তরুণকান্তি দাস: কচুর মুখী। কচুর লতি। কচুশাকে মজেছে ইউরোপ। শুধু বাঙালি নয়, সেখানকার সাহেবরাও। তার জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলা। অবস্থা এমন যে, কচুর লতি চাষ করার পরিকল্পনা নিতে হচ্ছে রাজ্যকে। স্বাভাবিক। গতবারের চেয়ে এই রাজ্যের ফল, শাক-সবজি রপ্তানি বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। শুধু সবজির হিসাব ধরলে তা দাঁড়াচ্ছে ৬৭ শতাংশ। যা আরও বাড়াতে চায় রাজ্য।
কয়েকদিন আগেই অর্থ তথা শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে তিনি এজন্য সমস্তরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, সরকারি লাল ফিতের ফাঁস, ছাড়পত্র পেতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বারবার সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের অধীন যে দপ্তর শংসাপত্র দেয় তারা যথেষ্ট তৎপর নয়। না হলে আরও এগিয়ে যেত বাংলা।
মূলত পূর্ববঙ্গের প্রিয় খাবার বলে পরিচিত হলেও পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে কচুর লতি। যা এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইউরোপ মুলুক। ধরেছে বাজারও। ছাড়পত্র পেলে এবার আমেরিকাও সরষে দিয়ে কচুশাক বা কচুর লতি-চিংড়ি দিয়ে রসনাতৃপ্তি করতে পারবে। কচুর মুখীর রপ্তানি ইতিমধ্যে রেকর্ড গড়েছে। পটল, পেঁপে, করলা, ঝিঙে তো ছিলই। এবার আম ও লিচু রপ্তানি হয়েছে গতবারের চেয়ে অনেক বেশি। তবে বাংলার কচুর এই বিশ্বজনীন হয়ে ওঠা নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ। যা ঘিরে আশার আলো দেখছেন রপ্তানিকারক থেকে কৃষি বিপণন দপ্তর৷
রপ্তানির ক্ষেত্রে এই রাজ্যে অন্যতম সমস্যা প্যাক হাউসের। সরকারি স্তরে এই পরিকাঠামো নেই। সেই সমস্যা কাটাতে তিনটি রপ্তানিকারক সংস্থা মিলিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে একটি প্যাক হাউস বানিয়েছে। যা আপাতত এই রাজ্যে অন্ধের যষ্ঠি। সেখানে রপ্তানি সংক্রান্ত সমস্ত রীতিনীতি মেনে পরীক্ষা করে তবেই বিদেশে পাঠানো হয় বাংলার ফল-সবজি। প্যাক হাউসের মাধ্যম ছাড়া কোনও উন্নত দেশ সবজি নেয় না। কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের আতঙ্ক থেকেই তাদের এই সতর্কতা। দত্তপুকুরের ওই প্যাকহাউসের সৌজন্যে আম, পেঁপে, শাক নিয়মিত যাচ্ছে জার্মানি, রোম, সুইডেন, ইতালি, সুইজারল্যান্ডে। দুবাই, আরব আমিরশাহিতে রমজান মাসে আম গিয়েছে প্রচুর পরিমাণে। বার্মিংহামের বাঙালিদের কাছেও চাহিদা বাড়ছে এই রাজ্যের শাক-সবজির। এই বছর সেখানেও রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি হয়েছে বলে কৃষি বিপণন দপ্তর সূত্রে খবর।
আর যা দেখলে উন্নাসিক বাঙালি ভুরু কোঁচকান, সেই কচু? ১০ জন রপ্তানিকারকের এখন সবচেয়ে বড় কাজ কচুর মুখী ও লতি জোগান দেওয়া। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উঠতে পারছেন না তাঁরা। রপ্তানিকারক রাজীব নন্দী বলেন, “বাংলার সবজির বিপুল চাহিদা রয়েছে। বাজারও বড়। কিন্তু আমরা কার্যত একক লড়াই লড়ছি। না হলে ছবিটা বদলে যেত।” আর এক রপ্তানিকারক, গাইঘাটার বাসিন্দা অঙ্কুশ সাহা বলেছেন, “কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক আর একটু তৎপর হতেই পারে। রপ্তানির নানা বিধিনিষেধ আছে। যা আমাদের টপকাতে হয় একেবারে নিজস্ব পরিকাঠামোর মদতে।” অঙ্কুশবাবু জানাচ্ছেন, ইউরোপে বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ থাকেন। তাঁরাই প্রধানত ক্রেতা। তবে স্থানীয়দের কাছেও জনপ্রিয় হচ্ছে বাংলার সবজি। কচুও।
এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী সব শুনেছেন। রপ্তানিকারদের আশা, ছবিটা বদলাবে। যে জেলা রপ্তানি ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে সেই উত্তর ২৪ পরগনার জেলা উদ্যানপালন দফতরের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি ডিরেক্টর হৃষিকেশ খাঁড়া বলেন, “কচুর মুখীর চাহিদা বেড়েই চলেছে। রপ্তানিকারকরা তো সেই চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত। আমরাও বিষয়টি নিয়ে ভাবছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.