সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টিপু সুলতান ‘হিন্দু বিরোধী’? নাকি ‘বর্বর হত্যাকারী’? বিজেপির এই সওয়ালে যখন তোলপাড় রাজনৈতিক মহল, তখন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মন্তব্য, ‘ব্রিটিশের বিরুদ্ধে শহিদ হয়েছিলেন মহীশূরের প্রাক্তন শাসক টিপু সুলতান।’ বিজেপির অস্বস্তি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়ে বুধবার এই মন্তব্য করলেন রাষ্ট্রপতি।
ইতিহাসের পাতায় বরাবরই বিতর্কের কেন্দ্রে টিপু সুলতান। দু’বছর ধরে কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার ধুমধাম করে টিপু সুলতানের জন্মদিন পালন করছে। এ বছর ১০ নভেম্বর সেই অনুষ্ঠানের আগে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেস একদফা দ্বন্দ্বে জড়ায়। এই পরিস্থিতিতে কর্নাটক বিধান পরিষদ ভবনে বিধান সৌধের হীরক জয়ন্তী উদযাপনে রাজ্য বিধানসভার যৌথ অধিবেশনে যোগ দেন রাষ্ট্রপতি। এদিন তাঁর ভাষণে উঠে আসে টিপু সুলতানের প্রসঙ্গ। আর তাঁকে নিয়ে বলতে গিয়ে রাষ্ট্রপতির গলায় তখন মহীশূরের শাসকের প্রতি কার্যত প্রশংসা শোনা যায়।
[‘খুনি, গণধর্ষণকারী’ টিপু সুলতানের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ‘না’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর]
রামনাথ কোবিন্দ বলেন, “ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে শহিদ হয়েছিলেন বীর টিপু সুলতান। এটি ঐতিহাসিক সত্য। যুদ্ধের জন্য ক্ষেপণাস্ত্র বা রকেট তৈরি এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তা ব্যবহার করে সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন পথ প্রদর্শক।” এদিন রাজ্য ও দেশের সামগ্রিক বিকাশে মহীশূর ও কর্নাটকের শাসক, সেনা, রাজনীতিক ও বিজ্ঞানীদের অবদানের কথা বলতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি টিপুর অবদানের উল্লেখ করলে সিংহভাগ বিধায়ক হাততালিতে ফেটে পড়েন। শুধু এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। রাষ্ট্রপতি বলেন, “তিনটি ‘ডি’র উপর দাঁড়িয়ে থাকে গণতন্ত্র।” সেই তিন ‘ডি’র কথা বলতে গিয়ে ডিবেট, ডিসেন্সি ও ডিসাইড-শব্দ তিনটি উল্লেখ করেন। যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, বিতর্ক, ভিন্নমত পোষণ করা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিজেপিকে বার্তা দিতেই কি এই মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি? এই প্রশ্ন উঠলেও রামনাথ কোবিন্দের মন্তব্য যে বিজেপি অস্বস্তি বাড়াচ্ছে তা বুঝতে সামান্য সময়ও নেননি সিদ্দারামাইয়া। অভিনন্দন জানাতে গিয়ে টুইটারে তিনি লেখেন, “রাষ্ট্রপতিকে তাঁর মন্তব্যের জন্য অভিনন্দন জানাই।” এই মন্তব্যকে ‘রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত মত’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, বিজেপিই ইতিহাসকে বদলে রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করছে। টিপু সুলতানকে ঘিরে মেরুকরণের রাজনীতিতে প্রথম থেকেই সরগরম কর্নাটক। ১০ নভেম্বর টিপু-জয়ন্তীর বিরোধিতা করে আসরে নামেন মোদি সরকারের মন্ত্রী অনন্ত কুমার হেগড়ে। তিনি সিদ্দারামাইয়া নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারকে চিঠি লিখে জানান, ‘হিন্দু-বিরোধী’, ‘বর্বর হত্যাকারী’র জন্মদিনের অনুষ্ঠান থেকে তাঁকে বাদ রাখতে।
বিজেপির দাবি নিয়ে যথারীতি ক্ষোভ জানিয়েছে কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, টিপুকে নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে গেরুয়া-শিবির। জেডিএস-ও বিজেপির বিরুদ্ধে সরব। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি বরাবরই মেরুকরণের রাজনীতি করে ফায়দা তোলার চেষ্টা করে। সাম্প্রতিক তাজমহল-বিতর্কে বিজেপিকে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, বিজেপি নেতারা নানা কথা বলছেন অথচ কেন্দ্র কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। রাষ্ট্রপতির বক্তব্য নিয়ে বিজেপি কিছু না বললেও গেরুয়া শিবিরের তরফে দাবি করা হয়, কর্নাটকে আগামী বছর ভোট। রাজ্যের প্রায় ১৩% সংখ্যালঘু ভোটারের মন জিততেই রাজ্যের কংগ্রেস সরকার ২০১৫ সাল থেকে টিপু-জয়ন্তী শুরু করেছে। কিন্তু, টিপুকে নিয়ে বিজেপির আপত্তির কারণ কী? এই বিষয়ে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, টিপু হিন্দু-বিরোধী ছিলেন, এই দাবি তুলে আরএসএস-ও মহীশূরের সুলতানের ঘোরতর বিরোধী। তাই বিজেপি নেতারা আরও সরব। বিজেপির দাবি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে কংগ্রেস বলে, টিপুকে নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে বিজেপিই।