অতিরিক্ত স্থূলতা শিশুদের একটি অন্যতম সমস্যা। এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে থাবে। একগুচ্ছ অসুখের বীজ লুকিয়ে শৈশবের অনিয়ন্ত্রিত ওজনে। তাই খুব বুঝে চলার পরামর্শ দিলেন পেডিয়াট্রিশিয়ান ডা. অঙ্কিতা দত্ত (M.B.B.S. MD Paediatrics)।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের(W.H.O) তথ্য, এদেশে ৫ বছরের কম বয়সি প্রতি ৩ জন শিশুর মধ্যে একজনের স্থূলতার সমস্যা রয়েছে। সেই কারণে ছোট থেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক চাপ কাবু করছে শৈশবকে। মোটা হয়ে গেলে শরীরের পাশাপাশি মনেও নানা চাপ পড়ে। সামান্য একটু মোটা হয়ে গেলেই শুনতে হয়, ‘খাওয়া কমা।’ বারবার এই কথা শুনলে মন খারাপ হবে স্বাভাবিক। খাওয়াটা একটা ফ্যাক্টর ঠিকই, মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা নির্ভর করে আরও বেশ কিছু বিষয়ের উপর। এদেশে শৈশবকালীন স্থূলতা বা চাইল্ড ওবেসিটি বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ২০১৫-‘১৬ সালে স্থূলতার হার ২.১ শতাংশ থাকলেও ২০১৯-২০২১ এর তথ্য অনুযায়ী তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৪ শতাংশ। পরিসংখ্যানটা ছোট মনে হলেও এদেশের জনসংখ্যার নিরিখে এটা অনেকটাই। অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতবর্ষে প্রায় ৩কোটি শিশু ওবিসিটি’তে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে যার অর্থ প্রতি ১০জন শিশুর মধ্যে একজন শিশু ওবিসিটি আক্রান্ত। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে ভবিষ্যতে। ভাবতে পারছেন পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে! খুব সাবধান।
কেন বাড়ছে?
ওবেসিটির সমস্যা অনেকটাই জেনেটিক, অর্থাৎ বাবা-মা মোটা হলে শিশুর গঠন সেরকমই হয়। অধিকাংশে ক্ষেত্রে এই কারণেই শিশুরা মোটা হয়। এছাড়া বর্তমানে জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুডের প্রতি শিশুদের ঝোঁক প্রবল। সারাক্ষণ মোবাইল হাতে, খেলাধুলা নেই। আর বার্গার, পেস্ট্রি, এগরোল, বিরিয়ানি খাওয়ার প্রবণতা। এই দুইয়ের জাঁতাকলে ওজন মাত্রা ছাড়াচ্ছে। আরও একটা ফ্যাক্টর হল নিউবর্নকে এক্সক্লিউসিভ ব্রেস্ট ফিডিং করানোর হার আগের চেয়ে অনেক কমে গিয়েছে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে অনেকেই ব্রেস্ট ফিডিং উপযুক্ত সময় পর্যন্ত শিশুকে করাতে পারেন না নানা কারণে। সেই জায়গায় স্থান পেয়েছে ফরমুলেটেড মিল্ক, যা কিন্তু পরবর্তীকালে শিশুর ওবেসিটির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
কীভাবে বুঝবেন শিশু স্থূল?
মোটা হয়ে যাচ্ছে কিংবা ওজন বেড়ে যাচ্ছে মানেই কিন্তু ওবেসিটি নয়। ডাক্তারি পরিভাষায় কিছু নির্দিষ্ট মাপকাঠি রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) সূচক ২৫ থেকে ৩০-এর মধ্যে থাকলে সেটাকে প্রি-ওবিস এবং ৩০-এর উপর চলে গেলে তাকে ওবিস বলে ধরে নেওয়া হয়। বিএমআই নির্ণয় ছাড়াও রয়েছে অন্য একটি পদ্ধতি। ওয়েস্ট-টু-হিপ রেশিও দেখুন। যদি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলের ক্ষেত্রে ০.৯০ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ০.৮৫ আসে তাহলে সেটা স্বভাবিক। এর বেশি হলেই চিন্তার।
কেন এখন থেকেই সতর্ক হবেন?
ছোটবেলা থেকে ওবেসিটি গ্রাস করলে শরীরে বিপাক হার কমতে থাকে। ফলে ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। টাইপ টু ডায়াবিটিস, পিসিওডি (পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ), হরমোনের ভারসাম্যহীনতার মতো নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সঙ্গে কম বয়সেই শরীরে আসে একাধিক বার্ধক্যজনিত সমস্যা যেমন হাইপার টেনশন, হাই কোলেস্টেরল, ফ্যাটি লিভার, আর্টারিতে ব্লকেজ, স্ট্রোক ইত্যাদি। যা আজকাল মাত্র ২০-৩০ বছর বয়স থেকেই দেখা যাচ্ছে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, হাড়ে ব্যথা, হাঁটুতে ব্যথা, লোয়ার ব্যাকপেন, অবসাদের অন্যতম কারণ শরীরে অতিরিক্ত মেদ।
অবহেলা নয়
সবার প্রথমেই যেটা দরকার তা হল সচেতনতা। বাবা-মা নিজেরাই যদি মোটা হন, তাহলে সবার প্রথম আগে থেকে সজাগ হওয়া উচিত। বাচ্চাদের অভ্যাসে কিছু বদল আনলেই ওবেসিটির বিপদ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। বেশি করে শরীরচর্চা করানো, ব্রেস্ট ফিডিং, বাড়ির খাওয়াদাওয়া করানো উচিত। প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনযুক্ত হেলথ ড্রিঙ্কসের পিছনে যত কম দৌড়বেন তত ভালো। ইনডোর গেম যেমন মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার, ট্যাব নিয়ে যত কম খেলতে দেওয়া যায়, ততই উপকার। এ ছাড়াও যদি কখনও মনে হয় বাচ্চা স্থূল হয়ে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
পরামর্শ: 8585892042
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.