Advertisement
Advertisement
পুরভোট তৃণমূল

পুরভোটের আগে সতর্ক তৃণমূল, কাজের হিসাব ভিডিওতে দেওয়ার নির্দেশ কলকাতার কাউন্সিলরদের

কাউন্সিলরদের সমীক্ষা মিলিয়ে দেখে নেবেন পাড়ার বাসিন্দারা।

TMC councillors are asked to give video of work before municipal election
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:January 19, 2020 1:40 pm
  • Updated:January 19, 2020 1:40 pm

ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: এ যেন মাষ্টারমশাইয়ের সামনে বসে নিজের পরীক্ষার খাতা নিজে দেখা। কাউন্সিলরদের এবার সেল্ফ অ্যাসেসমেন্টের কাজ দিল তৃণমূল। সেই সমীক্ষা মিলিয়ে দেখে নেবেন পাড়ার বাসিন্দারা। মিললে পাস। না মিললে ‘বাদ’।

কলকাতা পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরদের দল নির্দেশ দিয়েছে, গত পাঁচ বছরে কে কী কাজ করেছেন, প্রকল্প অনুযায়ী কত খরচ করার কথা ছিল, কত হয়েছে, তাতে কত মানুষ উপকৃত হয়েছেন সব পুস্তিকাবদ্ধ করতে হবে। তবে শুধু ‘থিয়োরি’ দিলে হবে না। দেখাতে হবে ‘প্র‌্যাকটিক্যাল’ করেও। পাঁচ বছরে বর্তমান কাউন্সিলরের কাজের প্রলেপ কোথায় কতটা পড়েছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে হবে। সঙ্গে যাবে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কিছু বাইট। তথ্যচিত্রের চেহারায় এই প্রেজেন্টেশন আপলোড করতে হবে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সঙ্গে প্রকাশ করা হবে সিডি। একটি সংস্থাকে দিয়ে সেই কাজ ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে। যা দেখানো হবে লোকাল কেবল চ্যানেলেও। তার সঙ্গে ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি পৌঁছবে ‘উন্নয়ন পুস্তিকা’।

Advertisement

এর পরের কাজটা পাড়ার বাসিন্দাদের। তাঁরাই মিলিয়ে দেখে নেবেন কোন কাজটা সত্যিই হয়েছে। কোনটা ডাহা মিথ্যে। শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার দলীয় বৈঠকে বলে দিয়েছে, মানুষের মত নিয়ে তবেই প্রার্থী ঠিক করা হবে। কাউকে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। এই বার্তা যে কথার কথা নয়, তা বোঝাতেই এমন সিদ্ধান্ত। উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতাওয়াড়ি কাউন্সিলরদের পৃথকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের কাজের বিস্তারিত খতিয়ান দিয়ে পুস্তিকা বের করতে। সেই তালিকায় মেয়র পারিষদ, বরো চেয়ারম্যানরাও রয়েছেন। এক নেতার কথায়, “আগে গোটা কলকাতার কাজের নিরিখে পুস্তিকা বের করা হত। এইবারই প্রথম একেবারে ওয়ার্ডভিত্তিক কাজ হচ্ছে।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বে একাধিক রদবদল, জায়গা পাবেন অন্য দল থেকে আসা নেতারাও]

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী এপ্রিলে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন। সংরক্ষণের তালিকা ইতিমধ্যেই প্রকাশিত। যেখানে বাদ গিয়েছে একাধিক হেভিওয়েটদের নাম। সেই আসনে তৃণমূলের পরবর্তী প্রার্থী কাকে করা হবে, তা নিয়ে জল্পনা কম নয়। এসবের মধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সূত্রের খবর, রাজনৈতিক কৌশলগত লড়াইয়ে দলের পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। পাশাপাশি ১৪৪টি ওয়ার্ড ধরে চলছে দলগত প্রস্তুতি। ওয়ার্ডের পাশাপাশি বরোভিত্তিক পুস্তিকাও বের করা হবে।

সূত্রের খবর, দলীয় সিদ্ধান্ত হলেও পুরভোটকে সামনে রেখে সামগ্রিক কাজটি করছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তার জন্য একাধিক কমিটিও গড়া হয়েছে। কাজের সুবিধার জন্য কলকাতাকে ৫টি জোনে ভাগ করে কমিটি তৈরি হয়েছে। এই কমিটিই বই এবং সিডির বিষয়বস্তু বাছাই করবেন। উত্তর কলকাতার জন্য গঠিত এই কমিটিতে যেমন আছেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, কাউন্সিলর অনিন্দ্য রাউতরা, তেমন দক্ষিণ কলকাতার কমিটিতে রাখা হয়েছে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার এবং বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়কে। মধ্য কলকাতার কমিটিতে থাকছেন জীবন সাহা, ইন্দ্রাণী সাহারা। বেহালার জন্য রত্না শূর এবং সুদীপ পোল্লে। যাদবপুরের দায়িত্বে সুশান্ত ঘোষ, তারকেশ্বর চক্রবর্তী, অরূপ চক্রবর্তী। ৫ কমিটিতেই রাখা হয়েছে পুরসভার একাধিক আধিকারিককে।

[আরও পড়ুন: প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ছুরির কোপ, ১২ দিন লড়াইয়ের পর মৃত্যু সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর]

পানীয় জল সরবরাহে একাধিক বুস্টার পাম্পিং স্টেশন হয়েছে। নতুন পার্ক হয়েছে। বাড়ি তৈরির জটিলতা দূর করতে অনলাইন এবং ওয়ান উইন্ডো সিস্টেম চালু হচ্ছে। কালীঘাট মন্দিরের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। হচ্ছে স্কাইওয়াক। টালিনালার উপর একাধিক সেতু হয়েছে। সারদা মায়ের বাড়ির সংস্কার হচ্ছে। শ্মশানে বেড়েছে ইলেকট্রিক চুল্লির সংখ্যা। অন্যদিকে, বাংলার বাড়ি প্রকল্পে গরিবদের বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কাজ দফায় দফায় হচ্ছে। এই বিষয়গুলিকেই বই এবং সিডিতে তুলে ধরা হবে। গত ৫ বছর কলকাতায় পুর-পরিষেবা সংক্রান্ত কাজ অনেক হলেও দুর্নীতির অভিযোগও এসেছে একাধিকবার। কিন্তু তার ফাঁকে যে উন্নয়নের কাজ সিকিভাগ হলেও তৃণমূল চাইছে, তা নথিবদ্ধ হয়ে থাকুক। তাতে তথ্য যেমন হাতের সামনে থাকবে, একইসঙ্গে শহরের মানুষও হাতেনাতে দেখে নিতে পারবেন পুর-পরিষেবার মান। এক শীর্ষ নেতার কথায়, “স্বচ্ছতার প্রশ্নে আর কোনওভাবেই আপস করা হবে না। আমরা বারবার দলীয় বৈঠকে সে কথা বুঝিয়ে দিয়েছি নেতা-কর্মীদের। সেটা যেন কেউ কথার কথা না মনে করেন, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। কাউন্সিলররা যা বলছেন, আর যা করছেন, তা মিলিয়ে দেখেই মানুষ বিচার করবে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ