Advertisement
Advertisement
Kenduli

জয়দেবের মেলায় বিদেশি বাউল আগমনে ভাটা, কেন্দুলির আখড়ায় মনখারাপের সুর

চিরাচরিত বাদ্যযন্ত্র খমক, একতারা, দোতারা, ডুবকি ইত্যাদির সঙ্গে আখড়ায় আখড়ায় হাজির ম্যান্ডোলিন, হাওয়াই-গিটার, নাল। তাতেও বাউল গানের সুরে খানিকটা তাল কেটেছে।

Beauty of Kenduli mela is down as foreigners entry is restrcited for so many reasons
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:January 13, 2025 6:06 pm
  • Updated:January 13, 2025 7:10 pm  

দেব গোস্বামী, বোলপুর: তিথি মেনে মকর সংক্রান্তির সঙ্গে সঙ্গেই শুরু বীরভূমের কেন্দুলিতে শুরু হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী জয়দেবের মেলা। কড়া নিরাপত্তার মাঝে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল-ফকিরদের জন্য স্নান ও সাধনভজনের ব্যবস্থা করেছে বোলপুর প্রশাসন। অজয় নদের তীরে ঘাটগুলি পরিচ্ছন্ন করে স্নানের ব্যবস্থা হয়েছে প্রতিবারের মতো। মেলায় ৮৮টি স্থায়ী আখড়া রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ২৫০ টি অস্থায়ী আখড়া গড়ে উঠেছে। মেলায় ৬০০টি দোকান পসরা সাজিয়ে বসিয়েছেন।

সেজে উঠছে বাউল আখড়াগুলি। নিজস্ব চিত্র।

অজয়ের জলে পুণ্যস্নানের জন্য ৬টি ঘাট থাকছে। ঘাটের কাছে মহিলাদের পোষাক বদলের জন্য প্রায় ৩০টি ঘর থাকছে৷ আগামী কয়েকদিন কেন্দুলি জমজমাট বাউল-ফকির সংসর্গে। কিন্তু অন্যান্যবারের চেয়ে এবার জয়দেবের মেলার ছবিটা কিছুটা আলাদা। বিদেশি বাউলকে তেমন সমাগম নেই। একতারা, দোতারার মিঠে সুরের জায়গা নিয়েছে যান্ত্রিক কী-বোর্ড, পিয়ানো। তাই আখড়াগুলিতে এবার মনখারাপের সুর।

Advertisement
২০২৫ সালে কেন্দুলিতে জয়দেবের মেলা। নিজস্ব চিত্র।

মকর সংক্রান্তির পুণ্য তিথিতে কেন্দুলিতে হাজারও বাউলের সমাগম। তাঁবু ফেলে আখড়াও তৈরি হয়েছে। কিন্তু সত্বেও কোথায় যেন খামতি থেকে গেল বাউলের বোলের পরিপূর্ণতায়। দেশের শিল্পীদের সঙ্গে বিদেশি বাউলদের একাত্ম হওয়ার অনন্য ছবিই তো ছিল জয়দেবের মেলার মূল আকর্ষণ। আর সেই মিলনচিত্রই এবার দেখা যাচ্ছে না। বিদেশি বাউল শিল্পীদের গরহাজিরায় যেন জয়দেবের পুণ্যভূমি খানিকটা শূন্য। অস্থিরতা, ভিসা নিয়ে জটিলতার কারণে বাংলাদেশি বাউলরা এবার অনুপস্থিত এই ঐতিহ্যের মেলায়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও ভিন রাজ্য, এমনকী ভিন দেশ থেকেও সাধুসন্ত ও বাউল ফকির শিল্পীরা আসেন জয়দেব মেলায়। বাউলের সুরে মেতে ওঠে অজয় নদীর তীর। বহু পুণ্যার্থী এখানে আসেন বাউল-ফকির গানের টানেই।

মকর সংক্রান্তিতে সূচনা জয়দেবের মেলার। নিজস্ব চিত্র।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাউল শিল্পী সাধন দাস বৈরাগ্য প্রয়াত হয়েছেন। একতারা, দোতারা ও ডুবকি বাজিয়ে মাতিয়ে তুলতেন বিখ্যাত শিল্পী পবন দাস বাউল। তিনিও জয়দেব মেলা থেকে এবার মুখ ফিরিয়েছেন। ‘মনের মানুষ’ আখড়া-সহ বাকি আখড়াগুলিতে এবছর ছেদ পড়েছে বিদেশি বাউল শিল্পীদের। চিরাচরিত বাদ্যযন্ত্র খমক, একতারা, দোতারা, ডুবকি ইত্যাদির সঙ্গে আখড়ায় আখড়ায় হাজির ম্যান্ডোলিন, হাওয়াই-গিটার, নাল। বাউল গানের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে চলছে চটুল নৃত্য! লক্ষ্মণ দাস ও রবি দাস বাউলরা জানান, “বিদেশিদের এবছর সেভাবে চোখে না পড়লেও বিভিন্ন রাজ্যের শিল্পীরা উপস্থিত হয়েছেন। বাউল ও দেহতত্ত্ব গানের চর্চাও চলছে বিস্তর। তবে বংশপরম্পরা, গুরু পরম্পরা মহাজনী পদের গানের মিষ্টি মধুর সুরের আশায় সকলের সঙ্গে মেলায় একত্রিত হওয়া।”

অজয় নদের পাড়ে এখানেই বসে কেন্দুলির মেলা। নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা থেকে আসা সান্তনা মুখোপাধ্যায় ও অভীপ্সা ভট্টাচার্যর কথায়, “একসময় জয়দেব মেলার আখড়াগুলিতে গাছগুলিও কেঁপে উঠত মিষ্টি-মধুর বাউল-ফকিরের গানের সুরে। আজ সেসব অতীত। দেহতত্ত্ব রাগাশ্রয়ী গানের পরিবর্তে এসেছে চটুল বাউল গান। তাছাড়াও ধ্রুপদ ও টপ্পা গানের চলনের পরিবর্তে চলছে মাইক ব্যবহার। একতারার মিষ্টি সুরের পরিবর্তে ঢোলক ও সিন্থেসাইজারে কান ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়! বাউল সাধকদের দেহতত্ত্ব নির্ভর সরল ভাষার গান আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই গানের টানেই কয়েকটা দিন কষ্ট করে হলেও অজয়ের পাড়েই থাকি।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement