সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গৃহযুদ্ধে রক্তাক্ত সিরিয়া। যতদিন যাচ্ছে আরও ভয়ংকর হচ্ছে পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর লড়াইয়ে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শহর আলেপ্পো। এই পরিস্থিতিতে ক্ষতবিক্ষত সিরিয়ায় রয়েছেন বহু ভারতীয়। যাঁদের নিয়ে আজ শুক্রবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। জানালেন, এদেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য সব রকম পদক্ষেপ করবে সিরিয়ার ভারতীয় দূতাবাস।
আজ সাপ্তাহিক সম্মেলনে নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন রণধীর জয়সওয়াল। উঠে আসে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার প্রসঙ্গও। তখনই বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র জানান, “সিরিয়ার সাম্প্রতিক যুদ্ধের উপর আমরা তীক্ষ্ণ নজর রাখছি। সমস্ত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এই মুহূর্তে সিরিয়ায় প্রায় ৯০ জন ভারতীয় রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে অনেকেই সেখানে রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করছেন। ভারতীয় দূতাবাসগুলো তাঁদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ রাখছে।”
বিবিসি সূত্রে খবর, আজও সিরিয়ার নানা প্রান্তে ব্যাপক লড়াই জারি রেখেছে বিদ্রোহীরা। সংঘর্ষের মুখে পিছু হঠতে বাধ্য হচ্ছে সরকারি বাহিনী। গত সপ্তাহেই জানা গিয়েছিল, হঠাৎ হামলা চালিয়ে সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর একটি বড় এলাকা দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। এবার তারা অগ্রসর হয়েছে প্রধান শহর হোমস-এর দিকে। শেষ পাওয়া খবর মোতাবেক, আর মাত্র এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে বিদ্রোহীরা। অন্যদিকে, হামা শহরে প্রেসিডেন্ট আসাদের বাবা তথা দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল আসাদের মূর্তি ভেঙে দিয়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে রুশ নাগরিকদের দ্রুত সিরিয়া ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রক।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, সিরিয়ার এই বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিচ্ছে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। আলেপ্পো শহরের অর্ধেকই এখন নাকি তাদের নিয়ন্ত্রণে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের পরিচালক রামি আবদুল রহমানের কথায়, লড়াই ছাড়াই অনেক জায়গায় সরকারি বাহিনী পিছু হটেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই তাহরির আল-শাম আল কায়দার শাখা সংগঠন হিসেবেই পরিচিত। অর্থাৎ, গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াই এখন কার্যত জেহাদিরা হাইজ্যাক করে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০০ সাল থেকেই শক্ত হাতে সিরিয়া শাসন করছেন আসাদ। তবে জলঘোলা হতে শুরু করে ২০১১ সালে। আরব বসন্তের হাওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠে মরুপ্রদেশটি। আকাশ বাতাস কেঁপে ওঠে একনায়ক হঠাও, গণতন্ত্র ফেরাও স্লোগানে। শুরু হয়ে যায় গৃহযুদ্ধ। আসাদকে গদিচ্যুত করতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিদ্রোহীদের যৌথমঞ্চ ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’ (এসডিএফ)। কুর্দ বাহিনী পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) নেতৃত্বে আরম্ভ হয় এক অসম যুদ্ধ। শুরুর দিকে লড়াইয়ে আলেপ্পো হাতছাড়া হলেও, ২০১৬ সালে তা পুনরোদ্ধার করে আসাদ বাহিনী। পাশাপাশি, ইরান ও রাশিয়ার মদতে বিদ্রোহীদেরও কোণঠাসা করে দেওয়া হয়। তবে সময়ের সঙ্গে মার্কিন ও পশ্চিমের দেশগুলির মদতে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে জবরদস্ত পালটা মার দিতে শুরু করে বিদ্রোহীরা। সবমিলিয়ে রাশিয়া, আমেরিকা, ইরানের মতো শক্তিগুলোর আধিপত্য বিস্তারের খেলায় বোড়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে সিরিয়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.