Advertisement
Advertisement

Breaking News

চাঁদের অগম্য মাটিতে ঘাঁটি গাড়বে চন্দ্রযান ২, জেনে নিন খুঁটিনাটি

তবে কি চাঁদে বসতি গড়ার পথে মানুষ?

Chandrayaan-2 to explore the far side of moon for the first time
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:July 9, 2019 11:44 am
  • Updated:July 9, 2019 11:48 am

ঐন্দ্রিলা বসু সিংহ: চন্দ্রযান ২ চাঁদে পৌঁছালে আমাদের মানে পৃথিবীবাসীর লাভ কী হবে? চাঁদে মানুষ বসবাসের পথ সুগম হবে? নাকি চাঁদের মাটিতে ভারতীয় অভিযাত্রীদের পদার্পণের রাস্তা প্রশস্ত হবে? কোনটা? উত্তর হল, এর কোনওটাই নয়।
আবার এই দু’টি বিষয়ই যদি ভবিষ্যতে কখনও হয়, তবে চন্দ্রযান ২ অভিযান থেকে পাওয়া তথ্য সেই অভিযানে সাহায্য করবে বই কি!

[আরও পড়ুন: ব্রহ্মসের আওতায় ইসলামাবাদ, ভারতীয় ক্রুজ মিসাইলের আতঙ্কে পাকিস্তান]

Advertisement

এখন প্রশ্ন হল এই দু’টির কোনওটিই যদি চন্দ্রযান ২ না করে তবে ঠিক কীভাবে এই অভিযান সাহায্য করতে চলেছে আমাদের দেশকে। ইসরো জানাচ্ছে, চন্দ্রযান ২ যদি সফল হয় তবে চাঁদের অজানা জগতের এক বিশাল তথ্য ভাণ্ডার খুলে যাবে আমাদের সামনে। শুধু তাই নয়, সৃষ্টির আদিতে আমাদের পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক গঠন ঠিক কেমন ছিল, তার খোঁজও মিলতে পারে চাঁদে গেলে। কীভাবে? এম পি বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের ডিরেক্টর, দেবী প্রসাদ দুয়ারি জানাচ্ছেন, “চাঁদের ভিতরটা আসলে পৃথিবীর মতো সক্রিয় নয়। পৃথিবীতে আগ্নেয়গিরি আছে। তার থেকে লাভা উদ্গিরনও হয়। চাঁদে কিন্তু তেমন কিছু হয় না। তাই চন্দ্রপৃষ্ঠ উৎপত্তির একেবারে আদিতে যেমন ছিল, তেমনই রয়েছে। আর যেহেতু পৃথিবী আর চাঁদ প্রায় একই সময় তৈরি হয়েছে বলে অনুমান, তাই বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, চাঁদের মাটি থেকে সেই সময়ের তথ্য খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। যা অবশ্যই আমাদের গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।”

Advertisement

বিজ্ঞানীদের ধারণা চাঁদের মাটিতে সৃষ্টির আদি সময়ের ফসিল অবিকৃত অবস্থায় থাকতে পারে। তবে সর্বত্র নয় অবশ্যই। চাঁদের যেসব জায়গায় সূর্য বিমুখ শুধু সেইখানেই। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যেহেতু বেশ কিছু এলাকায় সূর্য রশ্মি সরাসরি এসে পড়ে না, তাই সূর্যের বিকিরণগত পরিবর্তনও সেখানে কম হওয়ার সম্ভাবনা। আর তাতেই ফসিল অবিকৃত থাকবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। আর চন্দ্রযান ২-এর অভিযাত্রী যান প্রজ্ঞান আধুনিক প্রযুক্তি মারফত খুঁজে বার করবে সেই তথ্যই। অন্তত এমনই আশা করে ৮৫১ কোটি টাকার এই প্রকল্প পরিকল্পনা করেছে ইসরো। সেই সঙ্গে চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান ১ যে জলকণার সন্ধান পেয়েছিল তা নিয়ে আরও বিশদ গবেষণা করবে চন্দ্রযান ২। এর মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বরফের অস্তিত্ব সন্ধান করার চেষ্টা যেমন থাকবে তেমনই থাকবে চাঁদের মাটিতে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ ও রাসায়নিকের সন্ধানের চেষ্টাও। সেই সঙ্গে চাঁদের মাটিতে একটি বিশেষ গভীরতা পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে তার তাপমাত্রা, কম্পনের প্রতিক্রিয়াও জানার চেষ্টা করবে চন্দ্রযান ২-এর চন্দ্র অভিযাত্রী যান প্রজ্ঞান। আর এই সবকিছুই হবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে।

চাঁদের এই এলাকা পৃথিবী থেকে আমাদের চোখে পড়ে না। দক্ষিণ মেরুতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোনও দেশ পদার্পণ করতে পারেনি। ইসরো সেখানেই গিয়ে ঘাঁটি গড়ার স্বপ্ন দেখছে। যে স্বপ্ন সফল হতে পারে চন্দ্রযান ২ সফল হলে। অবশ্য ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পদার্পণকারী প্রথম দেশ নয়। এর আগে এবছর ফেব্রুয়ারিতে চিনের চাঙ্গে ফোর রোভার পৌঁছে গিয়েছে সেখানে। ভারত দ্বিতীয়। তবে সব কিছু পরিকল্পনামাফিক চললে এই কৃতিত্ব জুটত ভারতের কপালেই।

আসলে এই অভিযান হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। সেই অভিযানে ভারতকে সাহায্য করার কথা ছিল রাশিয়ার। ঠিক ছিল যে ল্যান্ডার চন্দ্রপৃষ্ঠে সফট ল্যান্ডিং করবে সেটি তৈরি করবে রাশিয়া। কিন্তু, শেষ মূহূর্তে ২০১১ সালে রাশিয়া জানিয়ে দেয়, তাঁদের পক্ষে ওই ল্যান্ডার তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই ভারত একা ওই মিশন সম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক হয় ইসরোই ল্যান্ডার তৈরি করবে চন্দ্রযান ২-এর। আর সেইসব প্রস্তুতি শেষ করতেই সামান্য দেরি হয়ে যায় ভারতের।

তবে তাতে চন্দ্রযান ২ অভিযানের গুরুত্ব বিন্দুমাত্র কমছে না। বরং দেশ বিদেশের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ভারতের এই চন্দ্র অভিযান তাদের চাঁদে অভিযাত্রী পাঠানোর লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে। একই সঙ্গে দেশ-বিদেশের মহাকাশ সংস্থাগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কও আরও জোরদার হতে চলেছে। প্রথমত, চন্দ্র অভিযানের অনেক নতুন তথ্য ভারতের হাতে থাকবে বলে। দ্বিতীয়ত, এই অভিযানে নাসাকেও সাহায্য করছে ভারত। যে ১৪টি পে-লোড নিয়ে চন্দ্রযান চাঁদে যাচ্ছে, তার মধ্যে একটি নাসার। প্যাসিভ পে-লোড। তাই নাসার সঙ্গেও সম্পর্ক মজবুত হবে ইসরোর।

প্রসঙ্গত, ৫০ বছর আগে ১৯৬৯ সালে যেদিন অ্যাপোলো ১১ অভিযানে রওনা হয়েছিলেন নিল আর্মস্ট্রং, বাজ অলড্রিন এবং মাইকেল কলিন্স, তার ঠিক একদিন আগেই চন্দ্রযান ২ রওনা হচ্ছে চাঁদের উদ্দেশে।

চাঁদের মাটিতে বরফ খুঁজবে চন্দ্রযান ২। সঙ্গে খুঁজবে পৃথিবীর সৃষ্টির সময়ের আদি তথ্যও মোট তিনটি অংশ নিয়ে তৈরি এই চন্দ্রযানে থাকছে চাঁদকে আবর্তনকারী অরবিটার। ল্যান্ডার বা চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণকারী যার নাম দেওয়া হয়েছে বিক্রম। আর রোভার বা চন্দ্র অভিযাত্রী যান যার নাম দেওয়া হয়েছে প্রজ্ঞান।

কী করবে
টোপোগ্রাফি– চাঁদের ভূপৃষ্ঠের গঠন ও উপাদানগত তথ্য সংগ্রহ।
মিনেরোলজি– খনিজ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ।
সারফেস কেমিক্যাল– চাঁদের ভূস্তরে রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি পরীক্ষা।
থার্মোফিজিক্যাল ক্যারেকটারিস্টিক– তাপের প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা। চাঁদের এক্সো মণ্ডলের পরীক্ষা নীরিক্ষা।

কেন গুরুত্বপূর্ণ

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে দ্বিতীয় দেশ হিসাবে সফট ল্যান্ডিং করবে ইসরো। এর আগে চিন পাঠিয়েছে ‘চাঙ্গে ফোর’ রোভার।
এছাড়া চাঁদে সফট ল্যান্ডিং করা দেশগুলির মধ্যেও চতুর্থ স্থান অধিকার করতে চলেছে ভারত। এর আগে আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চিনই চঁাদের সফট ল্যান্ডিং করেছে। এই অভিযানে ইসরো সফল হলে ভারত চাঁদে প্রথম বড় পদক্ষেপ করবে বলে মনে করছে মহকাশ বিজ্ঞানীদের মহল।

কখন ও কোথা থেকে অভিযান

সোমবার ১৫ জুলাই ভোর রাত ২.১৫ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার।

কবে পৌঁছাবে

চাঁদের মাটিতে ৬ থেকে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ল্যান্ড করার কথা।

কীভাবে পৌঁছাবে
জিএসএলভি এমকে থ্রি এম ওয়ান যার ডাকনাম ইসরো দিয়েছে ‘বাহুবলী’ চন্দ্রযান ২কে পৌঁছে দেবে পৃথিবীর পার্কিং কক্ষপথে।
এখান থেকে শুরু হবে চন্দ্রযান ২-এর যাত্রা। পরে চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। তারপর চন্দ্রপৃষ্ঠে কোমল অবতরণ বা সফট ল্যান্ডিং করবে বিক্রম। অবতরণ সফল হলে এই বিক্রমের ভিতর থেকেই চন্দ্রপৃষ্ঠে বেড়িয়ে আসবে চন্দ্র অভিযাত্রী যান বা রোভার প্রজ্ঞান

কোথায় ল্যান্ডিং

দক্ষিণ মেরুর ম্যাঞ্জিনাস সি এবং সিম্পলিয়াস এন ক্র‌্যাটারের এর মাঝ বরাবর সফটল্যান্ডিং করবে বিক্রম। জায়গাটি চাঁদের উঁচু সমতল এলাকা।

প্রস্তুতি ও খরচ 

রবিবারই লঞ্চপ্যাডে নিয়ে আসা হয়েছে চন্দ্রযান ২-এর বাহক রকেট জিএসএলভি এমকে থ্রি এম ওয়ানকে। ল্যান্ডার রোভার এবং অরবিটার ত্রয়কেও পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জুড়ে দেওয়া হয়েছে একে অপরের সঙ্গে। ৮৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ। যার মধ্যে শুধুমাত্র উৎক্ষেপণেই খরচ হবে ৩৭৫ কোটি টাকা।

ওজন

মোট ৩৮৭৭ কেজি ওজনের ভার নিয়ে আকাশ উড়বে বাহুবলী। এর মধ্যে অরবিটারের ওজন ২৩১০ কেজি। ল্যান্ডার বা বিক্রমের ওজন ৯৪০ কেজি। আর রোভার বা প্রজ্ঞানের ওজন ২৫ কেজি।

কতদিন আকাশে অরবিটার চাঁদকে আবর্তন করবে?

এক বছর ধরে। তবে বিক্রম আর প্রজ্ঞান চন্দ্রপৃষ্ঠে থাকবে এক চন্দ্রদিন অর্থাৎ পৃথিবীর হিসাবে ১৪ দিন পর্যন্ত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ