সৌরভ মাজি, বর্ধমান: এবার কাশ্মীরের ডাল লেকের মতো হাউসবোটে রাত কাটানোর সুযোগ মিলবে পূর্বস্থলীর চাঁদের বিল, বাঁশদহ বিলে। পঁচিশ কোটি টাকা ব্যয়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে চাঁদের বিল সংলগ্ন এলাকা। এবার সেখানে হাউসবোটের ব্যবস্থা করতে বরাদ্দ করা হয়েছে এক কোটি টাকা। এই বিলকে কেন্দ্র করেই প্রতি বছর খালবিল-চুনোমাছ উৎসব হয় এখানে। এবারের উৎসবের আগে হাউসবোটের ব্যবস্থা রাখার খবরে খুশির জোয়ার পর্যটকদের মধ্যে।
[পাহাড়ে একঘেয়েমি? অন্য স্বাদের খোঁজ পেতে চলুন সিটং]
রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ২০০১ সাল থেকে এখানে খালবিল-চুনোমাছ-পিঠেপুলি উৎসবের আয়োজন করে আসছেন। এবার তা ১৭ বছরে পড়ল। বড়দিন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর উৎসবের উদ্বোধন করবেন মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। এবারে উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “জলাশয় রক্ষা ও লুপ্তপ্রায় চুনোমাছ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই শুরু হয়েছিল এই উৎসব। পাশাপাশি এই এলাকাকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলারও উদ্যোগ নেওয়া হয়।” মন্ত্রীর সংযোজন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মৎস্য দপ্তর ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। জলাশয় নাব্যতা বাড়াতে খননকাজ হয়েছে। সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে। রাস্তা-আলোকসজ্জার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। পূর্ত দপ্তরের উদ্যোগে গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটন আবাস।
[হাত বাড়লেই সবুজের রাজ্য, মন ভাল করার রসদ জঙ্গলমহলে]
খুব শীঘ্র এবার এই বিলে ভাসমান কটেজে বা হাউসবোটে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পর্যটকরা বিলের সৌন্দর্য, সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন মন্দির দর্শনের সুযোগ পাবেন। কাশ্মীরের ডাল লেকের মতো এখানেও হাউসবোটে রাত কাটানোর সুবিধা মিলবে। পাশাপাশি চুনোমাছের বিভিন্ন পদ দিয়ে রসাস্বাদনের সুযোগও পাবেন উৎসাহীরা। উৎসব কমিটির সভাপতি দেবাশিস নাগ জানান, কুচো চিংড়ি, বাতাসি, ফ্যাসা, চাঁদা, চেলা, বেলে, বাতা, খলসে, বাচা, আমাদি, কাজলি, ইঁচলার মতো চুনোমাছ হারাতে বসেছে। আবার খয়রা-মৌরলা-পুঁটির মতো চুনোমাছও টিকে থাকার জন্য লড়ছে। এইসব মাছকে রক্ষা করতেই উৎসবয এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হয়। উৎসবের দিনগুলিতে পর্যটকদের জন্য নৌকাবিহার ও গ্রামীণ থালির ব্যবস্থা থাকছে। গ্রামীণ থালিতে থাকে সাদা ভাত, বেগুনপোড়া, কচু শাক, ধনেপাতা বাটা, কই মাছের ঝাল, পাঁচরকমের চুনোমাছের চচ্চড়ি, পুঁটি মাছের টক, নলেন গুড়ের পায়েস থাকছে। এই উৎসব উপলক্ষ্যে বিলের ধারে চারটি ও বিলের মাঝে একটি ভাসমান মঞ্চে দিনভর বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকছে। মহিলাদের হাঁটা প্রতিযোগিতা, তালগুঁড়ির ডিঙি ও নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা, বসো আঁকো প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হবে উৎসবে। সব মিলিয়ে বর্ষশেষ এবং নতুন বছরের মুখে অন্য স্বাদের সুযোগ গ্রামবাংলায়।
ছবি: মোহন সাহা