BREAKING NEWS

২৬ জ্যৈষ্ঠ  ১৪৩০  শনিবার ১০ জুন ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

পাঁচিল টপকে কীভাবে পাচার হত আগ্নেয়াস্ত্র, ইছাপুরে গোয়েন্দাদের দেখাবে ধৃতরা

Published by: Sangbad Pratidin Digital |    Posted: May 8, 2018 8:49 am|    Updated: May 8, 2018 8:49 am

Sleuths to recreate crime scene at Ishapore Gun Factory

অর্ণব আইচ: সামনে দেখলে মনে হত নেহাতই চুরি। কারখানার বাতিল যন্ত্রাংশ পাঁচিল টপকে এসে নিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে যেত চোরেরা। কিন্তু আসলে ছাপোষা চুরির আড়ালে সক্রিয় ছিল আগ্নেয়াস্ত্র পাচার চক্র। শহরতলির কারখানা থেকেই তা পৌঁছে যেত মাওবাদীদের হাতে। এমনকী পাচার হত নেপাল, বাংলাদেশেও। ইছাপুরে অস্ত্র পাচার চক্র ফাঁস হতেই ছয় জনকে জালে তুলেছে এসটিএফ। কীভাবে পাঁচিল টপকে চলত পাচার চক্র? আজ গোয়েন্দাদের সামনে হাতে-কলমে তা করে দেখাবে ধৃতরা।

[  নয়া নিয়ম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, স্নাতক স্তরে কমল ফেল করার ‘ভয়’ ]

বাঘের ঘরেই ঘোগের বাসা! কারখানা থেকে স্ক্র‌্যাপ চুরি নতুন কিছু নয়। কিন্তু কারখানাটি যদি হয় অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি, আর চোরাই বস্তুগুলো যদি হয় এসএলআর, ইনসাস বা কারবাইনের মতো মারণাস্ত্রের অংশ, তাহলে এই প্রবাদটি ছাড়া আর কিছু মনে আসে না। বাস্তবিকই উত্তর শহরতলির ইছাপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি থেকে এভাবেই অত্যাধুনিক বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রের যন্ত্রাংশ পাচার হয়ে চলে যাচ্ছিল  বিহারে। রবিবার ওই পাচারচক্রের গতিবিধি ফাঁস হওয়ার পর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর গোয়েন্দাদের অনুমান, বিহারে যন্ত্রাংশগুলি জোড়া লাগিয়ে গোটা অস্ত্র তুলে দেওয়া হত মাওবাদীদের হাতে। এমনকী, নেপাল ও উত্তর-পূর্বের জঙ্গিরাও তার ভাগ পেত বলে সন্দেহ।

 নিটের প্রশ্ন বিভ্রাটে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী, ব্যবস্থা নেওয়ার আরজি জানিয়ে চিঠি জাভড়েকরকে ]

খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের নজরবন্দি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির ‘নিশ্ছিদ্র’ নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনির মধ্যে এহেন ফসকা গেরোর হদিশ মেলায় কেন্দ্র ও রাজ্য দুই স্তরেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। অর্ডন্যান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীলকুমার চৌরাশিয়া সোমবার দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, “এই ঘটনার পর আমরা সমস্ত কারখানার নিরাপত্তা খুঁটিয়ে দেখছি। প্রয়োজনমতো সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” বস্তুত ইছাপুর অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি থেকে অস্ত্র পাচারের অভিযোগে এসটিএফ কয়েক মাস আগে কারখানার দুই কর্মী শম্ভু ভট্টাচার্য ও মধুসূদন চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করেছিল। তাদের সূত্র ধরেই চলছিল তদন্ত। তাতেই পর্দা ফাঁস। কীভাবে? রবিবার বিকেলে বাবুঘাটে বিহারের দুই কুখ্যাত অস্ত্র পাচারকারী অজয়কুমার পাণ্ডে ওরফে গুড্ডু পণ্ডিত ও জয়শঙ্কর পাণ্ডেকে অস্ত্র পাচার করতে যাচ্ছিল ইছাপুরের নোয়াপাড়ার বাসিন্দা উমেশ রায় ওরফে ভোলা ও কার্তিক সাউ। অস্ত্র উদ্ধারের পর তাদের জেরা করা হয়। জেরার মুখে ধৃতরা জানায় যে, অস্ত্র পাচারে তাদের সাহায্য করছে ইছাপুরের নোয়াপাড়ার গোয়ালাপাড়ার আর এন চ্যাটার্জি স্ট্রিটের সুখদা মুর্মু ওরফে মুনমুন ও ইছাপুরের নবাবগঞ্জের মাঝেরপাড়ার সুশান্ত বসু। সুশান্ত অস্ত্র কারখানার জুনিয়র ওয়ার্কস ম্যানেজার ও সুখদা মেকানিক। আগে এই স্ক্র‌্যাপ স্টোরের দায়িত্ব ছিল তারা। অস্ত্র তৈরির সময় অকেজো যন্ত্রাংশগুলি স্ক্র‌্যাপ হিসাবে একটি বিশেষ জায়গায় মজুত করা হত। সেখান থেকে কাজ হতে পারে, এমন যন্ত্রাংশ খুঁজে বের করত সুশান্তরা। সেগুলি মজুত করে রেখে তারা খবর দিত উমেশ ও কার্তিককে। এমনকী, কোন জায়গা থেকে পাঁচিল ডিঙিয়ে গভীর রাতে সেই স্ক্র‌্যাপ চুরি করে পালাতে হবে, তা-ও জানিয়ে দিত। ধৃতরা জানিয়েছে, ওই জায়গাটির নিরাপত্তা কম। বৃষ্টির রাতে চুরির সুযোগ আরও বেশি। সেভাবেই ছক কষে পাঁচিল টপকে কারখানার ভিতরে ঢুকত উমেশ ওরফে ভোলা। বস্তাভর্তি অস্ত্রের  অংশ নিয়ে বেরিয়ে এসে তা তুলে দিত কার্তিকের হাতে। বিহার থেকে আসা পাচারকারীদের লিঙ্কম্যানের হাতে তুলে দেওয়া হত সেই অংশ। বিহারে সেই অংশ জুড়ে অস্ত্র তৈরি করা হত। এরপর বুলেট ভরে পরীক্ষাও করত পাচারকারীরা। এর পর তারা বিহারের মাওবাদী ও আরও দু’টি জঙ্গি সংগঠন বাহুবলী এবং তৃতীয় প্রস্তুতি কমিটির হাতে তুলে দিত অস্ত্র।

[  চলন্ত মেট্রোয় যুবতীকে হেনস্তা, অশালীন ইঙ্গিত করে গ্রেপ্তার যাত্রী ]

আজ পুরো ঘটনার পুনর্নিমাণ গোয়েন্দাদের সামনে। পাঁচিল টপকে কীভাবে চুরি হত তা স্বচক্ষে দেখবেন গোয়েন্দারা। কোথায় গাফিলতি ছিল তা চিহ্নিত করে, নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করার ব্যবস্থা করা হবে।

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে