অর্ণব আইচ: হলের ভিতর কত লোক? কোন সময় কতজন প্রবেশ করছে বা বের হচ্ছে? অতিরিক্ত দর্শক কি প্রবেশ করছে হল বা অডিটরিয়ামে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে এবার অত্যাধুনিক ‘মাথা গোনার যন্ত্র’ চালু করছে কলকাতা পুলিশ। যন্ত্রের মহড়া শুরু করেছে লালবাজার। দর্শকদের সংখ্যা গোনার সঙ্গে সন্দেহজনক কোনও ব্যক্তি প্রবেশ করেছে কি না, তারও বৈদ্যুতিন রেকর্ড রাখবে এই অত্যাধুনিক যন্ত্র।
গত বছরের ৩১ মে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মৃত্যু হয়েছিল গায়ক কেকে-র। নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান করার পর হোটেলে ফিরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। তখনই অভিযোগ উঠেছিল, গায়ক কেকে অসুস্থ হওয়ার একটি কারণ দর্শকদের ভিড়। সেদিন দক্ষিণ কলকাতার লেক এলাকার নজরুল মঞ্চে দর্শকের সংখ্যা অতিরিক্ত ছিল। এই অভিযোগ ওঠার পর কলকাতা পুলিশ সতর্ক হয়। এর পর থেকে কলকাতার কোনও অডিটোরিয়াম বা হলে আসনের অতিরিক্ত সংখ্যক টিকিট বা কার্ড বিক্রি বা বিলি করা হচ্ছে কি না, সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে শুরু করে পুলিশ। একই সঙ্গে লালবাজারের কর্তারা আরও এক ধাপ এগিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে দর্শকসংখ্যার উপর নজরদারির সিদ্ধান্ত নেন। অর্থাৎ কলকাতার কোনও হল বা অডিটোরিয়ামে যাতে অতিরিক্ত সংখ্যক দর্শক প্রবেশ না করতে পারেন, তার জন্য হলের ভিতর মাথা গোনার যন্ত্র নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। তার জন্য কলকাতা পুলিশ ৬ লাখ টাকা খরচও করেছে। গায়ক কেকে-র মৃত্যুর এক বছরের মধ্যেই যন্ত্রের কাজ সম্পূর্ণরূপে শুরু করে দিতে চায় লালবাজার।
[আরও পড়ুন: ‘শিরদাঁড়া নুইয়ে পড়েছে.. বেটি বাঁচাও বেটি ঠ্যাঙাও’, মোদিকে খোঁচা দিয়ে ঋদ্ধির কবিতা]
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েকদিন আগে থেকেই ‘পিপল কাউন্টিং অ্যান্ড অকুপেন্সি মনিটরিং সিস্টেম’ বা মানুষের মাথা গোনার যন্ত্রের মহড়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্য়েই সায়েন্স সিটি-সহ কয়েকটি অডিটোরিয়ামে এই যন্ত্রের মহড়া হয়েছে। এমনকী, সপ্তাহের শেষে লালবাজারেও হয়েছে এই যন্ত্রের মহড়া। ওই মহড়ার অংশ হিসাবে হল বা অডিটোরিয়ামের মূল গেটগুলির উপর রাখা হচ্ছে বিশেষ উন্নতমানের ক্যামেরা। সেগুলির সঙ্গে সংযোগ রাখা হচ্ছে কম্পিউটারের। হলের এক প্রান্তে বসে কম্পিউটারের সফটওয়্যারের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে নজরদারি। একটি ৩২ ইঞ্চির এলইডি ‘স্মার্ট অ্যান্ড্রয়েড ডিসপ্লে ইউনিট’ বা আধুনিক মনিটরে থাকছে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকদের নজর। ওই গেটগুলি দিয়ে কোন সময়ে কতজন প্রবেশ করছেন, তাঁদের মাথা গুনে কম্পিউটারকে জানিয়ে দিচ্ছে ক্যামেরা। আবার একইভাবে কতজন কোন সময় বের হচ্ছেন, তা-ও মুহূর্তের মধে্য জেনে যাচ্ছেন পুলিশ আধিকারিকরা। সেইমতো গণনা করে কম্পিউটারই পুলিশকে জানিয়ে দিচ্ছে, কোন সময়ে কতজন দর্শক ভিতরে রয়েছেন। আগাম পুলিশকে ওই বিশেষ হল বা অডিটোরিয়ামের মোট দর্শকের আসন জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই তথ্য সফটওয়্যারকে জানিয়ে দেওয়ার ফলে পুলিশকর্মীরা জেনে যাচ্ছেন, অতিরিক্ত সংখ্যক দর্শক ভিতরে রয়েছেন কি না।