বর্ষাকালীন পর্যটনে চড়িদার নতুন আকর্ষণ নজরকাঠি মুখোশ। নিজস্ব চিত্র
সুমিতা বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ‘নজর না লাগ যায়ে তেরে মেরে ইস পেয়ার কো!’ শুধু কি প্রেম-ভালোবাসার ‘বুড়ি নজর’? না, সবরকম নজর এড়াতে পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির ছৌ মুখোশ গ্রাম চড়িদার এবার নয়া ট্রেন্ড নজরকাঠি মুখোশ। গোঁফওয়ালা পুরুষ ও নাকছাবি পরা মহিলার এই জোড়া মুখোশ এখন বর্ষাকালীন পর্যটনে বাজার কাঁপাচ্ছে চড়িদায়। মাত্র ১০০ টাকা থেকে শুরু এই জোড়া মুখোশ রয়েছে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। তাই আর ঘরের প্রবেশ পথের দুয়ারে লেবু-লঙ্কা দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার দিন প্রায় শেষ। নজরকাঠি-র কালচে মুখোশে সেজে উঠছে ঘরের দুয়ার। পুরুষ-মহিলার এই জোড়া মুখোশ মূলত কালো। তবে তার সঙ্গে সোনালি রং, এছাড়া সবুজ-গেরুয়া মিশিয়ে আরও চোখ টানছে। এরপরও কি আর ‘বুড়ি নজর’ লাগে!
ছৌ মুখোশ গ্রাম চড়িদার হস্তশিল্প বিশ্ব বাংলার হাত ধরে এখন বিদেশেও পৌঁছে গিয়েছে। অনলাইন কেনাকাটায় এই মুখোশে সেজে উঠছে দেশ-বিদেশের ঘরের অন্দরসজ্জা। আর সেখান থেকেই এই ভাবনা প্রথম আসে চড়িদার প্রবীণ শিল্পী ফাল্গুনী সূত্রধরের। তিনিই প্রথম চড়িদায় এই মুখোশ তৈরি করেন। আর এখন এই মুখোশ চড়িদার দোকানে-দোকানে। শিল্পী ফাল্গুনী সূত্রধরের কথায়, “আমি প্রথম এই মুখোশ তৈরি করি। আর এখন চড়িদায় রীতিমতো ট্রেন্ড। বলা যায়, বর্ষার পর্যটনে মুখোশ কিনতে আসা পর্যটকদের কাছে এটাই বড় আকর্ষণ। আমরা এই গ্রামের শিল্পীরা সাধারণভাবে প্রত্যেকটি পর্যটন মরশুমেই কিছু নতুনত্ব করার চেষ্টা করি। যার ভাবনাচিন্তা চলে অনেক দিন ধরে। এই নজরকাঠি মুখোশ বর্ষাকালীন পর্যটনে একেবারে সুপারহিট।” এই মুখোশ গ্রামের আরেক হস্তশিল্পী ললিত সূত্রধরের কথায়,
“এই মুখোশের এখন ব্যাপক চাহিদা। পর্যটকরা আর যাই মুখোশ কিনুক না কেন। সঙ্গে একজোড়া নজরকাঠি নিয়ে যাচ্ছেন।”
পর্যটকদের চোখ টানতে বা ঘর সাজানোয় শুধু দুর্গা, মহিষাসুর, গণেশ, আদিবাসী দম্পতি, কৃষ্ণ মুখোশ শুধু নয়। কথাকলি, ছোটা ভীম সেই সঙ্গে করোনাকালে ‘মাস্ক’ মুখোশ নজর কেড়েছিল। আর এবার নজরকাঠি মুখোশে বাণিজ্য জমজমাট ওই মুখোশ গ্রামে। এই ভরা বর্ষায় অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে আসা কলকাতার শুভ্রা চক্রবর্তী বলেন, “বর্ষায় অযোধ্যা পাহাড় যেমন সুন্দর। প্রকৃতিকে দেখে যেমন চোখ জুড়িয়ে গিয়েছে। তেমনই এখানকার মুখোশ গ্রামে হস্তশিল্প দেখে চোখ ফেরানোই যাচ্ছে না। নজর কাঠি মুখোশ দেখে মন ভরে গিয়েছে। ঘরের দুয়ারে টাঙিয়ে রাখার জন্যই ওই মুখোশ একজোড়া নিয়েছি।”
কলকাতার আরেক পর্যটক রাখি ঘোষ বলেন, “মুখোশ গ্রামের কথা অনেক আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু এখানে এসে শিল্পীদের কাজ দেখে হতবাক। সত্যি এই শিল্পকলার তারিফ করতে হবে। ওই নজরকাঠি মুখোশ আমি দু’জোড়া কিনেছি। মুম্বাই ও ব্যাঙ্গালোরে থাকা দুই ছেলেকে উপহার দেব।”
নজরকাঠির নজরে বুরি নজর বালির মুহ কালা!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.