সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তাজমহল কোনও মন্দির নয়, এটি একটি স্মৃতিসৌধ। রীতিমতো তথ্যপ্রমাণ দাখিল করে আদালতে জানিয়েছিল আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। কিন্তু কেন্দ্রীয় জরিপ সংস্থা যাই বলুক, তাজমহলকে স্মৃতিসৌধ মানতে নারাজ গেরুয়া শিবির। তাই তো বিজেপির সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নেতা বিনয় কাটিয়ার তাজমহলের ভিতরে শিব চালিশা মন্ত্রোচ্চারণের পক্ষে সায় দিয়েছেন। সোমবার পর্যটকদের সামনে এক হিন্দু সংগঠনের বেশকিছু যুবককে তাজমহলের ভিতরে বসে শিব চালিশা পড়তে দেখা যায়। খবর পেয়েই তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়। কিন্তু এই আজব কাণ্ডে কোনও অপরাধ দেখছেন না বিনয়। বরং তাঁর যুক্তি, তাজমহল আদতে এক শিবমন্দির। ওই যুবকরা উচিত কাজই করেছে।
সোমবারের ঘটনায় পরেরদিন মুখ খোলেন বিজেপি নেতা। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে তিনি জানান, তাজমহলের ভিতরে বসে যারা শিব চালিশা পড়ছিল তারা অপরাধী নয়। কারণ তাজমহল আগে শিবমন্দির ছিল। এবং ওখানে একটি শিবলিঙ্গ ছিল। পরে তা সরিয়ে ফেলা হয়। এছাড়াও আরও অনেক চিহ্ন রয়েছে যা থেকে বোঝা যায় তাজমহল মোঘল দ্রষ্টব্য নয়, হিন্দু মন্দির। তিনি আরও বলেছেন, ‘মোঘলরা সুন্দর জায়গাকে গোরস্থানে পরিণত করেছে। শাহজাহানই এই কাজ করেছে। গোরস্থানের ছবি ঘরে রাখা শুভ নয়। আমি বলছি না ইতিহাস বদলাতে, কিন্তু তা শোধরানো দরকার।’ সোমবার অভিযুক্তদের ধরে সিআইএসএফ। তারপর লিখিত ক্ষমাপ্রার্থনা দেওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, তাজমহল নিয়ে জল্পনা থামাতে লোকসভায় বিবৃতি দিয়েছিল কেন্দ্র। ২০১৫ সালের নভেম্বরে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রক লোকসভায় জানিয়েছিল তাজমহলে কোনও মন্দিরের প্রমাণ মেলেনি। এই ঘটনার মাস সাতেক আগে আগ্রা জেলা আদালতে একটি মামলা রুজু হয়েছিল। যেখানে ৬ আইনজীবী দাবি করেছিলেন, তাজমহল হল শিবের মন্দির, যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় তেজো মহালয়া। হিন্দু পুণ্যার্থীদের অবশ্যই সেখানে ঢুকতে দেওয়া উচিত। আবেদনকারীদের এই আরজি মেনে নিয়েছিল আগ্রার জেলা আদালত। ওই নিম্ন আদালত এই নিয়ে কেন্দ্র সরকারের কাছে একটি নোটিস পাঠিয়েছিল। পাশাপাশি নোটিস দেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং এএসআইয়ের কাছে। এই ব্যাপারে তারা কী বলতে চায় তা জানতে চাওয়া হয়।
নিম্ন আদালত কীভাবে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে তাকে চ্যালেঞ্জ জানায় এএসআই। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া জানায়, তথ্য অনুযায়ী যমুনার তীরে যে সৌধ তৈরি হয়েছিল তার নামকরণ হয় তাজমহল। যা পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য হিসাবে পরিচিত। ১৯০৪ সালে ব্রিটিশ জমানা থেকে রেকর্ড অনুযায়ী তাজমহল একটি সংরক্ষিত সৌধ। এএসআইয়ের সংযোজন, শিবলিঙ্গ বা কোনও মন্দিরের অস্তিত্ব ওই এলাকায় ছিল না। তেজো মহালয়া বলে কোনও মন্দির ছিল না সেখানে। কেন্দ্রীয় সংস্থা মনে করে, এই নিয়ে মিথ্যা এবং ভ্রান্ত তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাজমহল যে জায়গায় গড়ে উঠেছিল তা রাজা জয় সিংয়ের থেকে নিয়েছিলেন মোঘলরা।
উল্লেখ্য, বিজেপি বিধায়ক সঙ্গীত সোমের তাজমহল নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে দেশ জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বাধ্য হয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বলেন, ভারতীয়দের রক্ত-ঘাম দিয়ে তৈরি তাজমহল। কার নির্দেশে নির্মাণ তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু তাতেও বিক্ষোভের আগুন না কমায় সঙ্গীত সোমকে ভর্ৎসনার পর জবাব তলব করে বিজেপি। মুখ বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টায় ২৬ তারিখ আগ্রা সফরে যাচ্ছেন যোগী আদিত্যনাথ। সেখানে তিনি তাজমহল পরিদর্শনও করবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.