Advertisement
Advertisement

কলকাতায় কান্নার ক্লাস চাইছেন মনোবিদরা, কেন জানেন?

নিজের জন্য অবশ্যই পড়ুন এই প্রতিবেদন৷

Japani Therapy in Kolkata
Published by: Tanujit Das
  • Posted:November 26, 2018 8:34 pm
  • Updated:November 26, 2018 8:34 pm

গৌতম ব্রহ্ম: হাসি নয়। কান্না। লাফিং ক্লাবের বদলে উইপিং ক্লাস! অঝোরধারে আকুল ক্রন্দনের মধ্যেই বুঝি লুকিয়ে আছে প্রফুল্লতার দাওয়াই। কারণ, চোখের জলের স্রোতেই হতাশা ধুয়েমুছে যায়। তাই মন ভাল রাখতে জাপানে ইদানীং কান্নার ক্লাস হচ্ছে। শহরে শহরে বিভিন্ন ক্লাসরুমে একজোট হয়ে কাঁদছেন সব্বাই। অশ্রুর সঙ্গে হু হু করে বেরিয়ে যাচ্ছে শরীরে বাসা বাঁধা স্ট্রেস হরমোন। সজীব শরীর মন নিয়ে ফিরছেন ক্রন্দন শিক্ষার্থীরা।

[নাইট শিফটে অফিস? জানেন কী বিপদ হতে পারে আপনার?]

Advertisement

‘কমিউনিটি ক্রাইং’-এর এই জাপানি মডেল প্রয়োগের ইঙ্গিত দিচ্ছেন বাংলার মনোবিজ্ঞানীরাও। পিজি হাসপাতাল থেকে পাভলভ হাসপাতাল, বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল থেকে সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং সেন্টার। সর্বত্র আগ্রহ তৈরি হয়েছে হতাশা কমানোর এই জাপানি ওষুধ নিয়ে। অনেকদিন ধরেই কান্না নিয়ে গবেষণা চলছে। এটা ‘হেলদি কোপিং স্ট্রাটেজি’ বলেই মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন। পিজি হাসপাতালের ‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’-র অধিকর্তা ডা. প্রদীপ সাহা জানিয়েছেন, “আমরা শুধু দুঃখে কাঁদি না। আনন্দে, খুশিতেও চোখের জল বের হয়। বাচ্চারা কমিউনিকেশনের মাধ্যম হিসাবে কান্নাকে ব্যবহার করে। প্রাপ্তবয়স্করা অনুভূতির প্রকাশে কাঁদেন। অনুকূল পরিস্থিতিতে কাঁদলে লাভ আছে। চেপে রাখা দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলে।” একই বক্তব্য পাভলভের সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. শর্মিলা সরকারের। তাঁর মত, “প্রিয়জন বিয়োগে বা অন্য কোনও কারনে কেউ চুপচাপ হয়ে গেলে ‘ক্যাথারসিস পদ্ধতি’ প্রয়োগ করে কাঁদানো হয়। এটাকে ভেন্টিলেশন বলা হয়। কিন্তু, ‘সাইকো’ রোগীদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কাজ করে না। মুড ডিসঅর্ডার, ক্লিনিকাল ডিসঅর্ডার থাকলে বা প্রতিকূল পরিবেশে কাঁদলে তা স্বাস্থ্যকর হয় না।”

Advertisement

কান্না নিয়ে ১৯৮০ থেকে অনেক সমীক্ষা হয়েছে। ২০১৩-তে প্রাপ্তবয়স্কদের কান্না বা ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডাল্ট ক্রাইং’ নিয়ে জাপানে একটি সমীক্ষা হয়। তাতে বলা হয়, জাপানিরা একেবারেই কাঁদতে চায় না। অত্যন্ত অন্তর্মুখী। দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা চেপে রাখায় বিশ্বাসী। রাগ চেপে রাখতেও জাপানিদের জুড়ি মেলা ভার। মার্কিনিরা উল্টো। সবচেয়ে বেশি রাগারাগি করে, কান্নাকাটিও করে। আবেগের বহিঃপ্রকাশে বাঙালিদের সঙ্গে জাপানিদের অনেক মিল। তাই এই শহরেও হতাশা মোকাবিলার প্রাথমিক হাতিয়ার হয়ে উঠতেই পারে কান্না। মত মনোবিজ্ঞানীদের।শহরের সিনিয়র কনসালট্যান্ট সাইকিয়াট্রিস্ট তথা ‘ক্রিস্টাল মাইন্ডস’-এর প্রতিষ্ঠাতা অধিকর্তা ডা. রিমা মুখোপাধ্যায় জানালেন, “জাপান যখন এই পদ্ধতি অনুসরণ করছে তখন নিশ্চয়ই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। বিশদে জানতে হবে। তবে কাউন্সেলিং করে কাঁদানো বেশ কঠিন কাজ।” রিমার পর্যবেক্ষণ, “ছোটবেলা থেকেই আমাদের এখানে ছেলেদের বলা হয়, প্রকাশ্যে চোখের জল ফেলতে নেই। দুঃখ-কষ্ট নিজের ভিতরে রাখো। এটা কখনওই করা উচিত নয়। কান্না পেলে ছেলেরাও কাঁদুক। এটা আমরা অভিভাবকদের বলতে শুরু করেছি। কে জানে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এখানেও জাপানি ‘মডেল’ প্রয়োগ করা হবে।”

[হাঁটতে গেলে বারবার জুতো খুলে যাচ্ছে! শিরদাঁড়ার সমস্যা নয়তো?]

গবেষণায় প্রমাণিত, মেয়েরা অবশ্য কান্নার ব্যাপারে ছেলেদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। মেয়েরা মাসে ৫.৩ বার কাঁদে। সেখানে ছেলেরা মাত্র ১.৩ বার। গবেষণায় এই সত্য উদঘাটিত হয়েছে। অনুকূল পরিবেশ পেলে হতাশা কমাতে কান্নার থেকে ভাল ওষুধ আর কিছু হতে পারে না। কান্না হল ‘হেল্প সিকিং বিহেভিয়ার’-মত মনোবিদ স্মিতা সিংহের। তাঁর ব্যাখ্যা, “কাঁদলে প্যারাসিম্পেথ্যাটিক নার্ভগুলি উত্তেজিত হয়। এমন কিছু হরমোন নিঃসৃত হয় যা রোগীকে শান্ত হতে সাহায্য করে। তাছাড়া কাঁদলে আমাদের শরীরে বেশি অক্সিজেন যায়। ঠান্ডা হাওয়া শরীরের ভিতরে গিয়ে হাইপোথ্যালামাস গ্রন্থিকে ঠান্ডা করে। তার থেকে একটা ‘রিল্যাক্সেশন’ হয়। অনুভূতির উপরে একটা নিয়ন্ত্রণ আসে।” জানা গিয়েছে, জাপানে সমবেতভাবে কান্নার জন্য ‘রুই-কাটসু’ উৎসব হয়। এই ‘কমিউনাল ক্রাইং’-এর সংস্কৃতি অনেক দেশই চালু করছে। জাপানেও স্কুল-কলেজ-অফিস-কাছারিতে সপ্তাহে একদিন কাঁদানো হয়। হতাশার মোকাবিলায় এ রাজ্যও কি জাপানের পথ ধরবে?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ