Advertisement
Advertisement

Breaking News

‘ভারতের অর্থনীতি যথেষ্ট মজবুত’, মন্দার আশঙ্কা উড়িয়ে দাবি অর্থমন্ত্রী নির্মলার

সস্তা হচ্ছে গাড়ি-বাড়ির ঋণ, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ কেন্দ্রের৷

Nirmala Sitharaman announces measures to revive economic growth
Published by: Tanujit Das
  • Posted:August 24, 2019 9:00 am
  • Updated:August 24, 2019 9:00 am

দীপাঞ্জন মণ্ডল, নয়াদিল্লি: দেশের অর্থনীতির উন্নতির স্বার্থে এবং সাধারণ মানুষ ও উদ্যোগপতিদের সুবিধা দিতে শুক্রবার একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, দেশের অর্থনীতি নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই। বিশ্বের সার্বিক অর্থনীতি এবং উন্নত দেশগুলির অর্থনীতি নিম্নগামী বলে তার প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতেও। তা সত্ত্বেও ভারতের অর্থনীতি ‘যথেষ্ট মজবুত’ রয়েছে। সীতারমনের দাবি, আমেরিকা-চিনের চেয়ে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ভাল।

[ আরও পড়ুন: রাজ্যে বিধানসভা উপনির্বাচনে জোট বেঁধে লড়বে বাম-কংগ্রেস, প্রস্তাবে সিলমোহর সোনিয়ার ]

Advertisement

শুক্রবারই নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার দাবি করেছিলেন, গত ৭০ বছরে মধ্যে দেশে অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আর্থিক মন্দা কাটাতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। এরপরই বিতর্ক তৈরি হয়৷ এবং তারপরই সাংবাদিক বৈঠক করে নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যানের দাবি উড়িয়ে দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। উলটে সীতারমনের দাবি, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সরকার আর্থিক সংস্কারে কাজ করছে। একই সঙ্গে শিল্পক্ষেত্র এবং দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্তের কথা এদিন জানান তিনি। অর্থমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, বিশ্ব অর্থনীতির ৩.২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি হচ্ছে। সেখানে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধি অনেক বেশি হারে হচ্ছে। সারা বিশ্বে অর্থনীতি দুর্বল হওয়ায় মন্দার সময় চলছে। আমেরিকা-চিনের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবও পড়ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। সীতারমনের দাবি, যেখানে আমেরিকা-চিনের মতো দেশের অর্থনীতি নিম্নগামী, সেখানে ভারতের অবস্থা যথেষ্ট ভাল।

Advertisement

[ আরও পড়ুন: তিরুপতির বাসের টিকিটে হজ যাত্রার বিজ্ঞাপন, হায়দরাবাদ জুড়ে বিতর্ক তুঙ্গে ]

এদিন মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পকে চাঙ্গা করতে একাধিক সিদ্ধান্তের ঘোষণা করেছে অর্থমন্ত্রক। পাশাপাশি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির অবস্থা ভাল করতে ৭০,০০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা এদিন ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে শিল্পক্ষেত্রে নগদের জোগান বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। সীতারমনের দাবি, এর ফলে ব্যাংকগুলির ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে এবং তাতে আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে। চলতি বছরেই একাধিক বার রেপো রেট কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক। আর তাই এই রেপো রেট কমানোর সুবিধা যাতে ব্যাংকগুলি গ্রাহকদের দেয়, তা নিশ্চিত করার কথাও এদিন জানিয়েছেন সীতারমন। রেপো রেট কমলে গৃহ ও গাড়ি ঋণের সুদও কমবে। তার সুফল পাবে সাধারণ মানুষ। গাড়ি এবং আবাসন শিল্প চাঙ্গা হবে। গৃহঋণে জোর দিতে ন্যাশনাল হাউজিং ব্যাংককে ৩০ হাজার কোটি সাহায্য দেওয়া হবে। সরকারি সংস্থাগুলিকে পুরনো গাড়ি পালটে নতুন গাড়ি নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভারত স্টেজ ফোর শ্রেণির গাড়ি রেজিস্ট্রেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। ২০২০-র মার্চ পর্যন্ত কেনা এই শ্রেণির গাড়িকে বৈধ ধরা হবে।

[ আরও পড়ুন: জোটেনি কোনও ভাতা, ১৯ বছর ধরে শৌচালয়ই ঠিকানা বৃদ্ধার ]

বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা এদিন জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। মূলধনী বাজারে বিদেশি সংস্থার লগ্নি বা এফপিআই—এর (ফরেন পোর্টফেলিও ইনভেস্টমেন্ট) উপর থেকে সারচার্জ প্রত্যাহারের কথা এদিন ঘোষণা করেছেন সীতারমন। বাজেট প্রস্তাবকে উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, ‘এক কথায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উপর থেকে সারচার্জ কমানো হল, অন্যদিকে প্রাক বাজেট প্রতিশ্রুতিও বজায় থাকল।’ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের থেকে ৪০ শতাংশ হারে সারচার্জ নিত কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই অর্থমন্ত্রক ইক্যুইটি শেয়ার ট্রান্সফার থেকে প্রাপ্ত স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি মূলধন লাভের বর্ধিত সারচার্জ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিন সীতারমন বলেন, “বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে ধারা ১১১-এ এবং ১১২-এ উল্লিখিত ইক্যুইটি শেয়ার, ইউনিটগুলির হস্তান্তর থেকে পাওয়া দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি মূলধন লাভের জন্য ফিনান্স অ্যাক্ট, ২০১৪ দ্বারা গৃহীত বর্ধিত সারচার্জ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

[ আরও পড়ুন: নাশকতার ছক! শ্রীলঙ্কা থেকে তামিলনাড়ুতে ঢুকেছে ৬ লস্কর জঙ্গি ]

স্টার্ট আপ এবং ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র শিল্পকে চাঙ্গা করতেও বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জিএসটি সরলীকরণ, কর ছাড়ের মতো ঘোষণা। স্টার্ট আপের ক্ষেত্রে ‘অ্যাঞ্জেল ট্যাক্স’ তুলে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। স্টার্ট আপের ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে একটি সেল তৈরি করবে কেন্দ্র। যে সমস্ত এমএসএমই এখনও জিএসটি রিফান্ড পায়নি, তাদের সমস্ত বকেয়া ৩০ দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়া হবে। আগামিদিনে ৬০ দিনের মধ্যে জিএসটি রিফান্ড পাওয়া যাবে। এমএসএমই-র আওতায় কারা আসবে, তা ঠিক করতে এই আইন পাঠানো হবে মন্ত্রিসভায় এবং সেখানে সমস্ত পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এমএসএমই—র ‘ওয়ান ডেফিনেশন’ তৈরি হবে। ঋণ শোধ করার ১৫ দিনের মধ্যেই সমস্ত নথিপত্র গ্রাহককে দিয়ে দেবে ব্যাংকগুলি। তাতে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র শিল্পগুলির সুবিধা হবে।

[ আরও পড়ুন:  হালাল-ঝটকার দ্বন্দ্ব, খাদ্যের ধর্ম বিচার করে বিতর্কে McDonald’s ]

এছাড়াও আয়করের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। দুই থেকে পাঁচ কোটি আয়ের ক্ষেত্রে সারচার্জ ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। যেখানে পাঁচ কোটির বেশি আয়ের ক্ষেত্রে ১৫-৩৭ শতাংশ সারচার্জ বসানো হয়েছে। আয়কর আধিকারিকদের জন্যও নতুন নির্দেশ দিয়েছে অর্থমন্ত্রক। তাঁরা আর আঞ্চলিক দপ্তর থেকে কোনও আয়করদাতাকে চিঠি পাঠাতে পারবেন না। চিঠি পাঠানো হবে বিভাগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে। প্রতিটি চিঠির পৃথক ডকেট নম্বর (ডিন) দেওয়া হবে। ডিন নেই এমন কোনও চিঠি এলে প্রাপক তা অগ্রাহ্য করতে পারেন। বিজয়া দশমীর দিন থেকে চালু হবে এই পদ্ধতি। সীতারমন জানিয়েছেন, এর আগে পর্যন্ত যে চিঠিই পৌঁছে থাকুক না কেন, তা আর বিজয়া দশমীর পর থেকে গ্রাহ্য হবে না। শুধুমাত্র যে নথিগুলি আয়কর দপ্তরের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে, সেগুলিই গ্রাহ্য হবে। গত কয়েক মাস ধরেই দেশে আর্থিক পরিস্থিতি বেহাল বলে সরব হয়েছে শিল্পমহল। পরিস্থিতি সামলাতে সাহায্যের দাবিও করেছিল তারা। এবার সেই অবস্থা সামাল দিতেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী মাঠে নামলেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আগামী সপ্তাহে অর্থনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে আরও কিছু পদক্ষেপ করা হতে পারে বলেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও সীতারমনের সাংবাদিক বৈঠকের পরই সমালোচনায় সরব হয়েছে কংগ্রেস। তাদের কটাক্ষ, অবিলম্বে অর্থমন্ত্রী বদল করা প্রয়োজন। সীতারমন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ