Advertisement
Advertisement

ধন্বন্তরি মিউজিক, জেনে নিন কোন কোন রোগের ওষুধ সুর

বিভিন্ন অসুখের ক্ষেত্রে রোগীদের গান শুনিয়ে সুস্থ রাখার চেষ্টা করা শুরু হয়েছে।

Music therapy to cure ailments
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:March 5, 2019 6:30 pm
  • Updated:March 5, 2019 6:30 pm  

সুর-তাল-ছন্দে মিলিয়ে যাবে যন্ত্রণা। কোন রোগে কেমন গানে মিলবে সেই সুরাহা? জানাচ্ছেন ফর্টিস হসপিটালের বিশিষ্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. সঞ্জয় গর্গ। শুনলেন সুমিত রায়।

সুরমূর্ছনায় যন্ত্রণার মুক্তি! সংগীত এতটাই শক্তিমান। মনের দিক পরিবর্তনে যখন ওষুধ, ডাক্তারবাবু, প্রিয় বন্ধু সবাই ব্যর্থ তখন একটা মিঠে সুর পারে সব ভুলিয়ে নিমেষে জীবনকে আবার নতুন ছন্দে বেঁধে দিতে। এখানেই মিউজিক থেরাপির সার্থকতা। এ শুধু কথার কথা নয়। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় রয়েছে তার বিস্তর প্রমাণও। মস্তিষ্কের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে যায় সুর, দেয় এক অনাবিল শান্তি ও তৃপ্তি। মনের চাপকে দূর করে রোগ জ্বালার তীব্রতা বিলীন করে। এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগিয়ে তোলে শরীরে, মনের খোরাকই হয় সুর। সেই তালে তাল মেলায় মন আর অসুখ বেতাল হয়।

Advertisement

মিউজিক থেরাপি

রোগীকে যখন গান, বাদ্যযন্ত্র বা মধুর আওয়াজ শুনিয়ে তাঁর অসুখ বা রোগের তীব্রতা কমানোর চেষ্টা করা হয় সেটাকে মিউজিক থেরাপি বলে। তবে শুধু মিউজিক থেরাপি করেই রোগ পুরোপুরি সেরে যায় তা নয়। অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গে মিউজিক থেরাপি করলে তবেই ফল মেলে। রোগী সুস্থ হয়। বেশিরভাগ মানসিক রোগীদের সুস্থ করতে মিউজিক থেরাপি ব্যবহার হয়। মিশরে এই মিউজিক থেরাপি করে রোগ সারানোর পন্থা বহু প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। পরবর্তী সময়ে মূলত মিউজিক থেরাপি ব্যবহার হত অপারেশন থিয়েটারে। বর্তমানে সেই সীমারেখা টপকে এখন স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন অসুখের ক্ষেত্রে রোগীদের গান শুনিয়ে সুস্থ রাখার চেষ্টা করা শুরু হয়েছে।

কীভাবে গানেই সুরাহা?

গবেষণায় এমন তথ্যও মিলেছে যে মিউজিক মূলত মানুষের মেজাজ ভাল করে দেয় না। পাশাপাশি যে কোনও প্রাণীর উপরেও এর ভাল প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এমনকী  গাছ-গাছালির উপরও এই মিউজিক থেরাপির প্রভাব পড়ে। যেমন গরুর দুধের পরিমাণ বেড়ে যায় বা গাছের বেশি ফুল বা ফলন হয়। মিউজিক থেরাপি মানুষের মস্তিষ্কে কোনও নির্দিষ্ট জায়গাকে না প্রত্যেকটি ভাগকে উজ্জীবিত করে। সুতরাং মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটি স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। মস্তিষ্কের স্নায়ুকে পুনর্গঠন করে, পুনর্বৃদ্ধি করতে (নিউরো প্লাসটিসিটি) এবং আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

কেন গান শোনানো হয়

মিউজিক থেরাপির ক্ষেত্রে হেড ফোনে গান শোনা নয়, এক্ষেত্রে খুব লঘু সুরের গান ব্যাকগ্রাউন্ডে চালিয়ে রোগীকে শোনানো হয়। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই মিউজিকে খুব একটা কথা থাকে না অর্থাৎ ইনস্ট্রুমেন্টাল মিউজিক শোনানো হয়। আবার এমনও নয় যে কোনও একটা মিষ্টি মিউজিকই একটা কোনও নির্দিষ্ট রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার হবে। সংস্কৃতি, রোগীর বয়স, পরিবেশ অনুযায়ী গান নির্বাচন করা হয়। তবে অবশ্যই এক্ষেত্রে রক কিংবা র‌্যাপ মিউজিক চলে না। মূলত মিউজিকের মধ্যে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত, পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয় সংগীত, পুরনো দিনের গান (কিন্তু উদাসীন গান না), প্রকৃতির আওয়াজ যেমন পাখির ডাক, নদীর জলের আওয়াজ, বৃষ্টির আওয়াজ, সমুদ্রের ঢেউয়ের আওয়াজ ইত্যাদি ব্যবহার হয়।

সপ্তাহান্তে বাড়তি নিদ্রায় সমাধান নেই, বলছে সাম্প্রতিক রিপোর্ট ]

যে অসুখে গান সমাধান

মানসিক চাপ বা স্ট্রেস: এই ক্ষেত্রে রোগীকে রিলাক্সেশন থেরাপি দেওয়া হয় যেটা মূলত মিউজিক থেরাপির সঙ্গে বিভিন্ন ছবি (গাইডেড ইমাজেরি) দেখানো হয়। এইভাবে রোগীকে শান্ত করা হয় যাতে সে নিজের ভিতরে যে ঝড় চলেছে বা যে কারণে সে এত অস্থির সেটা চিকিৎসকের কাছে প্রকাশ করে নিজেকে শান্ত করতে পারে।

অটিজিম: এই রোগের ক্ষেত্রে বাচ্চারা ঠিকমতো সামাজিক যোগাযোগ (সোশ্যাল কমিউনিকেশন) করতে পারে না। আশেপাশের লোকজনের সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলতে পারে না। এক জিনিস বারবার কর়তে থাকে। (রিপিটেটিভ বিহেভিয়ার) এবং তাদের কল্পনা শক্তি অনেক কম হয়। অস্থির হয়ে অকারণে উত্তেজিত বা আক্রমণাত্মক হয়ে যায়। মিউজিক থেরাপি তাদের অনেকটা শান্ত করে। এবং তাদের অন্য মানুষের সাথে যোগাযোগ অনেকটা উন্নতি হয়। এই রোগটা ছোট বয়সে ধরা পড়ে সুতরাং যত কম বয়স থেকে মিউজিক থেরাপি আরম্ভ করা যায় তত ভাল।

ডিমেনশিয়া: এই রোগ বয়স্কদের হয়। অ্যালঝাইমারও এই রোগের একটি রূপ। এই ক্ষেত্রে রোগী তাদের আশেপাশে যা হচ্ছে সেটা ভুলে যায় ও ঠিক মতো বুঝতে পারে না। ফলে তাদের পার্সোনালিটি এবং আচরণ পালটে যায়। এই ক্ষেত্রে রোগী অকারণে উত্তেজিত এবং আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। অনেক সময় কান্নাকাটিও করে। সুতরাং বাড়ির লোক সামলাতে পারে না। এই ক্ষেত্রে মিউজিক থেরাপি করলে রোগীর মেজাজ ভাল হয়। সে শান্ত হয়। নিজের দৈনন্দিন কাজকর্ম করে বা করানো যায় এবং সহযোগিতা করার মনোভাব  জাগে। গবেষণায় তথ্য বলছে ডিমেনশিয়ার ক্ষেত্রে রোগীর হার্ট বা সেরিব্রাল স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মিউজিক থেরাপি এই হৃদয় রোগ বা সেরিব্রাল অ্যাটাকের সম্ভাবনাও কমিয়ে দিতে পারে।

ডিপ্রেশন বা অবসাদ: এই ক্ষেত্রে রোগীর কিছু ভাল লাগে না। সবসময় একটা উদাসীনতা দেখা যায়। সে কোনও কিছু করতে চায় না। বয়স্কদের এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে এই রোগ সারাতে মিউজিক থেরাপি খুব কার্যকর।

ঘুমের সমস্যায় বা স্লিপ ডিজঅর্ডার: যাঁদের সহজে ঘুম আসতে চায় না তাঁদের ক্ষেত্রে মিউজিক থেরাপি খুব কার্যকরী। শোওয়ার একঘণ্টা আগে থেকে আলো নিভিয়ে বা হালকা আলো জ্বালিয়ে, কোনও লঘু সুরের মিউজিক ব্যাকগ্রাউন্ডে শুনলে মনটা শান্ত হয়ে যায় এবং ঘুম খুব ভাল আসে। সন্তুর, সেতার, পিয়ানোর মিঠে আওয়াজ ঘুমকে ডেকে নিয়ে আসে চোখে।

স্পেশালি এবলড চাইল্ডদের: যে বাচ্চাদের আইকিউ লেবেল কম তারা নতুন জিনিস শিখতে পারে না, ফলে এরা খুব উত্তেজিত হয়ে যায়, আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে, খেতে চায় না, মারপিট ঝগড়াঝাটি করে। মিউজিক থেরাপি করলে সেই শিশু খুব শান্ত হয়ে যায় এবং নতুন জিনিস শেখার প্রতি ঝোঁকটা বাড়ে।

অন্যান্য শারীরিক রোগে:
(১) শারীরিক যে কোনও ব্যথা বা যন্ত্রণা কমানোর জন্য পেন ম্যানেজমেন্ট করা হয়, এক্ষেত্রে মিউজিক থেরাপিও করা হয়।
(২) হাইপ্রেশার কমানোর ক্ষেত্রে।
(৩) হার্টরেট কমানো জন্য।
(৪) প্রমাণিত হয়েছে, হার্টের অসুখে অস্ত্রোপচারের পরে মিউজিক থেরাপি রোগীকে খুব দ্রুত সুস্থ করে তুলতে পারে।

পরামর্শ: ০৩৩ ৬৬২৮ ৪৪৪৪

দৈনন্দিন ব্যস্ততার মধ্যে মন ভাল রাখার পাসওয়ার্ড কী? ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement