সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘অল্পেতে খুশি হবে দামোদর শেঠ কি? মুড়কির মোয়া চাই, চাই ভাজা ভেটকি।’
দামোদর শেঠ খুশি হবেন কি না জানা নেই, তবে কলকাতার বাসিন্দারা যে স্বল্প পেটপুজোয় ক্ষান্ত হন না, তা বোধহয় বাজি ধরেই বলা যায়! আর হবেনই বা কীভাবে, শহরজুড়ে ছড়িয়ে মণিমাণিক্য খচিত একাধিক দোকান। উত্তর কলকাতার কথাই ধরা যাক, ভাজাভুজি থেকে মিষ্টি, কষা মাংস থেকে ছানায় পায়েস, কী নেই সেখানে! এক-একটি দোকানের স্পেশালিটি আলাদা আলাদা।
চলুন, আজ শ্যামবাজার চত্বরের এমনই কিছু দোকানের হদিশ দেওয়া যাক। শ্যামবাজার মোড় থেকে রামদুলাল সরকার স্ট্রিট, কমবেশি ২ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে নতুন-পুরনো দোকানের বিপুল সম্ভার।
শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়, ঠিক যেখান থেকে বিধান সরণী শুরু হয়েছে সেখানেই রয়েছে নিউ পাঞ্জাবি হোটেল। আসল নাম বললে চিনতে পারা কঠিন। আদরের নাম- গোলবাড়ি। এখানকার বিখ্যাত খাবার পরোটা আর কষা মাংস। এছাড়া কাটলেট, মাটন চপ আরও অনেক কিছু পাওয়া যায়। তবে দিনে দিনে কুলীনতা হারাচ্ছে এই ঐতিহ্যমণ্ডিত দোকান। বদলে কষা মাংসের খ্যাতি ছড়াচ্ছে উলটো দিকে থাকা রূপা হোটেলের। সেখানকার রুমালি রুটি আর কষা মাংস, গোলবাড়ির পুরনো স্বাদ মনে করিয়ে দেয়।
নিরামিষাশীরা হতাশ হবেন না। শ্যামবাজার মোড় থেকে বিধান সরণী ধরে কয়েক পা এগোলেই ডান হাতে পড়বে এই এলাকার একমাত্র ভেজ রেস্তরাঁ ‘ডিমপি’। ধোসা থেকে নুডলস, লস্যি থেকে পোলাও সব ধরনের খাবার পাবেন এখানে। আর দামও সাধ্যের মধ্যে।
চাইনিজ খাবারের স্বাদ নিতে যাওয়া যায় কে.সি. দাস শপিং মলের উলটোদিকের গলিতে। সেখানেই রয়েছে বেশ পুরোনো, ছোট, ঘরোয়া রেস্তোরাঁ ‘মোম্বাসা’। কম খরচে ফ্রায়েড রাইস আর চিলি চিকেন, কিংবা স্যুপ। পকেট আর পেট দুটোই খুশি।
ফড়িয়াপুকুর মোড়ের ডান দিকের গলির মুখে রয়েছে ‘সঞ্জীবনী কেবিন’। আর গলির একটু ভেতরে গেলে ‘প্রিয়া’ হোটেল। এখানকার রকমারি মাছের পদগুলোর স্বাদ খুব ভালো। দুপুরবেলা বাঙালি পদ দিয়ে ভুরিভোজ চলতেই পারে। তবে এসি-র ঠান্ডা হাওয়া পাবেন না। রাতে এদের চিকেন-তরকা আর রুমালি রুটি’র কম্বো জাস্ট দুর্দান্ত।
ফড়িয়াপুকুরের পাশের গলির মুখেই রয়েছে মিষ্টি দইয়ের অন্যতম ঠিকানা, ‘অমৃত’। আরেকটু ভিতর গেলে পড়বে ‘সেন মহাশয়’। বহু পুরনো এই দোকানের মিষ্টি ছাড়াও রাধাবল্লভী বেশ খ্যাত।
একটু দূরেই রয়েছে শিকদারবাগান। এখানেই রয়েছে ‘আদি মালঞ্চ কর্মিবৃন্দ রেস্টুরেন্ট’। সন্ধেবেলা চপ-চিকেন কাটলেট আর মাটন কবিরাজি মন জিতে নেবে। টাউন স্কুলের গলির মুখেই জিভে জল আনা ফুচকার দোকান। এই গলি দিয়ে একটু ঢুকলেই পরপর অনেকগুলো রেস্তরাঁ। পুরোনোদের মধ্যে আছে ‘সুতানুটি’, ‘গজব’ আর ‘মাদ্রাজ টিফিন’, অপেক্ষাকৃত নতুন ‘আরসালান’। এখানকার একমাত্র দক্ষিণ-ভারতীয় খানার ঠিকানা ছিল মাদ্রাজ টিফিন।
বন্ধ হয়ে যাওয়া রাধা হলের নিচে রয়েছে অর্ধ শতাব্দি পুরনো ‘কে.সি. গোপ’। মিষ্টি ছাড়াও রাধাবল্লভী-আলুর দম, ধোকলা, কুলফি মালাই, লস্যি জিভে জল আনে।
হাতিবাগান মোড় থেকে ডানদিকে একটু এগোলেই ‘নব মালঞ্চ’। পঞ্চাশ ধরে চপ-কাটলেট-মোগলাই-চাউমিনের প্রাপ্তিস্থল। হাতিবাগান মোড় থেকে কর্পোরেশন বিল্ডিংকে বাঁ দিকে রেখে এগিয়ে গেলে বন্ধ হওয়া ‘রূপবাণী’ সিনেমাহলের পাশেই ‘সাগর রোল সেন্টার’। উলটোদিকে, ‘ফিউশন’ রেস্তরাঁ। গ্রাউন্ড ফ্লোরে রোল-সেন্টার আর টেক-অ্যাওয়ে। উপরে বসে খাওয়ার জায়গা। মোগলাই থেকে চাইনিজ সবরকম পদই পাওয়া যায়।
আরও কিছুটা এগোলে রাস্তার ডানদিকে পড়বে ১০০ বছরেরও বেশি পুরোনো তেলেভাজার দোকান, ‘লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ এন্ড সন্স’। আলুর চপ, পিঁয়াজি, ধোকা, বেগুনি, পনীর-চপ, ডালবড়া অনেককিছুই মেলে এখানে। উলটো দিকে ‘রক্ষাকালী নিরামিষ তেলেভাজা’র দোকান। এদের ভাঁড়ারে হেলেঞ্চা পাতার চপ, পলতা পাতার চপ, কাঁচা আমের চপ এরকম অনেক চপ পাওয়া যায় এখানে, সচরাচর অন্য দোকানে যা পাওয়া যায় না।
লক্ষ্মীনারায়ণ সাউয়ের চপের দোকানের ঠিক পাশের গলি দিয়ে ঢুকে হরি ঘোষ স্ট্রিটে পড়লেই বাঁদিকে শতাব্দী প্রাচীন মিষ্টির দোকান ‘ননীলাল ঘোষ’। প্রায় ১৪০ বছর পুরোনো এই দোকানে এখনও স্বল্পমূল্যে সন্দেশ পাওয়া যায়। একটু এগোলেই বাঁ হাতে পড়বে ভীম ঘোষ স্ট্রিট। এখানেই রয়েছে আরও একটি প্রাচীন ও ছোট্ট মিষ্টির দোকান ‘কাশী নাথ পান’ মিষ্টান্ন ভান্ডার। এখানের বিশেষত্ব হল সাদা মিষ্টি দই।
আবার বিধান সরণী ধরে দক্ষিণদিকে হাঁটলে ডানহাতে পড়বে লস্যির দোকান ‘শিব আশ্রম’। কোলকাতার যে দু-তিনটে দোকান আইনসিদ্ধ ভাবে সিদ্ধি বিক্রয় করে, এটি তার অন্যতম। আর কিছুটা এগোলে হেঁদুয়া। এখানেই একদম মোড়ের মাথায় বামহাতে রয়েছে নিউ ‘বসন্ত কেবিন’। চপ-কাটলেট-চাউমিন ছাড়াও এদের বিশেষ ডিশ মাছের কচুরি। অসাধারণ স্বাদ।
এখান থেকে হেদুয়া পার্ককে বাঁদিকে আর শতাব্দী প্রাচীন বেথুন স্কুল ও ক্রাইস্ট চার্চকে ডানদিকে রেখে এগোলে পড়বে রামদুলাল স্ট্রিট। ডানদিকের গলিতে রয়েছে উত্তর কোলকাতার গর্ব ‘গিরিশ চন্দ্র দে অ্যান্ড নকুড় চন্দ্র নন্দী’। মিষ্টিপ্রেমীদের এই দোকান নিয়ে আলাদা করে কিছু লেখার দরকার পড়ে না। তবে এখানে গেলে ক্ষীরের সিঙারা ‘মাস্ট ট্রাই’। বাইরেটা ক্ষীরের তৈরি আর ভেতরে আলুর পুরের বদলে ড্রাইফুটের পুর।
নকুড় ছাড়াও আরও কয়েকটা প্রাচীন মিষ্টির দোকান আছে। নলিনচন্দ্র দাস, সুবোধচন্দ্র মল্লিক, কালী চরণ দাস, ঘোষ সুইটস। প্রতিটি দোকানের রসগোল্লা, নলেন গুড়ের সন্দেশ, রাবড়ি বেশ ভালো খেতে।
তাই আর দেরি না করে বন্ধু বা প্রিয়জন কিংবা পরিবারকে নিয়ে এই চত্বরে ‘ফুড হপিং’ সেরেই ফেলুন। শেষে অবশ্য অ্যান্টাসিড খেতে ভুলবেন না যেন!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.