রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: ওভারড্রাফট-কাণ্ডের জেরে বঙ্গ নেতাদের অস্বস্তি আরও বাড়তে চলেছে। ব্যাংকের ওভারড্রাফট নেওয়ার সুবিধাকে ব্যবহার করে কোটি-কোটি টাকা কোথায় খরচ হয়েছে, তা নিয়ে জেলার নেতাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বকে। একাধিক জেলায় পার্টি অফিস-সহ গাড়ির খরচ সময়মতো রাজ্য দপ্তর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। জেলা পার্টির জন্য খরচে লাগাম টানা হয়েছে। তাহলে এত অর্থ কোথায় ব্যয় হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের মধ্যেই।
জেলাকে ব্রাত্য রেখে রাজ্যের শীর্ষ পদাধিকারীদের থাকার ফ্ল্যাট থেকে গাড়ি ভাড়া বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ মাসে। তারউপর সল্টলেকে নয়া কার্যালয়ের মাসিক খরচ ৯ লক্ষ টাকা। দলের একাংশ ও জেলা নেতাদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কর্পোরেট ধাঁচে নয়া পার্টি অফিস আর রাজ্যের কয়েকজন শীর্ষ নেতার থাকা আর গাড়ি ভাড়ার খরচ সামলাতেই কি ব্যাংককে ওভারড্রাফট? ওভারড্রাফট-কাণ্ডের জেরে, বিজেপির আর্থিক বিষয় খতিয়ে দেখতে দলের কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম আসার কথা। কারণ, গোটা বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতারাও। এমনই খবর গেরুয়া শিবির সূত্রে। ওভারড্রাফট-কাণ্ডের জেরে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিয়ে বঙ্গ বিজেপির বিড়ম্বনা বাড়বে বইকি কমবে না।
[আরও পড়ুন: ‘বোমা মেরে মঞ্চ উড়িয়ে দেব’, ধর্মতলায় ডিএ অনশনমঞ্চে হুমকি পোস্টার!]
বিজেপি সূত্রে খবর, একুশের বিধানসভা ভোটের পর বঙ্গ বিজেপির খরচের বহর অনেক বেড়ে গিয়েছে। বৈদিক ভিলেজে চিন্তন শিবির, দুর্গাপুরে বিলাসবহুল হোটেল ভাড়া করে রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠক। কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া, মাসিক বাকি খরচ নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। যেমন, ১) মাঝেমধ্যেই পাঁচতারা হোটেল বৈঠক। ২) সেক্টর ফাইভে নয়া কর্পোরেট অফিসের জন্য মাসে ৯ লক্ষ টাকা ভাড়া। ৩) বাইপাসের ধারে রাজ্যের কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও পর্যবেক্ষকদের থাকার জন্য ফ্ল্যাট। যেখানে মাসে লক্ষাধিক ভাড়া। ৪) রাজ্য সাধারণ সম্পাদকদের জন্য গাড়ি, ড্রাইভার ও তেলের খরচ মিলিয়ে মাসে অন্তত আড়াই লক্ষ টাকা খরচ। মাসে লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে এসব কারণেই।
দলের আদি নেতাদের কথায়, ২০১৯ সালে দলের মুরলীধর সেন লেনের পার্টি অফিস থেকেই সংগঠনের কাজ হত। বাংলায় লোকসভায় ১৮টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। আর প্রাপ্ত ভোট যখন একুশের পর একের পর এক নির্বাচনে কমছে। আবার তৃতীয় স্থানে চলে যাচ্ছে বিজেপি। তখন লক্ষ-কোটি টাকা খরচ হচ্ছে বিলাসবহুল হোটেলে বৈঠক আর গাড়ি-ফ্ল্যাটের পিছনে। তখন জেলা নেতারা পার্টির সংগঠন চালানোর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ রাজ্য থেকে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলছেন। দলের অসহায়-আক্রান্ত কর্মীরা আর্থিক সাহায্য পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তখন ব্যাংকের এই ওভারড্রাফটের বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা গেরুয়া শিবিরেই। রাষ্ট্রায়ত্ত পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের (পিএনবি) ওই শাখা থেকে ইতিমধ্যেই টাকা তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ৫০ কোটি টাকারও বেশি ওভারড্রাফট নেওয়ার সুবিধাযুক্ত ওই ‘কারেন্ট অ্যাকাউন্ট’ থেকে নেওয়া ঋণের বিশদ তথ্য তলব করে এবার ব্যাংকের তরফে রীতিমতো কড়া নোটিসও পাঠানো হয়েছে।
[আরও পড়ুন: আহমেদাবাদ টেস্ট শেষ হওয়ার আগেই স্বস্তি, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠে গেল ভারত]
দলের দক্ষিণ কলকাতা জেলার সভাপতিকে চিঠি পাঠিয়েছে ব্যাংক। ব্যাংকে তরফে পাঠানো সেই চিঠি বা নোটিশে বিজেপির ওই কারেন্ট অ্যাকাউন্টের (নং-০০৮৫০০২১০০০২২৮৯৩) প্রসঙ্গ তুলে বলা হয়েছে, অ্যাকাউন্টটি থেকে ৫০ কোটি টাকারও বেশি ওভারড্রাফট নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংকের রীতিমতো স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, লেনদেনের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাংকের নির্দেশিকা লঙ্ঘন ধরা পড়লে প্রয়োজনে ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধও করে দেওয়া হতে পারে। ৫০ কোটি টাকার বেশি ক্রেডিটের সুবিধা নেওয়া হয়েছে বলেও স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। বিজেপি সূত্রে খবর, শুধু দক্ষিণ কলকাতা জেলাই নয় দলের আরও কয়েকটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতির কাছেও এই চিঠি গিয়েছে। যে যে জেলা সভাপতি ব্যাংকের চিঠি পেয়েছে তারা রাজ্য নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছে। তাদের কথায়, এই সমস্যার সমাধান রাজ্য নেতারাই করবেন। যদিও, ব্যাংকের এই চিঠির বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন রাজ্য নেতৃত্ব। এখন দেখার এই ৫০ কোটি ওভার ড্রাফটের হিসাব নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে কি জবাব দেন বিজেপির বঙ্গ শাখা। পাশাপাশি আগামীদিনে বিষয়টি নিয়ে জেলা নেতাদের প্রশ্ন ও ক্ষোভের মুখেও পড়তে হতে পারে রাজ্য বিজেপির পদাধিকারীদের।