সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইমাম আলি মোল্লা। ফেসবুকের দৌলতে কেউ কেউ তাঁর নাম জানেন। বন্ধুবৃত্তের বাইরে থাকা অনেকে আবার তাঁকে চেনেনও না। কিন্তু শহরের এ যুবকের নাম বোধহয় সকলেরই জানা উচিত। বুধবার আর্তের প্রাণ বাঁচাতে রোজা ভেঙে রক্ত দিলেন তিনি।
রমজান মাসের মাঝামাঝি। এ সময় রোজা রাখেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। ইমামও তার ব্যতিক্রম নন। এদিকে ফেসবুকেই অসুস্থ শ্রীজিতা মণ্ডলের জন্য রক্ত চেয়ে আবেদন করেন অনুপম ভট্টাচার্য। পেশায় তিনি সরকারি কর্মচারী। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি জানান, টাটা মেডিক্যাল সেন্টারে ভরতি রয়েছেন বছর তেরোর ওই কিশোরী। তার বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে। মেয়েটির বাবা শ্রী শরৎ মণ্ডল এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের চেষ্টায় এতদিন ডোনার জোগাড় হচ্ছিল। কিন্তু আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না। O Positive Single Donor Platelets (SDP) না হলে মেয়েটির জীবন সংশয় হয়ে যাবে। অনুপমবাবুর আরজি ছিল, বন্ধুবৃত্তের মানুষকে এগিয়ে আসার জন্য। একান্তই রক্ত দিতে না পারলেও বার্তাটি যেন ছড়িয়ে দেওয়া হয়।হাতে সময় বেশি ছিল না। অল্প সময়ে ডোনার জোগাড় হবে কি না, তা নিয়ে খানিকটা চিন্তাও ছিল। সেই পোস্ট দেখেই এগিয়ে আসেন ইমাম। তাঁর বাড়ির আখড়ায়। মেটিয়াবুরুজে ব্যবসার কাজে আসেন তিনি। রমজান চলছে, তাও অনুপমবাবুর পোস্ট দেখার পর কিশোরীর প্রাণ বাঁচাতে রোজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বুধবার টাটা মেডিক্যাল সেন্টারে গিয়ে রক্ত দিয়েও আসেন।
[ নিপায় আক্রান্ত বলেই সন্দেহ, আলিপুরের হাসপাতালে মৃত্যু জওয়ানের ]
রক্তের অভাবে যাতে কারও প্রাণ সংশয় না হয় সে কারণে সমবেত প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা হয়েছে ‘কোয়েস্ট ফর লাইফ’ বলে একটি সংগঠন। সেখানে একাধিক যুবক রক্তদানের জন্য উদগ্রীব। ইমামের মতোই আছেন সাহেবুল, শাহজাদা, বাদশারা। যে কোনও পরিস্থিতিতে রক্ত দিতে তৈরি তাঁরা। শ্রীজিতার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টটি প্রকাশ্যে আসা মাত্র ইমামই প্রথম যোগাযোগ করেন। রক্ত দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু উপবাসরত অবস্থায় রক্ত দিলে তাঁর নিজের সমস্যা হতে পারে। উপরন্তু চিকিৎসকরাও রক্ত নেবেন না। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রক্তদানকে অগ্রাধিকার দিয়ে রোজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন ইমাম।
ইমামের বন্ধুরা জানাচ্ছেন, এই সোশ্যাল মিডিয়াতেই ইমামকে এক সময় নানা হেনস্তার মুখে পড়তে হয়েছে। কেউ কেউ তাঁকে ‘জিহাদি’ বলে অপমান করতেও ছাড়েননি। সেই ইমাম আজ শহরকে দেখিয়ে দিয়েছে, এ কলকাতার ভিতর আছে আরেকটা কলকাতা। যে কলকাতা ধর্মীয় বিভেদকে পাত্তা দেয় না। সবার আগে স্থান দেয় মানবিকতাকে। ইমামের এই সিদ্ধান্তে খুশি অনুপমবাবুও। সংগঠনের তরফে তিনি জানাচ্ছেন, “অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত আজ। আমার নিজের কোনও ভাই নেই। কিন্তু এমন একজন আজ কলকাতার মুখ উজ্জ্বল করল, যে আমাকে দাদা বলে ডাকে। এর থেকে গর্বের কথা আর কী হতে পারে! এই সংগঠন তৈরিই হয়েছে সমস্ত ভেদাভেদের উর্ধ্বে উঠে। এখানে কোনও ব্যক্তি প্রধান নয়। কোনও রাজনীতি নয়। সকলের পাশে যে আমারা সবাই আছি, মানুষ হয়ে, সেটুকুই শুধু তুলে ধরার প্রয়াস।”
[ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর, চলতি বছরেই বাড়তে পারে বেতন ]
আক্ষরিক অর্থেই ইমাম আজ তাই-ই করেছেন। এর আগে দেশের অন্তত দু’টি জায়গায় রোজা ভেঙে রক্ত দেওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। পিছিয়ে নেই কলকাতাও। আর কিছুদিন আগেই নানা কারণে সংবাদের শিরোনামে এসেছে মেটিয়াবুরুজ। বাধ্য হয়ে কলকাতা পুলিশকেও বিবৃতি জারি করতে হয়েছিল বিশেষ একটি ঘটনায়। আজ সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, গোটা শহর জানুক, অন্য কিছু নয়, এই ইমামরাই আসলে মেটিয়াবুরুজের সত্যিকার মুখ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.