রাহুল চক্রবর্তী: কথায় আছে ভোট বড় বালাই! তা সে লোকসভা হোক, বিধানসভা হোক, আর পঞ্চায়েতই হোক না কেন। ভোটারদের মন তুষ্ট করতে কত পন্থা নেন প্রার্থী থেকে রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা। আর বলার অপেক্ষা রাখে না, ভোট যখন চলে তখন ইস্যু খোঁজার অপেক্ষায় থাকে বিরোধীরা। তেমনই পঞ্চায়েত পর্বে বাদ গেল না লালগড়ে বাঘের মৃত্যু। শনিবারে শাসক-বিরোধী তরজায় পঞ্চায়েতের হাওয়া গরম রইল ‘রয়াল বেঙ্গল রহস্য’কে কেন্দ্র করে।
মাত্র মাস দু’য়েক আগের ঘটনা। তখনও পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঢাকে কাঠে পড়েনি, লালগড়ের জঙ্গলে বাঘের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে। শুরু হয়ে যায় ‘বাঘবন্দি’ খেলা। ড্রোন থেকে ছাগলের টোপ- ছিল কত আয়োজন। কিন্তু এত সবেরই লড়াই শেষ হয় শুক্রবার বাঘের মৃতদেহ পাওয়ার পর। সময়টা এখন পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে এমনিতেই গরম রয়েছে। আর তার মধ্যে ‘জাতীয় পশু’র মৃত্যু। ফলে শাসক-বিরোধী সকলেই পালটা আক্রমণ শানালেন বাঘের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে। বাম, বিজেপি, কংগ্রেস একযোগে বন দপ্তরকে কাঠগড়ায় তুলল। পালটা জবাবও দিল সরকার পক্ষ।
[মহিলাদের সঙ্গে চাটাই পেতে ‘চায়ে পে চর্চা’, জনসংযোগে নয়া কৌশল তৃণমূলের]
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, “রাজ্যের বন দপ্তর অপদার্থ। বাঘ আছে এটা জানার পর লালগড়ে লোক বাড়ানো উচিত ছিল। পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল। বাঘ ধরার ব্যবস্থা করেনি কিন্তু মারার ব্যবস্থা হয়ে গেল। আর আদিবাসী মানুষের বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া উচিত নয়।” তীব্র কটাক্ষের সুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় বিরোধীদের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেইরকমই অত্যাচারের শিকার বাঘও। ভুল সময়ে বাঘটা ঢুকে পড়েছে।” তাঁর আরও মন্তব্য, “২-৩ মাস ধরে শুনতে পেয়েছি, বাঘ এসেছে। বন দপ্তর কিছু করতে পারেনি, নাটক করেছে। বাঘটা বেঘোরে মারা গেল। তার জন্য না জেনে আদিবাসী সমাজকে দায়ী করা হল কেন? তদন্ত হোক। দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক। তবে বিনা কারণে কেউ যেন শাস্তি না পায়।”
পঞ্চায়েত পর্বে ইস্যু পেয়ে ফোঁস করতে ছাড়ল না কংগ্রেসও। দলের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “আশ্চর্য হয়ে গেলাম বন দপ্তরের কাজ দেখে। অকেজো, অপদার্থ, দুর্বল রাজ্যের বন দপ্তর। তারা কি ঘুমোচ্ছিল, না কি অপেক্ষা করছিল বাঘটা কখন নিজেই ঘুমিয়ে পড়বে। বাঘ ধরার ঝামেলায় জড়াতে চায়নি বন দপ্তরের লোকজন।” বিরোধীদের আক্রমণের জবাবও দিয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। নাম না করে বিমান বসুকে ‘শিয়াল’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। বলেছেন, “উনি শিয়াল তো! কাজেই ঠিক টাইমে বলে দিয়েছেন। বাঘটা অনেকদিন ধরতে পারা যায়নি। কেন ধরতে পারা যায়নি, তার তদন্ত হচ্ছে। আমি জানি, গোটা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী নিজে দেখছেন।” ফলে এটা স্পষ্ট, পঞ্চায়েত পর্বে বাঘের মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক তরজা আরও কয়েকটা দিন চলবে।
[ভোটের ময়দানে লড়াই থাকলেও দোকানে একাকার রাজনীতি]