কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে সেদিন বাড়ি থেকে যখন বেরিয়েছিল তখনও সব ঠিকঠাক। কিন্তু মাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পরেই পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছিল নিউটাউনের শুলংগুড়ির মিতালি হালদারের। ওই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার বাড়ি পুড়ে ছাই!
অদম্য জেদ নিয়ে তার মধ্যেও পরীক্ষা চালিয়ে যায় ওই কিশোরী। বুধবার তার মাধ্যমিকের ফল বেরিয়েছে। দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেছে সে। পাড়ার মেয়ের এই কৃতিত্ব অসামান্য ঠেকছে পড়শিদের কাছে। বাইরের যাঁরা এই ঘটনাটি জানেন তাঁরাও কুর্নিশ জানাচ্ছেন মেয়েটিকে। যদিও মেয়েটি নিজে তার এই নম্বরে খুশি নয়। জানিয়েছে, আরও অনেক বেশি নম্বর পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল।
মাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে জগৎপুর আদর্শ বিদ্যামন্দির স্কুলের পড়ুয়া মিতালি জানতে পেরেছিল, তার ঘর পুড়ে গিয়েছে। বাড়ি ফিরে আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে সে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছিল বই-খাতা৷ কিন্তু, যা হওয়ার তাই ঘটল৷ আগুনের গ্রাসের হাত থেকে রক্ষ করা যায়নি কিছুই৷ পরে মিলেছে শুধুই ছাই৷ এতবড় বিপর্যয় মাথায় নিয়ে পরদিন ইংরাজি পরীক্ষার জন্য তৈরি হয়েছিল সে৷ মিতালির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রতিবেশীরা এবং প্রশাসন। মেয়েটিকে বই-খাতা জোগানোর পাশাপাশি, আশ্রয়েরও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। সেই অবস্থায় পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেছে মিতালি।
মেয়েটির বাড়ি এখনও আধপোড়া অবস্থাতেই রয়েছে। শুলংগুড়ি দক্ষিণপাড়ায় একটি ছোট ঘর ভাড়া নিয়েছেন তার মা দেবী হালদার। তিনি পরিচারিকার কাজ করেন। বাবা জীবনবাবু দিনমজুর। আগুনে বাড়ি পুড়ে যাওয়ার পর স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিল বলে জানিয়েছে মেয়েটির পরিবার। সে টাকা খাবার কিনতে গিয়ে শেষ হয়ে গিয়েছে। কিশোরী মেয়েটির এখন চিন্তা, স্কুলে ভর্তি হওয়ার টাকা জোগাড় হবে কী ভাবে? কীভাবেই বা কেনা যাবে বইপত্র?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.