সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নিহত ৩৯ ভারতীয়ের দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনার জন্য ইরাকে যাবেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভিকে সিং। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একথা জানানো হয়েছে। আইএস অধিকৃত ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুলেই ছিলেন ভারতীয়রা। কর্মসূত্রে তাঁরা ইরাকে বাস করছিলেন ২০১১ সাল থেকে। আইএসের জিম্মায় থাকাকালীন অবস্থায় খুন হয়েছেন ৩৯জন। সম্প্রতি সরকারিভাবে এই খবরের সত্যতা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। তারপরেই বিদেশ মন্ত্রকের তরফে দেশের প্রাক্তন সেনা প্রধানকে ইরাকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন বাগদাদ প্রশাসনের তরফে নো অবজেকশন পেয়ে গেলেই সি-১৭ বিমান নিয়ে ইরাকের উদ্দেশে রওনা হয়ে যাবেন ভিকে সিং। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্মানের সঙ্গে মৃত ভারতীয়দের দেহাবশেষ দেশে ফিরিয়ে আনাই বিদেশ মন্ত্রকের লক্ষ্য। এই প্রসঙ্গে দেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান বলেন, মৃতদের তালিকায় রয়েছে দেশের চারটি প্রদেশের মানুষ। দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনার পর পরিজনদের হাতেই তুলে দেওয়া হবে শেষ চিহ্নটুকু। গোটা কাজটার তদারকি করবে স্থানীয় প্রশাসন। প্রিয়জনের দেহাবশেষ নিতে পরিবারের কাউকেই বিমানবন্দরে আসতে হবে না। বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা বাড়িতেই পৌঁছে দেবেন।
[ঘোড়ায় চড়ার অপরাধে মোদির রাজ্যে দলিত যুবককে খুন]
সরকারি তথ্যানুসারে, আগামী রবিবার অর্থাৎ ১ এপ্রিল ভিকে সিংয়ের বাগদাদের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা ছিল। ইরাকে মৃত ভারতীয়দের খবর এতদিন চেপে রাখার জন্য বিদেশমন্ত্রকের সমালোচনা মুখর জাতীয় কংগ্রেস। বিদেশমন্ত্রী ও ভিকে সিংকে একহাত নিয়েছে বিরোধীরা। কংগ্রেসের অভিযোগ, ৩৯টি পরিবারকে বিভ্রান্ত ও হয়রান করছেন বিদেশমন্ত্রী। যদিও সংসদে গোটা বিষয়টিকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন সুষমা স্বরাজ। বলেছেন, এইকাজের প্রধান দায়িত্ব পালন করবেন প্রাক্তন সেনা প্রধান। তিনিই দেহাবশেষ নিয়ে আসবেন ইরাক থেকে। ইতিমধ্যেই মৃতদের চিহ্নিত করতে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ রিপোর্ট বাগদাদে পাঠানো হয়েছে। এই কাজে সহযোগিতা করেছে পাঞ্জাব, হিমাচলপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন। এই চারটি রাজ্যের বাসিন্দারাই শ্রমিকের কাজে ইরাকে গিয়েছিলেন। মৃতদের দেহাবশেষ নিয়ে ভিকে সিং যখন ইরাক থেকে ফিরবেন, তখন সি-১৭ বিমান প্রথম অবতরণ করবে অমৃতসরে। তারপর একে একে পাটনা ও কলকাতায়।
উল্লেখ্য, পাঞ্জাব, বিহার, হিমাচলপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে শ্রমিকের কাজে ইরাকে গিয়েছিলেন ওই বাসিন্দারা। ২০১৪-তে ইরাকের মসুলে তাঁদের অপহরণ করে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। মূলত ইরাকের অস্থির পরিস্থিতি দেখে শ্রমিকরা যখন দেশে ফেরার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, তখনই তাঁদের অপহরণ করে আইএস জঙ্গিরা। এদিকে অপহৃত ভারতীয় শ্রমিকদের মধ্যে একজন কোনওরকমে পালিয়ে আসেন। এমনটাই দাবি করেছেন হরজিত মাসিহ। তিনি পাঞ্জাবের গুরদাসপুরের বাসিন্দা। বাকিদের যে নৃশংস মৃত্যু হয়েছে, তারও বর্ণনা দিয়েছেন। যদিও সেই তথ্য বাতিল করে দিয়েছে কেন্দ্র। এনিয়ে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, যতক্ষণ না কোনও বিশ্বস্ত সূত্র মারফত ইরাকে নিখোঁজ ভারতীয়দের খবর আসছে। ততক্ষণ তাঁদের জীবিত হিসেবেই ধরা হবে। এরপর ইরাকি সেনা আইএসকে হটিয়ে মসুল দখল করে নিলে, কেন্দ্রও পদক্ষেপ নেয়। সেদেশে নিখোঁজ ভারতীয়দের খুঁজে বের করতে ইরাকি প্রশাসনের সাহায্য চায় সাউথ ব্লক। এরপরেই ইরাকি সরকারের তরফে জবাব আসে, তিনবছর আগে আইএস জঙ্গিদের হাতে অপহৃত ভারতীয় শ্রমিকরা আদৌ বেঁচে আছে। নাকি মৃত সেই সম্পর্কে তাদের কাছে কোনওরকম তথ্য নেই। এরপরেই নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবারের ডিএনএ টেস্ট করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।