গৌতম ব্রহ্ম: তথ্য ১ : ভারতবর্ষে বিবাহসংক্রান্ত সমস্যার জেরে প্রতি বছর প্রায় ৯৮ হাজার পুরুষ আত্মহত্যা করেন। সংখ্যাটা নারীর তুলনায় তিনগুণেরও বেশি।
তথ্য ২ : ভারতের দায়ের হওয়া ধর্ষণ মামলার ৭১.৬ শতাংশই মিথ্যা।
তথ্য ৩ : ভারতে দায়ের হওয়া বধূ নির্যাতন মামলার (৪৯৮এ ধারা) ৮০ শতাংশই সাজানো, ভিত্তিহীন।
এই তথ্যকে সামনে রেখে পুরুষ বাঁচাতে পথে নামলেন শহরের মহিলারা। তাঁদের বক্তব্য, বহু পুরুষ এই মিথ্যার জালে খুইয়েছেন সব। সম্মান, পরিবার এমনকী নিজের জীবন। কর্পোরেট জগতে যৌন নির্যাতনের মিথ্যা অপবাদে চাকরি হারিয়েছেন বহু পুরুষ।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত নব্বই বছরের বৃদ্ধের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা দায়ের করেছেন পূত্রবধূ! স্ট্রেচারে করে মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধকে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এমন ঘটনা অনেক আছে। অথচ পুরুষের হয়ে কেউ কথা বলে না। পশুপাখি, পরিবেশ রক্ষায় মন্ত্রক আছে, অথচ পুরুষের সুরক্ষায় কোনও কমিশন নেই। এমনটাই জানালেন ‘অল বেঙ্গল মেনস ফোরাম’-এর সভানেত্রী নন্দিনী ভট্টাচার্য।
তাঁর পর্যবেক্ষণ, এই মিথ্যা মামলার জেরেই প্রকৃত নির্যাতিতার বিচার পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। নন্দিনীর প্রশ্ন, “যখন কোনও নারী অপরাধ করেন, মিডিয়ায় তাঁর মুখ ঝাপসা দেখানো হয়। তাঁর পরিবারকে আড়াল করা হয়। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগেই তার নাম, ধাম, মুখ এবং পরিবারের বিস্তারিত বিবরণ সবাই জেনে যান। নারীর সম্মান আছে, পুরুষের নেই? তার সমাজ, সংসার নেই? যদি তিনি নিরপরাধ প্রমাণিত হন তবে তার সম্মানহানির দায় কে নেবে?
পুরুষ নির্যাতনের প্রতিবাদে রবিবার সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক থেকে নিউটাউনের ডিএলএফ মোড় পর্যন্ত বাইক র্যালি করেছে ফোরাম। ছিলেন দাবাড়ু দিব্যেন্দু বড়ুয়া, ডিসি ট্রাফিক জে মার্সি প্রমুখ। সঙ্গী হয়েছিল ‘অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’।
আজ, গড়িয়াহাট মোড়ের বুলেভার্ডে পুরুষ দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ফোরাম। নাম ‘পুরুষ, তোমার জন্য’। নন্দিনী জানিয়েছেন, এদিনের অনুষ্ঠান গান-কবিতা-আলোচনা সব পুরুষকে ঘিরে।
১৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। এই উপলক্ষ্যে পুরুষদের জন্য সপ্তাহব্যাপী বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করেছে শহরের তিন প্রধান বেসরকারি হাসপাতাল। বেশ কয়েকটি বুটিক ও গয়নার দোকানও ফোরামের ডাকে সাড়া দিয়ে পুরুষদের ‘ছাড়’ দিচ্ছে। ২০ নভেম্বর আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ফোরামের সদস্যরা। থাকছেন সমাজসেবী মধুছন্দা সেনও।
আগেকার দিনে মেয়েরা ‘গঙ্গাজল’, ‘চাঁদের আলো’, ‘বকুলফুল’ পাতাতেন মনের কথা বলার জন্য। পুরুষের এমন কোনও সই নেই। তাঁর অসহায়তা বা চোখের জল, দুইই বড় করুণার ও লজ্জার।
এমনই পর্যবেক্ষণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শিল্পা দাসের। শিল্পা জানালেন, “নারীর অধিকার রক্ষায় বহু পুরুষ এগিয়ে এসেছিলেন। আজও আসেন। আমরা না হয় ঋণশোধের একটু চেষ্টা করলাম। আমরা মেয়েরা এগিয়ে না এলে আমাদের বাবা, ভাই, স্বামী, পুত্রদের কীভাবে এই আইনি সন্ত্রাসবাদ থেকে বাঁচাব?” নন্দিনীদের বক্তব্য, “আমাদের পরিবারের ছেলেরা বিপন্ন হলে আমরাও কিন্তু স্বস্তিতে থাকব না। বহু পরিবার আজ ভাঙনের মুখে। মনে রাখতে হবে, নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। একে অপরকে ছাড়া দু’জনেই অর্ধেক আকাশ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.