Advertisement
Advertisement

নেশার ফাঁদ কেটে মূলস্রোতে দিকভ্রষ্ট শৈশব, স্নেহের পরশে বড় হওয়ার স্বপ্ন পথশিশুদের

শেওড়াফুলির লড়াই ছড়িয়ে দিতে চান স্বপ্নসন্ধানী।

This Samaritan from Hooghly angel for ‘drug addict’ children
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:February 12, 2018 8:13 pm
  • Updated:February 12, 2018 8:13 pm

তন্ময় মুখোপাধ্যায়: কখনও হুস করে বেরিয়ে গেল দূরপাল্লার ট্রেন। কোনওটা আবার হর্ন দিতে দিতে থেমে গেল। কোনওটা স্টপেজ দেয়, কোনওটা থ্রু। প্ল্যাটফর্ম ওদের ঘরবাড়ি হলেও রেলের মতো জীবন ছন্দময় নয়। বরং যেন লাল সিগন্যালে আটকে পড়া কোনও ট্রেন। থমকে যাওয়া এই রুদ্ধ গতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এগিয়ে এসেছে কিছু নাছোড় যোদ্ধা। পথ হারানো শৈশব আবার একটু একটু করে জীবনের রাস্তা খুঁজে পেয়েছে।

[অভিনব উদ্যোগ, কলকাতায় এবার পোষ্য কুকুরদের ‘হলিডে হোম’]

Advertisement

4

Advertisement

মাঘের শেষবেলায় এমনই জনা সত্তর শিশু এক ছাউনির তলায় এসেছিল। ঠিকানা শেওড়াফুলি স্টেশন লাগোয়া রেল গুমটি। ছয় নম্বর স্টেশন থেকে হাঁক দিলেই যেখানে শোনা যায়। নূরজাহান, রুমজান, বর্ষা, দুর্গা, সুকু কিংবা রহিতদের মতো মুখগুলোয় তখন হাজার ওয়াটের আলো। মানানসই পরিবেশে ওদের কেউ গান ধরেছে, কেউবা রং-পেনসিল নিয়ে আঁকিবুঁকি কেটেছে। নাটকের পার্ট না দেখে বলেও কেউ কেউ তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এদের দেখে বোঝার উপায় নেই যে এরা পথশিশু। বোঝা দায় যে এদেরই কেউ কয়েক মাস আগেও ট্রেন বা স্টেশনে যাতায়াত করা যাত্রীদের থেকে পয়সা চাইত। কাঁচা টাকা পেয়ে নেশার জগতে হারিয়ে যেত।  রিষড়া, ভদ্রেশ্বর, বর্ধমান, বৈদ্যবাটি বা ব্যান্ডেল থেকে ওই কচিকাঁচারা নিজেদের এভাবে চিনতে পেরে অবাক। বিস্ময় যাচ্ছে না তাদের অভিভাবকদেরও। যারা এতদিন ছেলেমেয়দের স্কুলের বদলে অন্যের কাছে হাত পাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বার করে দিতেন তাদেরও ঘোর যাচ্ছে না। নূরজাহানদের বাবা-মায়ের বলছেন, তারাও বুঝতে পারেননি সন্তানদের মধ্যে এমন প্রতিভা আছে। ওদের ভবিষ্যৎ যাতে আর নতুন করে হোঁচট না খায় অজান্তে যেন তারও শপথ নিলেন।

index

পথভোলা শৈশবকে নিঃশব্দে মূল স্রোতে ফেরানোর কাজটা করে চলেছেন শুভঙ্কর পোল্লে। সদ্য কলেজ উত্তীর্ণ এই পড়ুয়ার নাটকের শখ। আর মনের খোরাক এই বাচ্চাদেরকে সামাজিকভাবে সুস্থ করার। বাড়িতে বাবা যতই চাকরি বা কেরিয়ার জন্য বকাবকি করুক, রোজ দু ঘণ্টা এই বাচ্চাদের সময় ওকে কাটাতে হবে। বছর খানেক আগে শ্রীরামপুর থেকে যাওয়ার পথে এই শিশুদের দেখেছিলেন শুভঙ্কর। পড়াশোনার কী মূল্য তা বোঝাতে গিয়ে কম কথা শুনতে হয়নি। তবে হাল ছাড়েননি। তাঁর এই লড়াইয়ে আস্তে আস্তে অনেককে পাশে পান। এরপর তিন থেকে কুড়িজনের সংসার।  শেওড়াফুলির মুসকানদের মতো রাজ্যের অন্য স্টেশনেও রয়েছে অনেক মুসকান। ওদেরকে এক ছাতায় আনার জন্য রবিবার পথশিশুদের নতুন রাস্তা খুঁজে দিতে চেয়েছিল শুভঙ্কর। হুগলি জেলার নানা প্রান্ত থেকে আসা শিশুদের কোলাহল বুঝিয়ে দিল এই যুবার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল।

[এবার সরকারি উদ্যোগেই তৈরি হবে ‘খাঁটি’ রসগোল্লা, নাগালেই থাকছে দাম]

স্বামীজির ১৫৫ তম এবং ভগিনী নিবেদিতার জন্ম সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে শেওড়াফুলি স্টেশন চত্বরে বসেছিল নিজেকে চেনার আসর। স্বামীজি বা নিবেদিতা কারা তা হয়তো এই শিশুদের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে একটা মূল্যবোধ তারা পেয়েছে। মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হয়। জীবনে শৃঙ্খলার বিকল্প নেই। আর হ্যাঁ পড়াশোনার বাইরেও একটা দুনিয়া আছে। যেখানে নাচ, গান, আবৃত্তির মতো নিজেকে চেনার জায়গার অভাব নেই। শেওড়াফুলির শৈশব নেশার কানাগলি থেকে বেরিয়েছে। শুভঙ্কর বলছেন, এত মানুষ এগিয়ে এসেছেন তাতে মনে হচ্ছে যেন তাঁর ভাল কাজের হাতেখড়ি হল। আরও কাজ আছে। প্রত্যেক স্টেশনে যেসব বাচ্চারা নেশাগ্রস্ত তাদের নিয়ে এসে ওদের ভিডিও দেখাব। ওদের চেতনা বাড়বে। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চা করলে আত্মিক বিকাশ হবে। ভাল জিনিস গ্রহণ করব। গড়গড়ে করে বলে যান শুভঙ্কর। স্বপ্নগুলো যে থামে না। থামতেই চায় না। ও বুঝেছে আগ্রহ জন্মেছে। আর এটা ধরে রাখতে হবে।3

[ফেসবুক সহায়, মানসিক ভারসাম্যহীন বোনকে ফিরে পেলেন দাদা]

শেওড়াফুলি স্টেশন লাগোয়া গুমটি যেন আঁধার থেকে বেরোনোর এক প্ল্যাটফর্ম। সোশ্যাল মিডিয়ার মারফত যে মঞ্চের মানচিত্র বড় হচ্ছে। যাঁরা বলেন সামাজিক মাধ্যমগুলির জন্য কেউ কেউ বিপথগামী হচ্ছে, তাঁদের অন্য কিছু ভাবাচ্ছেন এরা। ফেসবুকের সুবাদে শুভঙ্করের পাশে দাঁড়িয়েছে অজস্র শুভানুধ্যায়ী। সুদূর সুইডেন থেকে হাত বাড়িয়েছেন এক বঙ্গসন্তান। স্টেশনে থাকা শিশুদের থাকার জন্য অত্যাধুনিক তাঁবুর ব্যবস্থা করেছেন। প্রবীর মুখোপাধ্যায় নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা এসব দেখে ওই শিশুদের আধার কার্ড তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছেন। শ্রীরামপুরের এসডিপিও মণিকা গর্গ এসে জানালেন স্টেশনের মধ্যে যে এমন কিছু হতে পারে তা অকল্পনীয়। শুভঙ্করদের পাশে সবরকম সাহায্যের কথা জানিয়ে গেলেন। এক ডাক্তার বললেন বাচ্চাদের জন্য মেডিক্যাল ক্যাম্পের কথা।  বিন্দু বিন্দু থেক সিন্ধু হওয়ার কাজটা এভাবেই হয়তো শুরু হল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ