নব্যেন্দু হাজরা: ছেলে মোটা মাইনের চাকরি পেয়ে সস্ত্রীক বিদেশে। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সময় আর কাটে না। সল্টলেকবাসী জয়ন্ত সান্যালের মনে তাই বাসা বেঁধেছে অবসাদের মেঘ। গ্রাস করেছে একাকিত্ব। ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপেও মন বসে না। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক মর্নিং ওয়াকের সঙ্গীদের কাছে হামেশাই খেদ করেন, “এভাবে একা একা বাঁচা যায়!”
বার্ধক্যের নিঃসঙ্গতা এই মুহূর্তে এক মস্ত সামাজিক ব্যাধি। বিধবা মা বা বিপত্নীক বাবার জন্য ছেলে-মেয়েরাই স্বামী বা স্ত্রী খুঁজে দিচ্ছে, এমন ঘটনা বিলেত আমেরিকায় আকছার ঘটে। এদেশেও বিরল নয়। বিষয়টি নিয়ে গল্প, উপন্যাস, সিনেমা, থিয়েটারও কম নয়। যার মুখ্য প্রতিপাদ্য- শরীরের বয়স হয়েছে বলে কি মনের জানলাও বন্ধ হয়ে যাবে! প্রাচীন হৃদয়ে বসন্তের বাতাস ঢুকবে না, এমন তো কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই! বরং একাকিত্ব থেকে মুক্তি পেলে নিঃসঙ্গ প্রৌঢ়, প্রৌঢ়া, বৃদ্ধ, বৃদ্ধার মন ও শরীর দুইই থাকবে সজীব। ভালভাবে বাঁচার ইচ্ছেতেই প্রতিটি দিন হবে নতুন।
এরই প্রেক্ষাপটে কলকাতায় শুরু হচ্ছে অভিনব এক উদ্যোগ। বসছে প্রবীণদের জন্য স্বয়ম্বর সভা। সীতা-দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরের মতো এখানে অবশ্য প্রতিযোগিতার কোনও ব্যাপার নেই। পাণিপ্রার্থীদের হরধনুভঙ্গ বা মাছের চোখে লক্ষ্যভেদ করে যোগ্যতার প্রমাণও দিতে হবে না। স্রেফ বয়সের প্রমাণপত্র থাকলেই হবে। সঙ্গে চাই একা থাকার প্রমাণ। মানে, তিনি ডিভোর্সি না বিধবা? বিপত্নীক না অবিবাহিত?
[গঙ্গায় ভেসে এল লাশ, ‘জাদু আংটির’ জটেই কি লুকিয়ে মৃত্যরহস্য?]
এবং শর্তপূরণ হলেই থাকছে পছন্দমতো সঙ্গী বা সঙ্গিনী বেছে নেওয়ার সুযোগ। বিয়ে করতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতাও নেই। চাইলে লিভ-ইন বা নিছক প্রেমের সম্পর্কও গড়ে তুলতে পারবেন ইচ্ছুক প্রবীণ জুটিরা। আগামী ২২ এপ্রিল ক্যালকাটা স্পোর্টস জার্নালিস্ট ক্লাবে বসতে চলেছে সঙ্গী খোঁজার আসর। তবে এখানে যোগ দিতে পুরুষদের লাগবে ৬০০ টাকা। মহিলাদের অবশ্য কোনও টাকা লাগবে না। এই অনুষ্ঠান যাঁরা দেখতে আসবেন তাঁদের অবশ্য লাগবে ২৫০ টাকা। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, ফেসবুকে তাঁদের পেজে অনেকেই এই অনুষ্ঠানে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। কিন্তু লোকলজ্জা বা সমাজের ভয়ে তাঁরা নিজেদের নাম প্রকাশ করছেন না। তাঁরা জানাচ্ছেন, দেখতে আসতে চান। তাই একটা টিকিট তাঁদের জন্য করা হয়েছে। অনেকে সঙ্গী খোঁজার কথা তাঁদের জানাচ্ছেন, কিন্তু সামনে আসতে চাইছেন না। তাঁরা গোপন রাখতে চান বিষয়টি। তাঁদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হবে। মনোবিদ এবং এই স্বয়ম্বর সভার মূল উদ্যোক্তা চিকিৎসক অমিতাভ দে সরকার বলেন, ‘একাকিত্ব কাটিয়ে প্রবীণদের নতুনভাবে বাঁচতে উদ্বুদ্ধ করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আমি বয়স্ক ব্যক্তিদের মনের অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে বুঝেছি। তারপরই এই সিদ্ধান্ত।” চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বয়সকালে স্বামী বা স্ত্রী মারা যাওয়ার পর একাকিত্বে কমছে মানুষের আয়ু। বার্ধক্যে সঙ্গীহীনতা জন্ম দিচ্ছে অনেক নতুন অসুখের। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দেশে ১০ শতাংশ প্রবীণ নাগরিক একাকিত্ব থেকে মুক্তির জন্য বাঁচার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেন। অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নেন। সেখান থেকে নতুন জীবনে ফিরিয়ে আনতেই এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগ।
যেখান থেকে এই প্রবীণরা স্বপ্ন দেখবেন নতুন জীবন কাটানোর। গড়তে পারবেন নতুন সংসার। ইচ্ছে থাকলে খুঁজে নেওয়া সঙ্গীকে নিয়েই যেতে পারবেন একেবারে ছাঁদনাতলায়। মাথায় টোপর পরে পান দিয়ে মুখ ঢাকা সঙ্গিনীর সঙ্গে করতে পারবেন শুভদৃষ্টি।
[রেহাই পাচ্ছে না শিশুকন্যাও, দুঃখে চোখে জল আমুল-কন্যার]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.