Advertisement
Advertisement

Breaking News

বিকিনি

সমুদ্রতটে বিকিনি বিপ্লব, বাঙালি এখন টু-পিস প্রেমী

বাঙালি এখন বিকিনিতেও বিন্দাস।

Bengali women like various types of Bikini for beach destination
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:April 18, 2019 6:01 pm
  • Updated:April 18, 2019 6:01 pm

বাঙালি এখন বিকিনিতেও বিন্দাস। রাখাঢাকা সুইমসুট ছেড়ে এই গরমে তাদের প্রিয় খোলামেলা টু-পিস।

গত মার্চে থাইল্যান্ড বেড়াতে গিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। সঙ্গে চার বান্ধবী। টপ, শর্টস, সানস্ক্রিনের সঙ্গে সবার সুটকেসে ছিল সুইমসুট। আগেকার দিনের মতো ঢাকাঢুকি দেওয়া ওয়ান-পিস নয়। চারটে ক্রিকোণ আর কয়েক হাত সুতোওয়ালা খোলামেলা, জেনুইন বিকিনি। সেই বিকিনিতে সমুদ্রস্নান হয়েছে, প্রচুর ছবি তোলা হয়েছে, হয়েছে ইনস্টাগ্রাম-ফেসবুক টাইমলাইনে তোলপাড়ও। না, প্রিয়াঙ্কা কোনও মডেল বা অভিনেত্রী নন। মধ্য তিরিশের বাঙালিনী পেশায় কর্পোরেট কর্মী। তাঁর বান্ধবীদের কেউ আইটি অফিসে চাকরি করেন, কেউ ফ্রিলান্স ফোটোগ্রাফার, কেউ সোশ্যাল মিডিয়া এক্সপার্ট।

Advertisement

বাঙালির বিকিনি-বিলাসের দৃশ্যটা কি দশ বছর আগেও কল্পনা করা যেত? সমুদ্রস্নান বা বিচে বেড়ানো মানে বাঙালি মহিলার ভরসা ছিল পুরনো সালওয়ার-কামিজ। একটু ‘মডার্ন’ হলে শর্টস আর টি-শার্ট। ফিগার ভাল হলেও বিকিনি পরার কথা ভাবা যেত না। কারণ সেই পুরনো লাইন- ‘লোকে কী বলবে?’ কিন্তু এখনকার বাস্তব হল, বিকিনি আর বাঙালির মধ্যেকার ব্যবধানটা কমতে কমতে টু-পিসের সুতোর মতোই দাঁড়িয়েছে। কেন?

Advertisement

মাই ওয়ে অর দ্য হাইওয়ে
আধুনিক সমাজের সবচেয়ে জোরালো রিংটোন হল- আমি নিজের ইচ্ছেমতো বাঁচব। তাতে তোমার কী মনে হল, আই জাস্ট ডোন্ট কেয়ার। এই মনোভাব যত বেশি শিকড় ছড়াচ্ছে, তত কমছে নিজেকে নিজে ‘লোকে কী ভাববে’ প্রশ্ন করা। বিকিনি পরে ট্রোলড হয়ে দীপিকা পাড়ুকোন যদি জোরদার পাল্টা দিতে পারেন, তাহলে আমি-আপনি কেন স্লাট শেমিংয়ের ভয়ে গুটিয়ে থাকব?

ফিটনেস ফ্রিক
মাংস-ভাত খেয়ে দুপুরে ‘গড়িয়ে নেওয়া’-র মানসিকতা শুধু ব্যাকডেটেড নয়, অত্যন্ত আনহেলদি। স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রজন্মে ‘ইন’ থাকতে গেলে ফিট থাকা মাস্ট। আর কষ্ট করে ভোরবেলা উঠে, জিমে গিয়ে ঘাম ঝরিয়ে যে ফাটাফাটি ফিগারটা বানিয়েছেন, সেটাকে কেন জিনস আর টপের তাঁবুতে লুকিয়ে রাখবেন? ওয়েন ইউ হ্যাভ ইট, ফ্লন্ট ইট!

[ আরও পড়ুন: নববর্ষে ঐতিহ্য, বাঙালিয়ানা আর আধুনিকতার মিশেলেই হয়ে উঠুন অনন্যা ]

সোশ্যাল মিডিয়া গার্ল গ্যাং
ইনস্টাগ্রাম-ফেসবুকের সৌজন্যে গোটা বিশ্ব এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। বালিগঞ্জের বাবলি যদি বিকিনি পরা নিয়ে কিন্তু-কিন্তু করেও, তাকে সাহস জোগাতে তৈরি মায়ামির মারিয়া। সহানুভূতি আর উৎসাহ স্রেফ একটা ক্লিক দূরে।

প্লাস সাইজ রেভোলিউশন
বাঙালি শরীরের গড়ন সাধারণত একটু ভারীর দিকে। যতই জিম আর ডায়েট করুন, সাইজ জিরোর মোক্ষ বেশির ভাগ বাঙালি মেয়ের অধরা থেকে যায়। তাতে কিন্তু কিচ্ছু আসে-যায় না। আন্তর্জাতিক র‌্যাম্পে ‘কার্ভি’ ইজ ইন। তাই হেভি বাস্ট বা ভারী নিতম্বকে হার্ডল না ভেবে ভালবাসুন। ফোটোশপ করা ম্যাগাজিন কভার গার্ল নয়, মাথায় রাখুন গ্রিক সুন্দরীদের স্ট্যাচু।

হাতের নাগালে বিদেশ
বিকিনি বিপ্লবের অন্যতম বড় কারণ, সাউথ-ইস্ট এশিয়ার তাবড় তাবড় বিচ ডেস্টিনেশন বাঙালির সাধ্যে এসে যাওয়া। অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয়, দিল্লি-মুম্বইয়ের চেয়ে ব্যাংকক রাউন্ড ট্রিপের খরচ কম পড়ে। বাঙালি ব্যাংকক-পাটায়া-বালি-লাংকাওয়ি যাচ্ছে, বিকিনিতে স্বচ্ছন্দ বিদেশিনীদের দেখছে আর দেশে ফিরছে এই সংকল্প নিয়ে যে, পরের থাইল্যান্ড ট্রিপে শর্টস-টিশার্ট নয়, আমিও বিচে ঘুরব বিকিনি পরে।

bikini

এক্সপার্ট টিপস

অভিষেক দত্ত (ফ্যাশন ডিজাইনার)

  • রিসর্টওয়্যার কেনার আগে, জানতে হবে কী ধরনের রিসর্টওয়্যার আপনাকে মানাবে।
  • সবথেকে পপুলার রিসর্টওয়্যার হল বিকিনি।
  • মনোকিনিও রয়েছে। তবে, মনোকিনি ওয়ান পিস হয়।
  • রয়েছে লিও টার্ড। এটা সামনে ব্যাকলেস আর সাইড থেকে বাঁধা।
  • খুব ইচ্ছে হল আর বিকিনি পরলেন, তা না করে দেখুন বিকিনিতে আপনি কতটা কমফর্ট ফিল করছেন।
  • বিকিনির সঙ্গে শিয়ার লেয়ারিং করাতে পারেন। লং শার্ট বা জ্যাকেটও পরতে পারেন।  
  • যখন পুলে থাকছেন না, তখন বিকিনির ওপর শার্ট বা লং জ্যাকেট পরে নিন।
  • যে কোনও রিসর্টওয়্যারে কাফতান এখন ভীষণ পপুলার।
  • রিক্লাইনারে রিল্যাক্স করার সময় বা রিসর্টের আশপাশে ঘোরার সময় বিকিনির ওপর ম্যাক্সি ড্রেসও পরতে পারেন। শর্টস বা হটপ্যান্টও পরতে পারেন।
  • এখন ভীষণ ইন জ্যাকেটের সঙ্গে সরঙ্গ। ডিজিটাল প্রিন্টের সরঙ্গে বেশ ব্রাইট লাগে।
  • রিসর্টওয়্যারের কালার নিয়েও একটু ভাবতে হবে।
  • আমি বলব, ব্রাইট কালার যেমন অরেঞ্জ, রেড, অ্যাকোয়ামেরিন এই রংগুলো বাছুন। সি-গ্রিন বা ব্লুও ভাল লাগবে।
  • যদি ব্রাইট কালার আপনার পছন্দ না হয়, তাহলে প্যাস্টেল কালারও পরতে পারেন। কোরাল পিঙ্ক, লাইট ব্লুও ভাল লাগবে।
  • রিসর্টওয়্যারের সঙ্গে অ্যাকসেসরিজ মাস্ট। সানগ্লাস সঙ্গে রাখুন। ইয়ার রিং যেন অ্যাক্রিলিকের হয়। এটা ওয়াটার প্রুফ।

অনিরুদ্ধ চাকলাদার (মেক-আপ আর্টিস্ট)

  • রিসর্ট তো আসলে রিল্যাক্স করার জায়গা। এখানে যদি কেউ একঘণ্টা ধরে সাজে তাহলে রিল্যাক্স কখন করবে?
  • আমি তাই লাউড মেক-আপ না, হাল্কা মেক-আপ করার কথা বলব।
  • মেক-আপ এর আগে অবশ্যই সান-স্ক্রিন লাগাতে হবে।
  • যদি কেউ মেক-আপ না করতে চান তাহলে শুধু সান-স্ক্রিন লাগাতে পারেন।
  • আই-শ্যাডো যেন ন্যাচারাল হয়।
  • যদি কেউ চান কালারড লাইনার ব্যবহার করতে পারেন।
  • আই-শ্যাডো, লাইনার ওয়াটার প্রুফ হতে হবে। আর লিপস্টিক হবে গ্লসি ন্যুড।

[ আরও পড়ুন: ঘুমের আগে সামান্য চর্চা, পার্লার এড়িয়ে সহজে পান উজ্জ্বল-দীপ্তিময় ত্বক ]

বিকিনির ইতিহাস

  • বিকিনি ধাঁচের পোশাকের প্রথম আবির্ভাব খ্রিস্টপূর্ব ৫৬০০ সালে। রোমান রাজত্বেও এ ধরনের পোশাক পরে অ্যাথলেটিক ইভেন্টে নামতেন মহিলারা।
  • আধুনিক বিকিনির স্রষ্টা ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার লুই রিয়ার্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কাপড়ের অভাব এই সৃষ্টির অন্যতম কারণ। ১৯৪৬ সালের ৫ জুলাই এই বিকিনি মডেল করেন মিশেলিন বের্নার্ডিনি। ‘বিকিনি’ নামটা ধার করা হয় বিকিনি অ্যাটল থেকে, যেখানে তখন অ্যাটম বোমার পরীক্ষা চলছিল।
  • প্রথম দিকে খোলামেলা এই পোশাক খোলা মনে মেনে নিতে পারেনি সমাজের একটা বড় অংশ। তবে ব্রিজিট বার্ডো, রিটা হেওয়ার্থ, আভা গার্ডনারের মতো হলিউড সুন্দরীরা বিকিনিতে আত্মপ্রকাশ করে গিয়েছেন।
  • ১৯৬২ সালে জেমস বন্ড ফিল্ম ‘ডক্টর নো’-তে আর্সুলা অ্যান্ড্রেসের বিকিনি সিন হয়ে ওঠে আইকনিক। চার বছর পরে ‘ওয়ান মিলিয়ন ইয়ার্স বি.সি.’ ফিল্মের পোস্টারে ফার বিকিনি পরা রাকেল ওয়েলচ হয়ে ওঠেন ছয়ের দশকের সবচেয়ে লাস্যময়ী পিন-আপ গার্ল।
  • ভারতীয় স্ক্রিনে বিকিনির প্রথম আবির্ভাব শর্মিলা ঠাকুরের গা লেপটে। ‘অ্যান ইভনিং ইন প্যারিস’ ফিল্মে, ১৯৬৭ সালে। ‘ফিল্মফেয়ার’ ম্যাগাজিনে তাঁর বিকিনি শুটও কাঁপিয়ে দিয়েছিল দেশকে। তার পর পরভিন বাবি, জিনাত আমন, ডিম্পল কাপাডিয়ার শরীর আঁকড়ে বলিউডে জাঁকিয়ে বসে বিকিনি।
  • প্রাথমিক বিতর্ক কাটিয়ে বিংশ শতকের শেষে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিচওয়ের হয়ে ওঠে বিকিনি।

বিকিনি ১০

স্ট্র‌্যাপলেস
‘বেওয়াকুফিয়া’ ছবিতে সোনম কাপুরকে এই ধরনের বিকিনিতে দেখা গেছে। হেভি বাস্ট হলে এই ধরনের বিকিনি পরতে পারেন।

মাল্টিস্ট্রিং
এই ধরনের বিকিনিতে ব্রায়ের সঙ্গে অনেকগুলো স্ট্র‌্যাপ থাকে। যাদের কাঁধ খুব চওড়া তাদের এই ধরনের বিকিনি পরলে ভাল লাগে।

স্ট্রিং
শরীরের অনেকটা অংশ খোলা থাকে। ঠিকভাবে ক্যারি করতে পারাটা জরুরি।

মাইক্রোকিনি
জাস্ট দড়ি বাঁধা তিন টুকরো কাপড়। শুধু সাহসী হলেই চলবে না। ভাল হাইটও থাকা দরকার।

ট্যানকিনি
মোটা স্ট্র‌্যাপের ট্যাঙ্ক টপ সঙ্গে একই রঙের বা কনট্রাস্ট বটম। যে কোনও বডিশেপেই এই ধরনের বিকিনি ভাল লাগে।

হাইনেক
হাইনেক টিউব আর বিকিনি বটম। সাঁতার বা যে কোনও ওয়াটার স্পোর্টসের জন্য এই রকম বিকিনি প্রয়োজন।

ট্রিকিনি
এই বিকিনি পরতে হলে বেশ স্কিনি হতে হবে।

স্লিং
ওয়ানপিস সুইমওয়্যার। টিউবের স্ট্র‌্যাপ গলার চারপাশ থেকে পিঠের নীচের দিকে নেমে যায়।  

হাই-ওয়েস্ট
খোলামেলা নয়। বটম হাইওয়েস্ট হয় আর ওয়েস্টলাইনকে কভার করে রাখে।

ফ্রিঞ্জ
বেশ ফ্যাশনেবল। ফ্রিঞ্জ করা টপ আর বিকিনি বটম।

bikini

বিকিনি ডেস্টিনেশন

গোয়া, গোয়া, গোয়া। বাকি দেশের চেয়ে একেবারে আলাদা নিয়ম মেনে চলে পশ্চিম ভারতের এই বিচ ডেস্টিনেশন। বিদেশি টুরিস্টে ভরতি গোয়া তাই বিকিনি পরার জন্য আদর্শ। তবে সাবধান, সব বিচে বিকিনি পরে খুব স্বচ্ছন্দ না-ও হতে পারেন। বাগা আর পাঞ্জিম যেমন খুব ঘিঞ্জি। স্বল্পবসনা মহিলা দেখলে দুমদাম মোবাইল ক্যামেরা তাক করা বা অশালীন মন্তব্য উড়ে আসতে পারে। আগোন্ডা, আরামবোল, কোলভা, অঞ্জুনা বা আশভেম বিচে বিকিনি-বিলাস সম্ভব। গোয়ার বাইরে বিকিনি ডেস্টিনেশন বলতে আন্দামান আইল্যান্ডস। দেশের ফাইভ স্টার হোটেলের সুইমিং পুলে অনায়াসে বিকিনি পরে নামা যায়। তা ছাড়া যে সব সি-রিসোর্টের প্রাইভেট বিচ আছে, সেখানেও নিশ্চিন্তে বিকিনি পরে ঘুরতে পারেন।

বিকিনি চেকলিস্ট

  • সাইজ জিরো না হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু টোনড ফিগার মাস্ট। বিশেষ নজর দিন পেট আর পায়ের দিকে।
  • স্কোয়াট আর লাঞ্জ, বিকিনি বডির জন্য আদর্শ দুটো এক্সারসাইজ।
  • বিকিনি পরার দিনকয়েক আগে খাবার থেকে নুন বাদ দিন। এতে ব্লোটিং কমে শরীর টানটান দেখাবে।
  • ওয়্যাক্সিং না করিয়ে বিকিনি পরবেন না। দরকারে বিকিনি ওয়্যাক্স করাতে পারেন। শহরের অনেক স্যালঁয় বিকিনি ওয়্যাক্স করানো হয়।
  • সানস্ক্রিন মাস্ট। শরীরে গ্লো আনতে বেবি অয়েল জেল ব্যবহার করতে পারেন।
  • বডি টাইপ অনুযায়ী বিকিনি বাছুন।
  • অ্যাক্সেসরি হিসেবে হালকা ব্রেসলেট আর অ্যাঙ্কলেট পরা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি দরকার কনফিডেন্স।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ