পুলিশের জালে ধৃত ওই ব্যক্তি। নিজস্ব চিত্র
সুমন করাতি, হুগলি: বাইক চুরিই ছিল তার নেশা ও পেশা! ইতিমধ্যেই একশোটির বেশি চুরি করে ফেলেছিল সে। হুগলি, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান জেলার একাধিক জেলায় চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে সে। সেই ব্যক্তিই এখন শ্রীঘরে। ধৃতের কাণ্ডকারখানা শুনে হতবাক হয়েছেন পুলিশ আধিকারিকরাও। তদন্তকারীরা ওই ধৃতকে নিয়ে চুরি হওয়া বাইক উদ্ধারে নেমেছে। সোমবার হুগলির বলাগড় থানার পুলিশ আধিকারিকরা ধৃতকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে চুরি হওয়া ছ’টি বাইক উদ্ধার করেছে।
হুগলির বলাগড়ের একতারপুর পঞ্চায়েতের মাজদিয়া গ্রামের বাসিন্দা বাসুদেব মণ্ডল। এছাড়াও বালুসা ওরফে রাজকুমার নামেও সে পরিচিত এলাকায়। এই ব্যক্তিই রীতিমতো ঘুম ছুটিয়ে রেখেছিল বিভিন্ন এলাকার পুলিশ কর্মীদের। বাসুদেবের কাজই ছিল বাইক চুরি করা। কেবল পেশা নয়, নেশাও হয়ে যায় এক বাইক চুরি। তার বাইক চুরির পদ্ধতিও ছিল যথেষ্ট অভিনব। যার বাইক চুরি করা হত, তাঁর সঙ্গেই আলাপ জমাত এই ব্যক্তি। স্বভাবসিদ্ধ বাচন ক্ষমতার জেরে বাসুদেবকে বিশ্বাসও করে নিতেন তাঁরা। আর সেই সুযোগ নিয়েই ওই ব্যক্তির সঙ্গে থাকা বাইক নিয়ে চম্পট দিত সে।
হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ছিল তাঁর অবাধ যাতায়াত। বলা ভালো, বিভিন্ন জেলায় ঘুরে সে এই বাইক চুরি করত। কিছুদিন গা ঢাকা দেওয়া। তারপর আবার নতুন ‘অপারেশন’। বিভিন্ন থানায় একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে। ধরন দেখে পুলিশ আধিকারিকরা বুঝতে পারেন, এসব চুরি একজনেরই কাজ। চেহারার আদল দেখে পুলিশ পরিচয়ও বার করে ফেলেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাসুদেবের টিকি পাওয়া যাচ্ছিল না। বিভিন্ন থানায় অভিযোগ ১০০ পেরিয়ে যায় বলে খবর। অনেক থানাতেই তাঁর ছবিও ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় ছিল। সেই ব্যক্তিই হুগলির শ্যাওড়াফুলি স্টেশনে একটি মারামারির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়। জানা গিয়েছে, গত ১০ মার্চ জিআরপি তাকে গ্রেপ্তার করেছিল।
স্থানীয় থানাগুলিতেও ওই ব্যক্তির ছবি জিআরপির তরফে পাঠানো হয়। ছবি দেখেই কার্যত হাতে চাঁদ পান পুলিশ আধিকারিকরা। কারণ, দীর্ঘ দিন ধরে খুঁজে চলা বাসুদেব মণ্ডলকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, এর আগে পূর্ব বর্ধমানের কালনা থানা থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায় সে। বলাগড় থানা শেষপর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে হেফাজতে পায় গত ১৭ তারিখ। তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে বলাগড় থানা তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।
হুগলি গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি ক্রাইম অভিজিৎ সিনহা মহাপাত্র এদিন সাংবাদিক বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলাগড় থানার ওসি সোমদেব পাত্র, এসআই রোহন মল্লিক ও এই কেসের তদন্তকারী অফিসার এএসআই বিশ্বনাথ দে-সহ অন্যান্যরা। অভিজিৎ সিনহা মহাপাত্র জানিয়েছেন, ধৃতকে জেরা করে ইতিমধ্যেই ছটি বাইক উদ্ধার করা হয়েছে। তার সঙ্গে আর কারা জড়িয়ে? চুরি করা বাইক কোথায় পাচার হত? সেসবও জানার চেষ্টা চলছে বলে খবর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.