অর্ণব আইচ: আর তো দেখা হবে না। এ দেখাই শেষ দেখা। শেষবার কি একান্তে খানিকটা সময় কাটানো যায়? প্রেমিকের এমন আব্দার শুনে না করতে পারেননি তরুণী। পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রিন্সেপ ঘাটে। বিচ্ছেদের আগে শেষবার মুখোমখি দু’দণ্ড বসিবার অবসর। কিন্তু কে জানত কপালে অপেক্ষা করছে খুরের কোপ! বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় প্রেমিকার দু’গালে খুরের কোপ দিয়েই চম্পট দিল যুবক। পরে অবশ্য তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
[ দুর্ঘটনা নয়, রেলের জল খেয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বেশি মানুষ! ]
সম্প্রতি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে প্রিন্সেপ ঘাট চত্বরে। এমনিতেই এই এলাকায় কপোত-কপোতিদের আনাগোনা। ক্ষণে ক্ষণে মান-অভিমানের পালা চলে। এই ভাব তো এই আড়ি, যেন গঙ্গার ঢেউয়ের সঙ্গেই বয়ে বয়ে যায়। আচমকাই সেখানে এক রক্তাক্ত তরুণীকে দেখে আঁতকে ওঠেন সকলে। দু-গাল ভেসে যাচ্ছে রক্তে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তরুণী। তখনই খবর দেওয়া পুলিশে। তরুণীকে উদ্ধার করে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। পরে তাঁর থেকেই পুরো ঘটনা জানাতে পারে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, তরুণীর বাড়ি বউবাজার এলাকায়। যুবক জোড়াসাঁকো অঞ্চলের বাসিন্দা। বেশ কিছুদিন আগে তাঁদের আলাপ। সম্ভবত সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই তাঁদের পরিচয়ের সূত্রপাত। যুবককে একটি বিশেষ নামেই জানতেন ওই তরুণী। আলাপ ক্রমে প্রেমের পরিণতি পায়। প্রেম যখন জমাট, তখনই যুবকের আসল পরিচয় জানতে পারেন ওই যুবতী। প্রথমত, যুবকটি কাঠ বেকার। কোনওরকম কর্মসংস্থান নেই। দ্বিতীয় বাধা হয়ে এসে দাঁড়ায় ধর্ম। প্রথমে যুবককে যে নামে চিনত যুবতী তাতে তার ধর্মের আঁচ মেলেনি। ফলে মেলামেশায় কোনও সংশয় ছিল না। কিন্তু আসল নাম ও ধর্ম জানার পরই ভয়ে ভয়ে ছিলেন যুবতী। প্রেমিককে তিনি জানান, এ সম্পর্ক তাঁর পরিবার কোনওভাবেই মেনে নেবে না। উপরন্তু যুবক বেকার। সুতরাং বাড়ির লোককে বোঝানোর মতোও তাঁর হাতে কিছু নেই। এই পরিস্থিতিতে সম্পর্ক ছিন্ন করারই সিদ্ধান্ত নেন তরুণী। সে কথা প্রেমিককে জানিয়েও দেন। প্রথমে অবশ্য তাতে বিন্দুমাত্র রাজি ছিলেন না প্রেমিক। কিন্তু নাছোড় প্রেমিককে সময় নিয়ে বোঝান তরুণী। যে সম্পর্কের কোনও পরিণতি নেই তা টেনে নিয়ে কী লাভ! প্রেমিকার যুক্তিতে শেষমেশ এই বিচ্ছেদ মেনেও নেয় যুবক।
[ মেট্রোয় যুগল হেনস্তা, দোষীদের বিরুদ্ধে এফআইআরের দাবিতে বিক্ষোভ দমদম স্টেশনে ]
তবে যুবকের ইচ্ছে ছিল, শেষবার অন্তত একান্তে খানিকটা সময় কাটাবে তারা। প্রেমিকাকে সে আব্দারের কথা জানায়। বলে, আর তো কখনও দেখা হয়তো হবে না, একবার যেন প্রিন্সেপ ঘাটে তরুণী দেখা করেন। প্রেমিকের শেষ আব্দার রাখতে যথাস্থানে পৌঁছান তরুণী। আবেগঘন পরিস্থিতির চরম পরিণতি যে কী হতে পারে তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তিনি। যুবক জানতে চায়, কোনওভাবেই কি এ সম্পর্ক আর জোড়া লাগবে না? নিরূপায় তরুণী জানিয়ে দেন, তাঁর আর কিছু করার নেই। যুবকের প্রশ্ন, এটাই কি তাঁর শেষ সিদ্ধান্ত? তরুণী আবারও জানিয়ে দেন, এই সম্পর্কের কোনও সঠিক পরিণতি নেই, সুতরাং দু’জনের ভালর জন্যই তা শেষ করে দেওয়া বাঞ্ছনীয়। এ কথা জানানোর পরই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে যুবকটি। সোজা পকেট থেকে খুর জাতীয় ধারাল অস্ত্র বের করে চালিয়ে দেন যুবতীর গালে। তরুণীকে খুন করার পরিকল্পনা ছিল কিনা, তা স্পষ্ট নয়। রক্তাক্ত প্রেমিকা মাটিতে পড়ে ছটফট করছে দেখে এলাকা ছেড়ে পালায় সে।
তরুণীর বয়ানের ভিত্তিতে যুবকের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। বিভিন্ন সূত্রে তল্লাশি চালিয়ে জানা যায়, রাজাবাজার এলাকায় গা-ঢাকা দিয়েছে প্রেমিকপ্রবর। তারপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.