সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নোট বাতিলের প্রথম বছরেই কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের তুমুল সমালোচনা করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং। বলেছিলেন, ‘নোট বাতিল আসলে মনুমেন্টাল ব্লান্ডার।’ প্রায় একই ভাষায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছিলেন, পিএনবি কেলেঙ্কারির চেয়েও বড় দুর্নীতি হয়েছে নোট বাতিলের সময়। আর এবার এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের অন্তর্তদন্তে উঠে এল আরও বিস্ফোরক তথ্য। এখনও দেদার পুরনো বাতিল নোট এক্সচেঞ্জ করা যাচ্ছে। অবশ্যই লুকিয়ে ও বেআইনি কায়দায়। কিন্তু ঘটনা হল, বাতিল নোট পালটে এখনও নতুন নোট পাওয়া যাচ্ছে।
The Quint- একটি ভিডিও প্রকাশ করে এই খবর জানিয়েছে। তাদের দাবি, পুরনো নোট বদলে নতুন নোটের বেআইনি ব্যবসা এখনও রমরমিয়ে চলছে। কীভাবে বদলানো হচ্ছে বাতিল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট? সংবাদমাধ্যমটির সামনে এক দালাল মুখ খুলেছে। তার বয়ান, পুরনো নোটে ১ লক্ষ টাকা দিলে হাতে হাতে পাওয়া যাবে নতুন নোটে ৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ, ৬% নতুন নোট পাওয়া যাবে। ১ হাজার টাকা বা ১% নেবে ওই দালাল। বাকি ৯৩% যাবে প্রভাবশালীদের হাতে যাঁরা এখনও রিজার্ভ ব্যাংকের আইনি ফাঁকফোকর গলে নোট বদলে আনতে সক্ষম। কিন্তু কারা ওই প্রভাবশালীরা, সে বিষয়ে মুখ খোলেনি ওই দালাল। সে এও জানিয়েছে, এই ‘সুবিধা’ পাওয়া যাবে ৩১ মার্চ পর্যন্তই। তার পর এই সুযোগ আর মিলবে না। কিন্তু কেন ৩১ মার্চ, সে কথাও স্পষ্টভাবে জানায়নি ওই ব্যক্তি।
কিন্তু কে নিচ্ছে অত পুরনো বাতিল নোট? সংবাদমাধ্যমের সামনে ওই দালাল জানাচ্ছে, ‘আমি এত গভীরভাবে কিছুই বলতে পারব না। কিন্তু কোনওভাবে ওই টাকা ব্যাংকেই যাচ্ছে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা এভাবে কোটি কোটি টাকা বদলে নিচ্ছেন এখনও। তবে হ্যাঁ, কমিশনটা একটু চড়া।’ ‘টাকা কি হাতেহাতে পাওয়া যাবে?’ উত্তরে ওই দালালের বক্তব্য, ‘আপনি এক হাতে পুরনো নোট দেবেন, আমি আর এক হাতে নতুন নোট দেব আপনাকে। তবে কার কাছ থেকে আমি নোট পালটে আনছি সেটা জানতে চাইবেন না।’ কিছুদিন আগেও এভাবে নোট বদলের জন্য দালালরা মোটা কমিশন পেত, কিন্তু এখন ধরপাকড়ের ভয়ে এই কাজ হচ্ছে খুবই লুকিয়ে চুরিয়ে। প্রশ্ন হল, এই ৯৩% কমিশন যাচ্ছে কার পকেটে? উত্তরে ওই ব্যক্তি জানাচ্ছে, সম্ভবত ওই মোটা অঙ্কের বাতিল নোট এক শ্রেণির ব্যাংকার ও মিডলম্যানরা ভাগ করে নিচ্ছে। আরবিআইয়ের এক প্রাক্তন কর্তা কিন্তু এই আশঙ্কার কথাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তিনি জানাচ্ছেন, ব্যাংকের ট্রেজারির অপব্যবহার হতেই পারে। কারণ, এখনও বাতিল নোট গোনা চলছে। ভিতরেরই কেউ এরকম দুর্নীতিতে যুক্ত থাকতেই পারে।
এখন প্রশ্ন হল, অসাধু ব্যবসায়ীরা যদি বাতিল নোট এখনও বদলে ফেলতেই পারে, তাহলে নোট বাতিল করে কী লাভ হল? একেবারে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষরা এই পদক্ষেপের ফলে যে লাভ পাবেন বলে আশ্বাস মিলেছিল কেন্দ্রের তরফে, আদৌ তা মিলল কি?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.