ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: দক্ষিণ থেকে এটিএম জালিয়াতি এবার ছড়িয়ে পড়লে উত্তরে। এতদিন ধরে যে জালিয়াতি যাদবপুর, চারু মার্কেট, নেতাজিনগর, বড়জোর কড়েয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তা এবার হাত বাড়াল উল্টোডাঙায়। এই অঞ্চলের মিল্ক কলোনি এলাকার এক বাসিন্দা উল্টোডাঙা থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন, এটিএম কার্ড রয়েছে তাঁর কাছে। তিনি কাউকেই জানাননি পিন নম্বর। অথচ তার অ্যাকাউন্ট থেকে খোয়া গিয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এই ঘটনাটি জানাজানির পর এবার আতঙ্কিত উত্তর কলকাতা ও পূর্ব কলকাতার বাসিন্দারাও। তদন্তে জানা গিয়েছে, এপ্রিল থেকেই শহরে ফাঁদ পাততে শুরু করেছিল জালিয়াতরা।
বুধবার নেতাজিনগর থানায় আরও এক ব্যক্তি অভিযোগ জানিয়েছেন যে, এটিএম জালিয়াতি করে তার অ্যাকাউন্ট থেকেও জালিয়াতরা তুলে নিয়েছে মোটা টাকা। এখনও পর্যন্ত নেতাজিনগর থানায় দুটি অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পেরেছে যে, নেতাজিনগরের ওই অভিযোগকারী যাদবপুরের সুলেখায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা তুলেছিলেন। গত এপ্রিল মাসে ওই এটিএম কাউন্টার থেকেই উদ্ধার হয়েছিল স্কিমার। এদিকে যাদবপুর ও চারু মার্কেট থানায় আরও অভিযোগ জমা পড়তে পারে বলে ধারণা পুলিশের। কারণ, এই অঞ্চলের বাসিন্দারা সুলেখা ও টালিগঞ্জ ফাঁড়ির ওই বিশেষ দুটি এটিএম থেকে টাকা তোলেন।
উল্টোডাঙার বাসিন্দা বেসরকারি সংস্থার এক কর্মী পুলিশকে জানিয়েছেন যে, সম্প্রতি তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম কাউন্টার থেকে টাকা তোলেন। তারপরই তাঁর কাছে মেসেজ আসে যে, অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এই অভিযোগটিকে পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। কারণ, কড়েয়া থানায় এক আইনজীবী অভিযোগ জানিয়েছেন যে, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ৭০ হাজার টাকা গায়েব হয়েছে। তিনিও ওই বিশেষ বেসরকারি ব্যাংকের একটি এটিএম থেকে তুলেছিলেন টাকা। পুলিশের প্রশ্ন, তাহলে কি এটিএম জালিয়াতরা স্কিমার লাগিয়েছিল ওই বেসরকারি ব্যাংকের এটিএমএ ও? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পুলিশ এটিএমগুলির সিসিটিভি পরীক্ষা করছে। এ ছাড়াও কড়েয়া ও উল্টোডাঙার ওই দুই বাসিন্দা অন্য এটিএম থেকে টাকা তুলেছিলেন কি না গোয়েন্দারা তাও খতিয়ে দেখছেন। যদিও গোয়েন্দা পুলিশ নিশ্চিত যে, দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর ও চারু মার্কেটের এটিএম-এ সাম্প্রতিককালে স্কিমার বসানো হয়নি। তা বসানো হয়েছিল এপ্রিল মাসেই।
প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কেন এতদিন লাগলো জালিয়াতদের টাকা তুলতে? সাত মাস সময় পেয়েও কেন তারা টাকা তোলেনি? প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, স্কিমার লাগানোর পর অনলাইনে গ্রাহকদের এটিএম কার্ডের তথ্য তারা চুরি করে। এর পর তারা অপেক্ষা করেই বসে ছিল। জালিয়াতরা সম্ভবত ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে সেই তথ্যগুলো বিক্রি করেছিল অন্যদের কাছে। যারা জালিয়াতরা তথ্য কিনেছিল, তারা ওই তথ্যগুলি রেকর্ডারের সাহায্যে ভুয়া তথা ফাঁকা এটিএম কার্ডে তুলে নেয়। এই কাজগুলি সারতেই তাদের এত সময় লেগে যায়। সুযোগ বুঝে নভেম্বর মাসের শেষ থেকে জালিয়াতরা টাকা তুলতে শুরু করে। ইতিমধ্যে দিল্লির এটিএমের সিসিটিভির সূত্র ধরে তিন জালিয়াতের মাস্ক পরা ছবি গোয়েন্দা পুলিশের হাতে এসেছে। গোয়েন্দারা নজরদারি শুরু করেছেন দিল্লির মূলত দুটি এটিএম এর উপর। কিন্তু তা সত্বেও টাকা তুলে নিচ্ছে জালিয়াতরা। সেই ক্ষেত্রে তারা দিল্লির অন্য কোন এটিএম ব্যবহার করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.