ছবি: ইনস্টাগ্রাম
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সত্যি কথা বলতে গরমকাল যতই জীবনে নানা অসুবিধার সৃষ্টি করুক না কেন, যতই গলদঘর্ম অবস্থা হোক না কেন এই মরশুমের একটাই গুণ যে এই সময়ে বাজার ভরে যায় নানারকম ফলে। সেরকমই গরমের একটি ফল, যা দেখতে এক্কেবারে ধবধবে সাদা। ভিতরে মিষ্টি জল। ডুমোডুমো নরম। গালে ঢোকালেই রসে ভরপুর। বাংলার অন্যতম পছন্দের এই ফলটি বাজারে মেরেকেটে এক মাসের জন্য পাওয়া যায়। আবার মাসখানেকের মধ্যেই ফলটি হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। কোন ফলের কথা বলছি ভাবছেন? সেটা হল তালশাঁস। যা পাওয়া যায় এই সময়টায়। মরশুম চলে গেলে তখন আর মাথা খুঁড়লেও কিন্তু আগামী এক বছরের মধ্যে ফলটি আর পাওয়া যাবে না।
এই একটি মাসেই বাঙালি-অবাঙালি সকলের মজ্জায় ঢুকে রয়েছে তালশাঁস খাওয়া। এই ফলটির আদলে তৈরি তালশাঁস সন্দেশ। বাজারে যার জনপ্রিয়তা রয়েছে সারা বছরেই। এই মুহূর্তে শহরাঞ্চলের পাশাপাশি বাংলার গ্রামগঞ্জের বাজারগুলিতে ঢেলে বিকোচ্ছে তালশাঁস। ফলে ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে উঠেছে। বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে, তালশাঁস বিক্রেতাদের হাতের বিরাম নেই। ধারালো কাটারির একের পর এক কোপে কচি তালের খোসা ছেড়ে বেরিয়ে আসছে ডুমোডুমো রসালো ফলটি। আর শুধু তা পাত্রে পড়ার অপেক্ষা! মুহূর্তের মধ্যেই উধাও হচ্ছে তালশাঁস। পিস দরে তা বিক্রি হচ্ছে। কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে, রীতিমতো লাইন দিয়ে তালশাঁস কিনছেন ক্রেতারা। কোথাও বিক্রি হচ্ছে তিনটি ২০ টাকা। আবার কোথাও দশটি ৫০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, দামের ফারাক নির্ভর করছে তালশাঁসের সাইজের উপর।
উত্তর শহরতলি রাজারহাট, নিউটাউন, বাগুইআটি, কেষ্টপুর, উল্টোডাঙা, নাগেরবাজার-সহ কলকাতার বিস্তীর্ণ বাজারজুড়ে রমরম করে বিক্রি হচ্ছে তালশাঁস। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না কচি তাল। ফলে চড়া দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তালশাঁস। বাজারে গিয়ে ক্রেতারা অনেকেই দাম কমানোর কিংবা সংখ্যায় এক-দুটি বাড়িয়ে দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছেন। কিন্তু তাতে একেবারেই নারাজ বিক্রেতারা। তাঁদের বক্তব্য, নিউটাউন ও কলকাতা শহরতলির দূরবর্তী হাড়োয়া, ভাঙড়, গ্রামীণ রাজারহাটের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে তাল সংগ্রহ করে আনতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তবে কি তালের ফলন কমেছে? ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফলন কম ঠিক বলা যাবে না। ‘একপায়ে দাঁড়ানো’ এই গাছে উঠে তাল পাড়ার গাছাড়ির সংখ্যা একেবারেই কমেছে। আর দুই-একজন যাঁরা রয়েছেন তাঁদের মজুরি দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। আবার চাষিদের থেকে তাল কেনা, বহন, বাজারের ভাড়া ইত্যাদি খরচ রয়েছে। তাই খোলা বাজারে তালশাঁসের দামও বেড়েছে। রাজারহাট ব্লকে এক ব্যবসায়ী শফিয়ার মণ্ডল জানিয়েছেন, “চাষিদের কাছ থেকে একশো তাল কিনতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৭০০ টাকা। ভালো প্রজাতির তালের দাম প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত। তাই খোলা বাজারে তালশাঁস বিক্রিতে দামও বেড়ে গিয়েছে।” বিক্রেতারা অনেকেই জানিয়েছেন, মরশুমের এক মাসেই তালশাঁসের ব্যবসা হয়। আর এই উপার্জনের ভরসায় কোনওক্রমে পরিবার চলে যায়। লাভের টাকা কিছুই থাকে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.