সুব্রত বিশ্বাস: রাত পোহালেই সরস্বতী পুজো। বাংলার বহুদিনের রেওয়াজ মেনে আকাশ রাঙাবে পেটকাটি, চাঁদিয়াল, ময়ূরপঙ্খী, ঘড়িয়াল। রবিবার ছুটির বাজারে তাই ভিড় জমেছে শহরের নামকরা ঘুড়ির বাজারে। এন্টালি, মৌলালি, লেবুতলায় ঘুড়ির দোকানে অল্পবয়সিদের জমায়েত। চলছে ঘুড়ি-মাঞ্জা বিকিকিনি।
ঘুড়ির গায়েও আজ লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। সরস্বতী পুজোয় ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন বেশ পুরনো। রাজ্যের বহু জায়গাতেই এই রীতি এখনও পালিত হয়। একটা সময় ছিল, যখন ভাঙা টিউবলাইট, শিশি, কাঁচের বোতল ভেঙে, গুঁড়িয়ে, জড়ো করে সাবু, অ্যারারুটে ফুটিয়ে আঠা সহযোগে লেই তৈরি করা হত। তার সঙ্গে কাচের গুঁড়ো মিশিয়ে ঘরোয়া উপায়ে তৈরি হত মাঞ্জা।
রাত জেগে চলত এই মাঞ্জা দেওয়া। যদিও হাতে তৈরি মাঞ্জার পাট চুকেবুকে গিয়েছে অনেকদিন হল। পয়সা ফেললেই হাতে চলে আসছে লাটাই-সহ নানা রঙের মাঞ্জা। বিদেশ থেকে, বিশেষত চিন থেকে এসেছে নাইলন সুতো। তারই রমরমা বাজার। বিভিন্ন দাম ও নামে চিনা মাঞ্জা বিক্রি হচ্ছে লেবুতলা, এন্টালি মার্কেটে। হাজার মিটার সুতো বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। মাঞ্জার দাম শুরু হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে, মোটা মাঞ্জা ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। একই রিলে নানান রঙের সুতো বিক্রি হচ্ছে রাজা-রানি সুতো বলে। তার দাম ১৫০-২০০ টাকা।
ঘুড়ির নাম না বদলালেও সাইজ অনুযায়ী ঘুড়ির পরিচিতি বদলেছে। ‘একতে’, ‘দোতে’ বলে আর কেউ ডাকে না তাদের। বড় ঘুড়ির নাম ‘অদ্যা’, দাম ১২ টাকা। মাঝারি মাপের ঘুড়ির দাম ৭ টাকা। চওড়া ঘুড়ির নাম ‘চিল’, দাম ৬ টাকা। সাধারণ ঘুড়ির নাম গোলকাঠি, দাম ৪ টাকা। লাটাইয়ের দাম মোটামুটি ১০০ থেকে ৪০০ টাকা। এখন অবশ্য ঘুড়ি ওড়ানোর রীতিতে ভাটা এসেছে। বাগদেবীকে আরাধনার দিন সকাল থেকেই পাড়ার সব বাড়ির ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো দেখতে পাবেন, ভাবলে কিন্তু হতাশ হবেন। পাশের বাড়ির ছাদ থেকে ‘ভোকাট্টা’ আওয়াজও শোনা যাবে না হয়তো। কিন্তু কোনও কোনও পরিবার এখনও এই রীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। সোমবার যখন সরস্বতী পুজোয় মেতে উঠবে রাজ্য, তখন কোথাও না কোথাও ঠিকই লড়াই লেগে যাবে পেটকাটি-চাঁদিয়ালে। বিচ্ছুরিত হবে হাজার হাজার রঙিন বিন্দু। সে এক অপূর্ব দৃশ্য হবে বটে!
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.