মলয় কুণ্ডু: পাহাড় থেকে সাগরে মজেছেন বিদেশি পর্যটকরা। উৎসব আর আতিথেয়তার অমোঘ টানেই দেশের সেরা সব রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে এই বঙ্গভূমি। বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের ভ্রমণ-রাজ্যের সেরা তিন ঠিকানার একটি এখন বাংলাই। সামনে রয়েছে শুধু মহারাষ্ট্র ও গুজরাট। দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলি বিদেশি পর্যটক টানার দৌড়ে ঢের পিছনে।
কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যটন মন্ত্রক সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ‘ইন্ডিয়া টুরিজম ডেটা কমপেনডিয়াম’। সেখানে চুলচেরা সব বিভাগে পরিসংখ্যানভিত্তিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে গোটা দেশের ভ্রমণ বৃত্তান্ত নিয়ে। সেই সংকলনে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে যতজন বিদেশি পর্যটক ভারতে এসেছেন, তার মধ্যে ১৪.০৮ শতাংশ বিদেশি পর্যটক এসেছেন পশ্চিমবঙ্গে। সংখ্যাটা হল ২.৭১ মিলিয়ন। এ রাজ্যের আগে রয়েছে মহারাষ্ট্র। সেখানে এসেছেন ৩.৩৯ মিলিয়ন (১৭.৬১ শতাংশ) বিদেশি পর্যটক এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গুজরাট। সেখানে আসা বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ২.৮১ মিলিয়ন (১৪.৬০ শতাংশ)। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার মাত্র দু’বছর পর অর্থাৎ ২০১৩ সালে বিদেশি পর্যটক আসার নিরিখে একেবারেই পিছনের সারিতে ছিল বাংলা। তখন দেশে বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের তালিকার সেরা ১০টি রাজ্যের মধ্যে এ রাজ্য ছিল ৬ নম্বরে। সামনে তখন মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান।
বাম আমলে বিদেশিদের কাছে বাস্তবিকই দুয়োরানি ছিল বাংলা। ছিল না পর্যটক-বান্ধব পরিকাঠামো। পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে গেলে জরুরি পরিকাঠামো গড়ে তোলা। অর্থাৎ, সেখানকার রাস্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, হোটেল, দেখার জায়গাগুলির মান, এমন একাধিক বিষয়ের উপর নজর দিতে হয়। আর সেই সব নিয়েই গড়ে তোলা হয় ব্র্যান্ডিং। তবেই নজর পড়ে পর্যটকদের। আর বিদেশি পর্যটক টানা তো আরও কঠিন। কারণ, আন্তর্জাতিক মানের। পরিকাঠামো গড়ে না উঠলে, সেই রাজ্যে পা-ই দিতে রাজি হন না বিদেশিরা। অথচ, এ রাজ্যে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর ক্রমে অবস্থা পালটাতে শুরু করে প্রশাসন। সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিও উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যানে। দেখা যাচ্ছে, ২০১৯-এ একধাপ এগিয়ে তালিকায় পাঁচ নম্বরে উঠে আসে রাজ্য। ২০২২-এ প্রথম তিনে জায়গা করে নেয় দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশকে পিছনে ফেলে। আর কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের দেওয়া শেষ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩-এ পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে তৃতীয় স্থানে। সামনে কেবলমাত্র মহারাষ্ট্র ও গুজরাট।
২০২৪-এ যে এই সংখ্যা আরও বাড়বে, তা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদেরও। ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ টুর অপারেটর্স বা আইএটিও-র পশ্চিমবঙ্গ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান দেবজিৎ দত্ত জড়িয়ে রয়েছেন রাজ্যের পর্যটনকে বিশ্বের দুনিয়ায় পৌঁছে দিতে। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা দেবজিৎ অবশ্য বিন্দুমাত্র আশ্চর্য হচ্ছেন না। তাঁর কথায়, “গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজিক ইনিসিয়েটিভ নেওয়া হয়েছে। ধারাবাহিক ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে। যে সুদূরপ্রসারী নীতি নেওয়া হয়েছে, তার বাস্তবায়ন হয়েছে।” এই সংখ্যা যে ক্রমশ বাড়বে, তা নিয়েও আত্মবিশ্বাসী তিনি, “এখন যেটা দেখা যাচ্ছে, সেটা টিপ অফ দি আইসবার্গ। আমরা যে পরিশ্রম করেছি, তার ফল দেখা যাচ্ছে।” তাঁর বক্তব্য, “পর্যটনে রাজ্যের সম্ভাবনা অনেক আশেই বেশি। তার কারণ, রাজ্যের ডাইভার্সিটি, হিস্ট্রি, হেরিটেজ, কালচারাল এলিমেন্ট যেগুলো রয়েছে তা বিশ্ববাজারে খুবই সমাদৃত। কেরলের সঙ্গে যদি এ রাজ্যের তুলনা করেন, তাহলে কেরল পাত্তা পায় না। পর্যটনের প্রোডাক্ট হিসাবে যেগুলিকে তুলে ধরা যায়, তাতে কেরলের থেকে আমরা অনেক এগিয়ে আছি। কিন্তু আমরা বরাবর ডেস্টিনেশন প্রোমোট করি, কিন্তু প্রোডাক্ট প্রোমোট করি না। এখন হচ্ছে। হেরিটেজ প্রপারটি, চা বাগান টুরিজম, গঙ্গার মধ্যে রিভার ক্রুজ তুলে ধরা হচ্ছে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে। সব থেকে বড় ইউএসপি, ভৌগোলিক অবস্থান। সামগ্রিকভাবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গেটওয়ে হিসাবে তুলে ধরছি। পর্যটনের উন্নতি হলে শুধু তো পর্যটন ব্যবসার লাভ হয় না, ওই এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থারও পরিবর্তন হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.