Advertisement
Advertisement
Puri’s golden beach

করোনার প্রকোপ, পুজোর সিজনেও পর্যটকশূন্য পুরীর সমুদ্র সৈকত

রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হলেই ফের আগের চেহারা ফিরে পাবে বাঙালির সেকেন্ড হোম, আশা ব্যবসায়ীদের।

corona virus effect: Puri’s golden beach has never been this quiet । Sangbad Pratidin
Published by: Soumya Mukherjee
  • Posted:October 26, 2020 2:22 pm
  • Updated:October 26, 2020 10:16 pm

অর্ণব আইচ, পুরী: ধু ধু বালুচর। এই বালুকাবেলায় নাম লিখলে ঝট করে অন্য কোনও পায়ের তলায় চাপা পড়ার ভয় নেই। এ এক অচেনা পুরী।

মহানবমীর সকালে সি বিচে এসে ছবিটা মেলাতে পারছিলাম না। পুজো বা বছরের অন্য সময়ও সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের সেই ভিড় কোথায়? সকাল এগারোটায় ঠা ঠা রোদে বিচ ধরে হেঁটে মনে হল মহানবমীতেও শ’চারেকের বেশি মানুষ স্নান করছেন না সমুদ্রে। আর কোনও পর্যটককে বোধহয় আলাদা করে পারস্পরিক দূরত্ব সম্পর্কে সচেতন করার প্রয়োজন নেই। কারণ, এমনিতেই প্রায় ফাঁকা সৈকতে দূরত্বই মেনে রয়েছেন প্রত্যেকে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: পুজোর মাঝেই ঘুরে আসুন আন্দামান, ফের চালু কলকাতা থেকে বিমান পরিষেবা ]

বাঙালির প্রাণকেন্দ্র পুরী (Puri)-তে এবার যেন হারিয়েছে পর্যটকের জৌলুস। পুজোর সময় যেখানে দিঘা বা মন্দারমণিতে উপচে পড়া ভিড়, সেখানে প্রায় ফাঁকা পুরীর রাস্তা। করোনা পরিস্থিতি যেন কোন ম্যাজিকে পালটে দিয়েছে সেই চেনা পুরীকে। তাই গত বছরও যেখানে পুজোর সময়ে পুরীর সমুদ্রে সকাল থেকে দুপুরে কয়েক হাজার মানুষকে স্নান করতে দেখা গিয়েছে। সেখানে এবার এই সংখ্যা নেমে গিয়েছে ঝপ করে। আবার খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, যাঁরা স্নান করছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বহু স্থানীয় মানুষও। অবশ্য অবস্থাটা যে এরকম হতে পারে, তা বোঝা গিয়েছিল পুরীর স্পেশাল ট্রেনেই। শিয়ালদহ থেকে পুরীর স্পেশাল ট্রেনে বহু বার্থই যে ফাঁকা।

Advertisement

সাধারণত ভোর হতে না হতেই দলে দলে সেকেন্ড হোম পুরীর সমুদ্রে সূর্যোদয় দেখতে বেরিয়ে পড়েন আপামর বাঙালি। সকাল হতে না হতেই খুলে যায় সি বিচের উপর চা, ডিম, পাউরুটি, লুচির দোকান। অনেকেই একেবারে ব্রেকফাস্ট করে হোটেল বা গেস্ট হাউসে যান। সেখানে এই বছর পর পর দোকানগুলি রয়েছে প্লাস্টিকের বড় বড় চাদরে মোড়া। গুটিকতক চায়ের দোকান মাত্র খোলা। রোডসাইড বা বিচসাইড প্রাতরাশ করার জায়গারও অভাব। বেলা বাড়তে যেখানে স্নান করার জন্য ভিড়ে ভিড়াক্কার হয়ে যায়, সেখানে বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও সমুদ্রে একটু জটলা। কিছু মানুষ ঢেউয়ের দোলায় বুকে টায়ার বেঁধে একটু দূরে। নুলিয়াদের অলস দিনযাপন।

[আরও পড়ুন: তিস্তা-কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রেমের কাহিনি শোনাবে মনমোহিনী ভালুখোপ, আসছেন তো?]

সি বিচের অদূরে অশোক বেহারার দোকান। পান-সিগারেট থেকে ঠান্ডা পানীয় সব কিছু বিক্রি করেন। বললেন, অন্যান্য বছর পুজোর সময় ঠান্ডা পানীয় আর মিনারেল ওয়াটারের জার জুগিয়ে কূল পেতেন না। সেখানে এবার পর্যটকের অভাবে মিনারেল ওয়াটারের জারই সরবরাহ করছে না কোম্পানিগুলি। পুজোর সময় স্বাভাবিকভাবেই তিল ধারণের জায়গা থাকত না হোটেলগুলিতে। এই বছর ছোট বা বড় প্রত্যেকটি হোটেলই পর্যটক ডাকছে। বহু হোটেলেই স্পট বুকিংয়ে ডিসকাউন্ট।

বিচের পাশেই একটি নামী হোটেলের ম্যানেজার জানালেন, মহাসপ্তমী পর্যন্ত প্রায় খাঁ খাঁ করছিল হোটেল। মহাষ্টমীর পর তাও দু’চারজনের মুখ দেখা যাচ্ছে। স্বর্গদ্বারের রাস্তায় এখনও কিছু দোকান বন্ধ। যেগুলি খোলা, সেগুলি পর্যটকদের ডাকছে। সেই ডাক নিষ্ফলা। পুরী ঘুরতে এসে কোনারক বা নন্দনকানন যাবেন না, তাই বা কী করে হয়? কিন্তু কোনারকে একসঙ্গে ৫০ জনের বেশি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, খবর এমনই। তাই পড়ে যাচ্ছে লাইন। ফলে পুরীর বাইরে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা হারিয়েছেন অনেকে।

অন্যান্য বছর বিকেলের পর থেকে পুরীর সি বিচ (Sea beach) জুড়ে রীতিমতো মেলা বসে যায়। তামাম পর্যটক এসে বসেন সমুদ্র সৈকতে। বালির উপর কাগজ বা প্লাস্টিক পেতে শুরু হয়ে যায় পারিবারিক আড্ডা। সমুদ্রের গর্জনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মিঠাইওয়ালা চিৎকার করে বিক্রি করে বিখ্যাত মিষ্টি মদনমোহন বা ছানাপোড়া। বিক্রেতারা শাঁখ বাজিয়ে ঘোরেন। মাছ ভাজার গন্ধে ভারী হয় নোনা বাতাস। একটু দেরি হলে সমুদ্রের ধারে বসার জায়গা পাওয়া যায় না। সেখানেই এই বছর এদিক ওদিক বসে রয়েছেন পর্যটকরা। ফাঁকা বিচে বেশি রাত পর্যন্ত থাকতে চাইছেন না অনেকেই। অন্ধকার নামতেই উঠে হোটেলে ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা। তবু বাঙালি পুরী ভালবাসে। ঘুরেফিরে এখানেই আসতে চায়। রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হলে বাঙালির সেকেন্ড হোম ফের আগের চেহারা ফিরে পাবে, এমনই আশা করছেন পুরীর ব্যবসায়ীরা।

[আরও পড়ুন: ট্রেন নেই বলে মনখারাপ? উৎসবের মরশুমে NBSTC’র বিশেষ বাসেই পাড়ি দিন উত্তরবঙ্গে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ