাসিন্দারা দুটি পৃথক জঞ্জালের পাত্র বের করেন। একটি জৈব বর্জ্যপদার্থে ভর্তি। অন্যটি অজৈব। শহরে রয়েছে ন’টির বেশি পুনর্নবীকরণ কেন্দ্র ও একটি জৈব কারখানা। প্রতিদিন ৪০০টি ঠেলাগাড়ি ও ১৭০টি ময়লা ফেলার গাড়িতে করে সেখানে জঞ্জাল পৌঁছে যায়।
[২২ দিনে বিল ১৮ লাখ! অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যুতে কাঠগড়ায় হাসপাতাল]
নির্দিষ্ট জায়গায় পুনর্ব্যবহারযোগ্য বস্তুগুলি আলাদা করে ফেলা হয়। এগুলির মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিকের বোতল, কাপ, ধাতব দ্রব্য, পায়ে পরার চপ্পল ইত্যাদি। প্রতিটির জন্য রয়েছে নির্ধারিত জায়গা। এগুলি বর্জ্য কিনতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। জৈব পদার্থগুলি চাষিদের দিয়ে দেওয়া হয় সার তৈরির জন্য। মাইসুরুতে রোজ প্রায় ৪০২ টন করে বর্জ্য পদার্থ জমা হয়। পুনর্নবীকরণ কেন্দ্রগুলিতে তা থেকে নতুন দ্রব্য তৈরি করা হয়। এই কেন্দ্রগুলি মূলত স্থানীয় বাসিন্দা ও বেসরকারি সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বর্জ্য পদার্থ ও জৈব সার বিক্রি করেই এগুলি চলে। এই কারখানা চালানোর জন্য মাইসুরু প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নেয়। তাছাড়া বর্জ্য পদার্থ থেকে তৈরি বস্তু বিক্রি করে যে আয় হয় তারও পাঁচ শতাংশ লাভ রাখে। ফলে প্রশাসন ও বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হয়। এইভাবে ছোট ছোট পায়ে নতুন ইতিহাস গড়ার পথে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে ইতিহাসের ‘মহিশপুরা’।