গৌতম ব্রহ্ম: নীলাঞ্জনার প্রথম প্রেমিকের নামে দ্বিতীয় চায়ের দোকান। যিনি কথা দিয়েছিলেন, ‘একদিন ঝড় থেমে যাবে…’। দক্ষিণ শহরতলির আড্ডার সংস্কৃতিতে ঝড় তুলতে চলেছে তাঁর নামাঙ্কিত চায়ের ঠেক। দোকানের ভিতর জ্বলজ্বল করবে গায়কের গানের কলি। সঙ্গে সাদা-কালো-রঙিনে গায়কের অন্তত ২০টি ছবি। ‘চা ও নচিকেতা’ লেখা দেখে থমকে দাঁড়াবেন পথ চলতি যুবক। “গুরুদেবের দোকান! এখানে তো আসতেই হবে।”
যাদবপুর এইট বি থেকে শুরু। এবার পাটুলি বাইপাসেও খুলে যাচ্ছে নচিকেতার নামাঙ্কিত চায়ের দোকান। একদিকে ঝিলের উপর হাওড়া ব্রিজের বনসাই, আলোকিত ঝরনা, সাউন্ড অফ মিউজিক পার্ক। অন্যদিকে, হাইওয়ের উদ্দাম গতি, বিশ্ব বাংলা গ্লোব, কৃশানু দের মূর্তি, ভাসমান বাজার। একেবারে মোহময়ী আড্ডার পরিবেশ। শুধু দু’টো জিনিসেরই অভাব ছিল। গান এবং চা। ‘চা ও নচিকেতা’ দু’টো অভাবই পূরণ করবে। আগামী ১৮ এপ্রিল, অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে নচিকেতা নিজে হাতে উদ্বোধন করবেন এই ‘বুটিক’ চায়ের স্টল।
[মনের গহন দুনিয়ায় উঁকি প্রতীমের, প্রকাশ্যে ‘আহারে মন’-এর টিজার]
গত ১৮ জানুয়ারি পাঁচ পূর্ণ করেছে যাদবপুরের সাড়ে তিন বাই চার ফুটের ‘চা ও নচিকেতা’। ওই দিন বিকেলে নচিকেতা নিজে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে গান গেয়েছেন। বুধবারও গান গাইবেন বলে কথা দিয়েছেন স্থানীয় ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তকে। বাপ্পার উদ্যোগেই এই চায়ের স্টল। পাটুলি উৎসবে গাইতে এসে নচিকেতা অনুরোধ করেছিলেন। ফেলতে পারেননি বাপ্পা। জানালেন, “বহু মানুষ এখানে সকাল-বিকেল হাওয়া খেতে আসেন। আড্ডা মারতে আসেন। অনেককেই দেখেছি বাড়ি থেকে ফ্লাস্কে চা বানিয়ে নিয়ে আসছেন। একটা ভাল চায়ের দোকানের খুব দরকার ছিল। সেই চিন্তা থেকেই এই দোকানের শুরু। উপরি পাওনা নচিদার গান। এক কথায় বলা যায় শুরু হল সুরেলা চায়ের পথ চলা।” সম্পূর্ণ নিখরচায় এই দোকান তৈরি হচ্ছে পাটুলিতে।
‘চা ও নচিকেতা’র শুরুটা বড় অদ্ভুত। খানিকটা রূপকথার মতো। যার সঙ্গে জড়িয়ে নেশার চোরাবালিতে হারিয়ে যাওয়া এক যুবকের শাপমুক্তির আখ্যান। নাম গৌরব গুহ। তিন মাস পুনর্বাসন কেন্দ্রে কাটিয়ে নেশা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন গৌরব। কিন্তু, জীবন যে বড় নিষ্ঠুর। ‘পাতাখোর’কে কে কাজ দেবে। চাকরির চেষ্টা করে করে একটা সময় হাল ছেড়ে দেন। অতঃপর চায়ের দোকান। সারাদিন গান শোনা আর চা বিক্রি। কথাটা নচিকেতার কানে পৌঁছতে দেরি হয়নি। একদিন সটান নিজেই হাজির হয়ে যান গৌরবের চায়ের দোকানে। জানতে পারেন, ক্লাস ফোর থেকে গৌরব তাঁর গানের অন্ধ ভক্ত। তাঁর গানই নেশার চক্রব্যূহ থেকে গৌরবকে টেনে বের করেছে। এরপর যতবার যাদবপুর দিয়ে অনুষ্ঠান করতে গিয়েছেন নচিকেতা গৌরবের দোকানে চা খেয়েছেন।
[জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাংলা ক্যালেন্ডারে এবার কন্যাশ্রীদের কর্মকাণ্ড]
শিল্পী জানালেন, “আমি আমার অনুরাগীদের পাপে আছি, আবার পুণ্যে আছি। এই বিশ্বাস নিয়েই গান-বাজনা করছি।” গৌরবও এই অনুপ্রেরণাতেই ‘চা ও নচিকেতা’কে শহরে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। জানালেন, “বাপ্পাদাকে ধন্যবাদ। পাটুলির মতো জায়গায় আমাদের দোকান করার সুযোগ দিলেন। চেষ্টা করব ভাল চা খাওয়ানোর।” বিকেল তিনটে থেকে শুরু হবে পাটুলির ‘চা ও নচিকেতা’। চলবে রাত বারোটা পর্যন্ত। গৌরবের মতো ‘প্রাক্তন’ মাদকাসক্তরাই এখানে কাজ করবেন। হয়তো গেয়ে উঠবেন, “আমি আসব তোমার কান্না মোছাতে, আসব তোমার জন্য/ আমি ঝোড়ো হাওয়া হয়ে ব্যারোমিটারেতে বলব প্রলয় আসন্ন।”
[অবশেষে মিলল সেন্সর বোর্ডের সম্মতি, প্রকাশ্যে ‘পিউপা’র টিজার]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.