সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: খুন সে একটা করতই। প্রদ্যুম্ন স্রেফ পরিস্থিতির শিকার। তার জায়গায় অন্য যে কেউ এলেও খুন হত। একাদশ শ্রেণির ছাত্রের মধ্যে এমন ঠাণ্ডা মাথার খুনির দেখা পেয়ে কার্যত তাজ্জব সিবিআইয়ের দুঁদে গোয়েন্দারা। প্রদ্যুম্ন হত্যাকাণ্ডে সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রটিকে যত জেরা করা হচ্ছে তত চোখ কপালে উঠছে তাঁদের।
[ বেকারদের ক্ষোভকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক উসকানি, মোদিকে তোপ রাহুলের ]
কিছুদিন আগেই হরিয়ানার রায়ান ইন্ট্যারন্যাশনাল স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির এক পড়ুয়া খুন হয়েছিল। ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল স্কুলের বাস কন্ডাক্টরকে। কিন্তু সিবিআই তদন্তের পরই নাটকীয় পটবদল। জানা যাচ্ছে, ওই কন্ডাক্টর সম্পূর্ণ নির্দোষ। বরং একাদশ শ্রেণির ছাত্রটিকে আড়াল করতেই সুপরিকল্পিতভাবে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। ছেলেটির বাবা শাসকদলের ঘনিষ্ঠ ও আইনজীবী। বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যও। পুলিশ প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশেই ছেলেকে বাঁচাতে উদ্যোগী হয় ওই আইনজীবী। কৌশলে গ্রেপ্তার করা হয় কন্ডাক্টরকে। রীতিমতো অত্যাচার করে তার থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য মোতাবেক, ফুটন্ত জলে হাত-পা চেপে ধরা হয় ওই ব্যক্তির। তীব্র যন্ত্রাণার মুখে তিনি বাধ্য হয়ে খুন করেছেন বলে পুলিশকে বয়ান দেন। সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা অবশ্য এ স্বীকারোক্তিতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। ফলে তাঁদের তদন্তে প্রকৃত খুনির সন্ধান পাওয়া গেল।
[ ডেঙ্গু আতঙ্ক হটাতে সাফাই অভিযানে নামলেন গৃহবধূরাই ]
জেরা চলাকালীন ছাত্রটির বয়ানে রীতিমতো চমকে উঠছেন গোয়েন্দারা। পরীক্ষা পিছিয়ে দিতেই খুনের ছক কষেছিল সে। ছুরি নিয়ে স্কুলের বাথরুমে অপেক্ষা করছিল। যে কেউ গেলেই খুন হতে পারত। প্রদ্যুম্ন সেই শিকার হয়েছে। শুধু সেদিনই নয়, এর আগেও সে স্কুলে ছুরি নিয়ে গিয়ে খুনের জন্য অপেক্ষা করেছিল। গোয়েন্দাদের সামনে সে জানিয়েছে, কাকে খুন করবে সেটা সে জানত না। শুধু জানত পরীক্ষা আর শিক্ষক-অভিভাবক বৈঠক পিছোতে হলে কাউকে খুন করতেই হবে। সেই মোতাবেক প্রদ্যুম্নকে সামনে একা পেয়ে তার গলায় ছুরি চালিয়েছে সে।
[ মায়ের বাড়ি নিজের নামে লিখিয়ে তাঁকেই তাড়াল ছেলে ]
এদিকে কেন পুলিশি তদন্তে গাফিলতি হয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সমালোচনার মুখে পুলিশের সাফাই, এরকম হয়ে থাকে। তাহলে এই ঘটনায় যদি কন্ডাক্টরের ফাঁসি হত তাহলেও কি পুলিশ এরকম নির্বিকার থাকতে পারত! পুলিশ, নেতা ও প্রভাবশালীদের যোগাযোগের চক্রটিও ক্রমশ উন্মোচিত হচ্ছে। স্কুলের মালিক রায়ান পিন্টোও অত্যন্ত প্রভাবশালী। ব্যবসা বাঁচাতেই নির্দোষ ব্যক্তিকে ফাঁসানোর চক্রান্তে শামিল হয়েছে সে। তাকেও গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে। প্রসঙ্গত, প্রদ্যুম্ন যে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, তা স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রথম জানায় অভিযুক্ত ছাত্রটিই। প্রভাবশালীর ছেলে হওয়ার কারণেই এতদিন গা ঢাকা দিতে পেরেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সিবিআই তদন্তে পর্দাফাঁস। কিন্তু যেভাবে নির্দোষ কন্ডাক্টরকে ফাঁসানো হয়েছে তাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকে এই ঘটনার মধ্যে আরুষি হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী তদন্তেরও ছায়া পাচ্ছেন।