Advertisement
Advertisement

দেবীপক্ষের হাত ধরেই রাজ্যে শীতের পদধ্বনি, নামছে তাপমাত্রার পারদ

শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা একধাক্কায় স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি নিচে।

Bengal to witness mercury dip following Durga Puja
Published by: Sayani Sen
  • Posted:October 18, 2018 8:32 am
  • Updated:October 18, 2018 8:32 am

রিংকি দাস ভট্টাচার্য: হঠাৎ মেঘ ফুঁড়ে ফর্সা আলো এসে পড়েছে শহরে। খামোকা মন ভাল করে দিচ্ছে সকালের রোদ্দুর। রাত বাড়লেই কোনও অচিহিত প্রপাত থেকে বারান্দার আলসেতে টুপটাপ ঝরছে হিম।  শীতবুড়ি যেন খুশির জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ছে ঘরের ভিতর, খসখসে চাদরটা টেনে দিচ্ছে গায়ে। আকাশ যেন কালো মেয়েটার মতো, তার সারা গায়ে তারার মতো ভালবাসার উজ্জ্বল চিহ্ন। অষ্টমীর সকাল থেকেই সেই রোদ ঝলমলে আকাশ জানান দিচ্ছে, বাঙালির সেরা উৎসবের হাত ধরে দরজায় কড়া নাড়ছে শীত।পুজোর শহরে শীতের এমন আমেজ শেষ কবে পাওয়া গিয়েছে, তা অবশ্য মনে করতে পারছেন না হাওয়া অফিসের কর্তারা। আবহাওয়াবিদদের কথায়, জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমায় আগামী কয়েকদিনেই দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা আরও নামার সম্ভাবনা।

[শিয়রে লোকসভা নির্বাচন, পুজোয় জনসংযোগে নেতা-নেত্রীরা]

এদিকে বুধবার সকাল থেকে অনুভূত হয়েছে উত্তুরে হাওয়ার দাপট। জলেও যেন হালকা শিহরন। শহরতলিতে রীতিমতো হালকা শীত পোশাক পরে সকালে অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে বেরতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। শহরবাসীকেও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা আলমারি থেকে শীতের পোশাক নামানোর পরামর্শ দিতে শুরু করেছেন। কেন না, বুধবার সকালে মহানগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তিন ডিগ্রি নেমে পৌঁছেছিল ২২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আসলে শীত নির্ভর করে উত্তুরে হাওয়ার উপর। উত্তুরে হাওয়ার গতি যত বাড়বে রাজ্যে শীতের দাপটও তত বাড়বে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্তের জন্য গোসাঘরে খিল দেয় উত্তুরে হাওয়া। সমুদ্র থেকে গরম হাওয়া ঢুকে পড়ে স্থলভাগে। ফলে উত্তাপ বাড়তে থাকে। আবহাওয়াবিদদের মতে, অক্টোবর মাস বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম। এই সময় সেখানে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেই রাজ্যে ঢুকতে শুরু করে গরম জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস। কয়েক বছর আগে ঠান্ডার রথে রাশ টেনেছিল অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আন্দামান সাগরে তৈরি দু’টি ঘূর্ণিঝড় ‘হেলেন’ এবং ‘লহর’৷ চলতি বছরও বঙ্গোপসাগরে তৈরি ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ পুজোর শহরকে ভিজিয়ে গিয়েছে। এবারও কি সেরকম কিছু ঘটতে চলেছে? আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, বর্ষা বিদায় নিতেই আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। তার জেরে রাতে ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক বেশি তাপ বিকিরিত হতে পারে। সেই বেশি তাপ বিকিরণের ফলেই রাতের তাপমাত্রা দ্রুত হারে কমতে থাকে। শীত পড়ার জন্য এই তাপ বিকিরণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নিম্নচাপের প্রভাব পরিমণ্ডলে থাকলে সেই প্রক্রিয়াতে বাধা পড়ে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে উপরে উঠে যায়। তাঁদের কথায়, আকাশে মেঘ থাকলে দিনের তাপমাত্রা বাড়ে না। ফলে দিন-রাতের তাপমাত্রার ফারাক সেভাবে হয় না। শীত পড়ার ক্ষেত্রে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ফারাকটা বেশি হওয়া প্রয়োজন।

Advertisement

[ক্যাটারিং সংস্থাকে অগ্রিম দিয়েও ভোগ এল না শহরের বহু আবাসনে!]

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বর্ষা বিদায় নিয়েছে, জলীয় বাষ্পের ভাণ্ডার ফুরিয়েছে বাতাসে। বাকি ছড়িয়ে থাকা জলীয় বাষ্পও ‘তিতলি’ নিয়ে পাড়ি দিয়েছে ওপার বাংলায়। আর সে জায়গা নিতে কিছুটা ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে পড়ছে উৎসবের বঙ্গে।  তাই শীত, থুড়ি শীতের আবেশ। কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রে কমে ২২-এর ঘরে। গোটা রাজ্যেই তাপমাত্রার নিম্নগতি। যে ঝিন্টি ভেবেছিল, হাতকাটা টপ পরে ভেবলে দেবে পিকলুকে, সে খুঁজছে ফুলহাতা ব্রোকেট-ব্লাউজ। পিকলু ফন্দি এঁটেছিল, অষ্টমীর বিকেলে হাফপ্যান্টে চমক দেবে ফার্স্ট ইয়ারের সহপাঠিনীকে। সে বাজারে গিয়ে খুঁজছে কর্ডের প্যান্ট। এতে কি উষ্ণতায় খাদ পড়ছে? পড়ুক, তাতে পরোয়া করছে না ওরা। কাকু বলছেন, ফুলশার্ট চাই৷  মা বলছেন, কোথায় গেল আমার রংদার পাতলা চাদরটা?  তবে, এটা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। পুরোটাই প্রকৃতির নিয়ম। ফলে ধরে নিতে পারেন, আলোর উৎসব থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো বা রাসযাত্রা-এ সবই ২০১৮-য় রম্য হয়ে উঠবে প্রকৃতির কৃতীতে। দার্জিলিং বা সিকিমের পাহাড়ে যাঁরা বেড়াতে যাবেন বলে আগেই হোটেলের খাতায় নাম লিখিয়েছেন, তাঁদের পোয়াবারো।
প্রশ্ন, কবে নতুন ইনিংস শুরু করবে শীত? আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, নতুন করে কোনও নিম্নচাপ না তৈরি হলে এবার আস্তে আস্তে নামতে শুরু করবে পারদ। যদিও এদিন সকালে উত্তরবঙ্গের পারদ স্বাভাবিকের থেকে বেশ খানিকটা নিচে নেমেছে। দক্ষিণবঙ্গে পারদ না নামলেও শীত দরজায় কড়া নাড়ছে বলেই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ