সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এ কেমন বিক্ষোভ! বৃহস্পতিবার লজ্জাজনক অধ্যায়ের সাক্ষী থাকল কলকাতা। আলিপুর মাল্টিপারপাস স্কুলে ছাত্রীদের যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষীর স্ত্রী ও দুই কন্যাকে গণপিটুনি দিল উত্তেজিত জনতা। আক্রান্ত রামেশ্বরের স্ত্রী ও তাঁদের দুই মেয়েও। আক্রান্ত ৫২ বছরের মুন্নি বিবি গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন তাঁর মেয়েরা। মা’কে মারের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে দুই মেয়েই প্রবল চোট পেয়েছেন। আহত মুন্নি বিবিকে পুলিশ গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কার্যত রণক্ষেত্র আলিপুর মাল্টিপারপাস স্কুল। অভিযোগ, প্রি-প্রাইমারি সেকশনের কচিকাঁচাদের কোয়ার্টারে নিয়ে গিয়ে আপত্তিজনক আচরন করত স্কুলের নিরাপত্তারক্ষী রামেশ্বর সিং। এই অভিযোগে এদিন সকালে স্কুলেই রামেশ্বরকে গণপিটুনি দেয় অভিভাবকদের একাংশ। পরিস্থিতি সামলাতে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে আসে আলিপুর থানার পুলিশ। রামেশ্বরকে জনতার হাত থেকে ছাড়িয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও অভিযুক্ত বারবারই নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে এসেছে। রামেশ্বর দোষী কি না, সেটা পুলিশ ও আদালতের দেখার বিষয়। কিন্তু রামেশ্বরকে পুলিশ ভ্যানে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরই রামেশ্বরের স্ত্রীকে টার্গেট করে অভিভাবকদের একাংশ।
[কামারশালার হাপর টেনেই সংসারের খিদে মেটান মঙ্গলা]
রামেশ্বরের আবাসনে ঢুকে তার স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করে উত্তেজিত জনতা। মারের চোটে জ্ঞান হারান মুন্নি বিবি। মেয়েরা ছুটে এসে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও কিল-চড় উড়ে আসে তাঁদের লক্ষ্য করেও। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন নারী আন্দোলনকর্মীরা। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, ‘আইন হাতে তুলে নিয়ে অভিভাবকদের এই তাণ্ডব বস্তুত শিশুদেরই আতঙ্কিত করবে। বাবা-মায়ের আচরণে ভয় পাবে শিশুরাই। এমনটা কাম্য নয়।’ এখন ঘটনা হল, রামেশ্বর এই কাণ্ডে অভিযুক্ত মাত্র। তার বিরুদ্ধে দোষ এখনও প্রমাণিত হয়নি। যদি সে দোষ করেও থাকে, তাহলেও তার স্ত্রী বা কন্যার ওই অপরাধের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। তাহলে কেন একজন হৃদরোগীকে মেরে অজ্ঞান করে দিলেন অভিভাবকরা। বাবার অপরাধের শাস্তি কি মেয়েদের দেওয়া যায়? পুলিশ পরে ঘটনাস্থলে এসে আহতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
অভিযোগ, রামেশ্বর নাকি লজেন্সের লোভ দেখিয়ে স্টাফ কোয়ার্টারে নিয়ে গিয়ে ছাত্রীদের গায়ে হাত দিত। এক অভিভাবকের অভিযোগ, মুখের জল ছাত্রীদের গায়ে ফেলে দিত সে। এক অভিভাবক প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আজকাল কেন কেউ বাচ্চাদের লজেন্স দেয় বলুন তো? আমরা কি কিছু বুঝি না? রামেশ্বরকে স্কুল থেকে তাড়াতে হবে।’ স্কুলের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পড়ুয়াদের মা-বাবারা। তাঁদের দাবি, স্কুলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। স্টাফ কোয়ার্টার থেকে যখন খুশি স্কুলে ঢোকা যায়। ৫ থেকে ১০ বছরের ছাত্রীরা রামেশ্বরের লালসার শিকার হত বলে সোচ্চার হয়েছেন অভিভাবকরা। সম্প্রতি কয়েকজন শিশু বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের এ কথা জানালে আজ সকাল থেকে কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে স্কুল চত্বর। তবে এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানা যায়নি।