সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ করা ঠিক নয়। রাজ্যের অনগ্রসর (OBC) শ্রেণির শংসাপত্র বাতিল মামলার সংক্ষিপ্ত শুনানিতে এমনটাই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। একইসঙ্গে অবশ্য বলা হল, রাজ্যের মধ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী সংরক্ষণ করার রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে চায় না আদালত। তবে এই সংরক্ষণ করতে হবে নিয়ম মেনে। ফের ৭ জানুয়ারি দিনের শুরুতে এই মামলা শুনবে বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
মধ্যাহ্নভোজের পর প্রথম মামলা হিসাবে ক্রমতালিকায় ছিল এই মামলা। যদিও শুনানির শুরুতেই আদালত জানিয়ে দেয়, পর্যাপ্ত সময় হাতে না থাকায় এদিন মামলা শোনা হবে না। মামলাকারীদের এক অংশের আইনজীবী পি এস পাটওয়ালিয়া বলেন, অন্তত একটি গোটা দিন অথবা একটি করে অর্ধে শুনলে দু’দিন সময় লাগবে বক্তব্য রাখতে। রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, দু’ ঘণ্টার মধ্যে নিজের বক্তব্য শেষ করে দেবেন। তাতে অবশ্য রাজি হয়নি আদালত। এই সময় সিব্বল অনুরোধ করেন, যত দ্রুত সম্ভব শুনানি হোক। বহু মানুষ শংসাপত্র ব্যবহার করতে পারছেন না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া যাচ্ছে না।
আদালত জানায়, ৭ জানুয়ারি দিনের শুরুতে মামলা শোনা হবে। এরপরই সংক্ষিপ্ত শুনানি হয় আদালতে। সেখানে সিব্বল দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৮ শতাংশ সংখ্যালঘু রয়েছে। যার মধ্যে ২৭ শতাংশ মুসলিম। রঙ্গনাথ কমিশনের সুপারিশে মুসলিমদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। কলকাতা হাই কোর্ট অন্ধ্রপ্রদেশের একটি রায়কে সামনে রেখে মামলায় নির্দেশ দিয়েছিল। আপত্তি করে পাটওয়ালিয়া জানতে চান, কীভাবে একটি মাত্র সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা সংরক্ষণ থাকতে পারে?
এই সময়ই বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের পর্যবেক্ষণ, “শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ পাওয়া উচিত নয়।” যদিও সিবল জানান, পিছিয়ে পড়া অংশকে সংরক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে, তার মধ্যে মুসলমান ছাড়া অন্য সম্প্রদায়ও রয়েছে। এরপরেই বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথন মন্তব্য করেন, কমিশন না করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে সংরক্ষণের তালিকা তৈরি করতে পারে? জবাবে রাজ্যের কৌশলী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় শ্রেণিবিন্যাস করেছে।
পাটওয়ালিয়া রাজ্যের বক্তব্যের বিরোধীতা করে দাবি করেন, সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কোনও সমীক্ষা করা হয়নি, রাজ্যের হাতে এই সংক্রান্ত কোনও তথ্যও নেই। কমিশনের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই ৭৭ সম্প্রদায়কে সংরক্ষণের আওতায় আনা হয়েছিল। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২২ মে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ ২০১০ সালের পর থেকে তৈরি রাজ্যের সব ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে দেয়। হাই কোর্টের নির্দেশে প্রায় ১২ লক্ষ শংসাপত্র অকেজো হয়ে যায়। উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.